ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে নিখোঁজ ৩ বন্ধু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে নিখোঁজ ৩ বন্ধু নাজমুল, সামিউল ও ফয়সাল।

ফরিদপুর: বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যেকোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তিন তরুণ। পাশের গ্রামের দুই প্রবাসী যুবকের সঙ্গে এজন্য ৩০ লাখ টাকায় চুক্তিও হয়।

এর মধ্যে অভিভাবকেরা ২৪ লাখ টাকা দিয়েছে দালালদের। বাকি টাকা দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছিল।  

কিন্তু এরই মধ্যে লিবিয়ায় একটি ঘরে বন্দী থাকার পর নৌকায় করে সাগর পারি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে এক সপ্তাহ ধরে তাদের কোনো খোঁজ নেই। এ নিয়ে পরিবারের লোকেরা অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

নিখোঁজ তিন তরুণ হলেন- ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতুব্বরের ছেলে মঈন মাতুব্বর ওরফে ফয়সাল (১৮), ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (১৯) ও মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২২)।

ফয়সালের বাবা ফারুক মাতুব্বর বলেন, তার ছেলেসহ তিনজনকে ৩০ লাখ টাকায় ইতালি নিয়ে যাবে বলে কথা হয়েছিল পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামের দুই প্রবাসী শওকত চৌধুরী ও রাসেল মিয়ার (২৪) সঙ্গে।  

তিনি বলেন, এজন্য ২৪ লাখ টাকা নগদ দিয়েছি শওকতের ভাই ইলিয়াস চৌধুরী ও রাসেলের ভাই শাহিনকে। ব্যাংকের মাধ্যমে কেনো টাকা দেননি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরিবিলি তাদের বিদেশ পাঠানো হবে তাই ব্যাংকের বদলে নগদ টাকা দিতে বলেছিল। তাই আমি নিজেই ইলিয়াসের হাতে টাকা তুলে দেই।

ছোট নাউডুবি গ্রামের শওকত ও রাসেল আপন চাচাতো ভাই। ফারুক মাতুব্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে তারা। লিবিয়ায় গেছেন ৪ বছর আগে। এ তথ্য জানিয়ে ফারুক মাতুব্বর বলেন, এর আগেও তারা তিনজনকে এভাবে ইতালি নিয়ে যায়। পরিচিত ও আত্মীয় বিধায় তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে প্লেনে ফয়সাল, নাজমুল ও সামিউলকে নিয়ে যায় লিবিয়ার একটি শহরে। তারপর তাদের শিগগিরই ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় দালালেরা। এজন্য বাকি ৬ লাখ টাকা রেডি রাখতে বলে।  

সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে ফয়সালের সঙ্গে তার কথা হয়। এসময় ফয়সাল ও তার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছিল। ''আমাদের সাগরের পাড়ে নিয়ে আসছে। মনে হয় নৌকায় উঠাবে। তোমরা দোয়া কইরো আমাদের জন্য। '' ছেলের কণ্ঠে সর্বশেষ এ কথাই শুনতে পেয়েছেন ফারুক।  

ফয়সালের সঙ্গে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় আটকদের মধ্যে একজন নাজমুল৷ তার ভাই সম্রাট বলেন, শওকত ও রাসেল ভাইদের বডি কন্টাক্টে ইতালি নিয়ে যাবে বলেছিল। বডি কন্টাক্ট মানে কি? এর জবাবে সম্রাট বলেন, লিবিয়া যাওয়ার পথে যতবার ধরা খাবে ততবার ওরা ফেরত আনবে। ওদের বডি যেকোনো উপায়ে ইতালি পৌঁছে দেবে। ওদের হান্ড্রেড পারসেন্ট ইতালি নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্ব তাদের। যতো টাকাই লাগুক এতে।

সম্রাট বলেন, তিন মাস আগে লিবিয়ার শহরে গেছে। তারপর গেম ঘরে রাখছে। আমাদের একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যেহেতু ওরা (দালালেরা) ওই দেশে আছে তাই ওরা হয়তো ওদের ইতালি নিতে পারবে। সর্বশেষ ভাই আমাদের বলেছিলো, গেম ঘর থেকে সাগর পাড়ে নিয়ে যাইতেছে। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বোটে উঠাবে। আমরা ওদের ভরসা দেই। আল্লাহর নামে বোটে উঠতে বলি। কোনো সমস্যা হবে না তাও বলি।

সম্রাট আরও বলেন, ২৭ জানুয়ারির পর প্রথমদিকে দালালরা এমনও বলেছিল যে, ভাইয়েরা ইতালি পৌঁছে গেছে। বাকি টাকা রেডি রাখতে বলছিল। শেষে বলেছে, ওরা মাল্টা থেকে ধরা খাইছে। থামছা থামছা জেলে আছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওরা নিশ্চিত করে যে, ওরা তিনজন থামছা থামছা জেলে আছে। এরপর ওরা সামিউলের একটা ভয়েস রেকর্ড পাঠায়। যেখানে সামিউল বলছে, "আমরা কষ্টে আছি, আমাদের বাঁচাও"।

সম্রাট বলেন, শুক্রবার ওই তিন যুবকের সঙ্গে দেশে পরিবারের লোকদের কথা বলিয়ে দেবে বলেছিল। এদিন তারা পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামে দালাল শওকত ও রাসেলের বাড়িতে যান। সেখানে যেয়ে দেখেন ওদের বাড়িতে কেউ নেই। এমনকি গরু ছাগল হাঁস-মুরগি কিছুই নেই।  

ফারুক মাতুব্বর বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয় নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।