ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মিয়ানমার থেকে বাকিতে আসছে ‘আইস’ মাদক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
মিয়ানমার থেকে বাকিতে আসছে ‘আইস’ মাদক আইস মাদক | ফাইল ছবি

ঢাকা: ইয়াবার পর এবার বাংলাদেশে ভয়াবহ মাদক ‘আইস’ পাঠাচ্ছে মিয়ানমারের চক্র। টাকা ছাড়া বাকিতেই গভীর সমুদ্রে আইস তুলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি চক্রের হাতে।

আইস বিক্রির পর হুন্ডির মাধ্যমে বা হাতে হাতে টাকা চলে যাচ্ছে মিয়ানমারে।

বুধবার রাতে গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১২ কেজি আইসসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৫। এটাই এযাবত জব্দ হওয়া আইসের সবচেয়ে বড় চালান।

গ্রেফতাররা হলেন—জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম (৩২), মকসুদ মিয়া (২৯), মো রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলম (২৮) ও মো সামছুল আলম (৩৫)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আইস ছাড়াও ১ লাখ পিস ইয়াবা, ৪ হাজার ৬০০ পিস চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন, ২টি বিদেশি পিস্তল, ৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি টর্চলাইট, ১ লাখ ৬৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা, ১ লাখ বার্মিজ মুদ্রা ও ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

র‍্যাব জানায়, মিয়ানমার বাকিতেই দেশীয় মাদককারবারিদের আইস সরবরাহ করছে। আইসের চালান দেশে বিক্রি হওয়ার পর হুন্ডির মাধ্যমে বা হাতে হাতে মিয়ানমারে টাকা চলে যাচ্ছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সাগরপথ হয়ে নৌপথে ঢাকায় আইস নিয়ে আসছিল চক্রটি। পরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইসের চালান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল তারা।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চক্রটি বাংলাদেশে জসিমের নেতৃত্বে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্য রয়েছে ১২-১৫ জন। চক্রটি মিয়ানমার থেকে আইস ও ইয়াবা সংগ্রহ করে সোনাদিয়া হয়ে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় নানা কৌশলে চালান করতো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে মূলত নৌপথ ব্যবহার করত তারা।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, চক্রটির সদস্যরা মিয়ানমার থেকে দেশে আইস ও ইয়াবা সাগরপথে পাচার করে আসছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগরপথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদস্থলে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে (২০/২৫ দিন) জেলেদের ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করেন।

মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে। পরে ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুইটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়াতে আইস ও ইয়াবার চালান নিয়ে আসত। হাতিয়া থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া/ঢাকার আশেপাশে অথবা সুবধিাজনক স্থানে আইস পৌঁছাত চক্রটি।

ঢাকা ছাড়াও এরা বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চল হয়ে মাদক সরবরাহ করত। মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস ও ইয়াবার চালান গ্রহণ করে এবং সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটির নেতা জসিম দীর্ঘ ৫-৭ বছর ধরে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তিনি লবণ ব্যবসার আড়ালে আইসের কারবারে জড়িত। তিনি মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রথমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতেন। সম্প্রতি রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর থেকে আইসও নিয়ে আসা শুরু করেন।

এছাড়া জসিম রাজধানী থেকে কয়েকটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন সংগ্রহ করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতো।

মিয়ানমার থেকে আইস সংগ্রহ করার সময় দেশীয় মাদক কারবারিরা কীভাবে টাকা পরিশোধ করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইস বা মাদক নিয়ে আসার সময় দেশীয় ব্যবসায়ীদের প্রাথমিকভাবে সব টাকা দিতে হয় না। নিয়ে আসা আইস বিক্রি হয়ে গেলে পরে হুন্ডি বা হাতে হাতে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের টাকা দেওয়া হয়।

মিয়ানমার বাকিতে মাদক দিচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, সম্পূর্ণ অর্থের বিনিময়ে না, ২০-৩০ শতাংশ অর্থের মাধ্যমে তারা মাদক দিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম আইসের দাম দেশে ২৫-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। একই পরিমাণ আইস ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় দেশীয় ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে কিনে নিয়ে আসেন। সেই অর্থে ২০ শতাংশ খুব বেশি বড় অঙ্কের টাকা না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল যে, ঢাকা থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইস পৌঁছানো হতো। কিন্তু আমরা এখন দেখেছি হাতিয়া থেকে নৌপথ ব্যবহার করে মুন্সিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আইস আসছে। আবার হাতিয়া থেকে নৌপথে বরিশাল ও পটুয়াখালী পর্যন্ত আইস যাচ্ছে।

সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ঢাকায় মাদক আসছে, এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, নানা কৌশল করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মাদক নিয়ে আসছেন। মাদকসেবীদের সংখ্যা না কমাতে পারলে কোনো না কোনোভাবে মাদক দেশে আসবেই। কারবারিরা নানা কৌশলে মাদক নিয়ে আসবে। সমুদ্র পথে হাজার হাজার নৌকা মাছ ধরে। এর মধ্যে মাদক বহনকারী একটি নৌকাকে শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন।

আরও পড়ুন: ১২ কেজি আইস মাদকসহ কারবারি আটক 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।