ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ওড়াকান্দিতে শেষ হলো স্নানোৎসব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
ওড়াকান্দিতে শেষ হলো স্নানোৎসব

গোপালগঞ্জ: লাখো পুণ্যার্থীর স্নানের মধ্যদিয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব। তবে স্নানোৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত তিন তিনব্যাপী মহাবারুণী মেলা চলবে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) পর্যন্ত।

 
গত বছরের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শনে এসে সেখানে হরিমন্দিরে পূজা-অর্চনা করেন ও ঠাকুর বাড়ির সদস্য এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। এতে বিশ্বব্যাপী ঠাকুরবাড়ির গুরুত্ব বৃদ্ধি ও পরিচিত পায়।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে এ স্নানোৎসব শুরু হলেও বুধবার (৩০ মার্চ) ব্রহ্ম মুহূর্তে হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরী ও স্নানোৎসব কমিটির সভাপতি দেবব্রত ঠাকুর বাপ্পী, উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুরের মা সীমা দেবী ঠাকুর, পদ্মনাভসহ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা সাগরে স্নান করে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপরই মূলত পুরোদমে শুরু হয় পুণ্যার্থীদের স্নানোৎসব। ভক্তরা পাপ মোচন ও পুণ্যের আশায় সাগরে স্নান করেন। তবে মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতিবছর ওড়াকান্দিতে এ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১তম আর্বিভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এরআগে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মতুয়াভক্ত ও হরিচাঁদের অনুসারীরা স্নানোৎসবে যোগ দিতে ঠাকুরবাড়িতে সমবেত হন। হাতে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান এবং ডাংখা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেঁটে মতুয়া অনুসারীরা ছুটে আসেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে। এছাড়া বাস, ট্রাক, নসিমন, করিমন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার ও নৌ-পথে নৌকা ও ট্রলারে করেও মতুয়াভক্তরা স্নানোৎসবে যোগ দেন।

পিরোজপুরের শিকদার মল্লিক গ্রাম থেকে স্নান করতে আসা সঞ্জয় বৈরাগী বলেন, ২০ বছর ধরে তিনিসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখানে স্নান করতে আসছেন। তার পূর্বসূরীও এখানে এসেছেন। এ স্থানকে তারা পুণ্যভূমি মনে করেন। তাই পাপ মোচনের আশায় মতুয়ারা এখানে আসেন।

ঠাকুর পরিবারের উত্তরসূরী ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব শেষ হয়েছে। এবারের স্নানোৎসবে ১০ লক্ষাধিক পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। এবারের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা খুব ভাল ছিল। এবার ভক্ত সমাগম বেশি হলেও শৃঙ্খলার সঙ্গে ভক্তরা ধর্মকর্ম পালন করতে পেরেছেন।

স্নানোৎসব ঘিরে ঠাকুর বাড়ির পাশ ঘেঁষে ৬০ একর জায়গা জুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় কাঠ, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরি জিনিসপত্র ও খেলনা সামগ্রী, প্রসাধনীর দোকান, শামুক ঝিনুকের দোকান, কম্বলের দোকান, তালপাখা, চানাচুর, মিষ্টি দোকান, হোটেল বসেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ মেলায় দোকান নিয়ে এসেছেন। আগেও এ মেলায় এসেছেন। এখানকার পরিবেশ ও বেচা-কেনা ভাল বলে তারা জানান।

জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পুইশর বাজারের সাধন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক বুদ্ধি মন্তর বিশ্বাস বলেন, তারা মেলাতেই দোকান দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করেন। নিজ এলাকার মেলা হওয়ায় প্রতিবছরই তিনি এখানে মিষ্টির দোকান নিয়ে আসেন। তার দোকানে ৪ কেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি, রসগোল্লা, রাজভোগ, রসমালাই, রসচাপ, সন্দেস, দানাদারসহ নানা ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। এখানে বেচা-কেনা ভাল হয়।

শান্তি হরি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক ভক্ত সরকার, সাদ্দাম মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক আমিনুল ইসলাম, মেলায় জিলাপি ও বাতাসা বেশি বিক্রি হয়। অন্য মিষ্টিও কম বেশি বিক্রি হয়। এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা মিষ্টির দোকান নিয়ে এসেছে। এ মেলায় লাখ লাখ লোক হয়। সবমিলে বেচা-কেনা ভালো হয়।
 
ঢাকার সাভারের আমির হামজা বাংলানিউজকে বলেন, শামুক ঝিনুকের বিভিন্ন গহনা, চুলের ব্যান্ড, ক্লিপসহ মেয়েদের কসমেটিস নিয়ে মেলায় এসেছেন। প্রতি বছর এ মেলায় তিনিও আসেন। এ মেলায় ভাল ক্রেতা পাওয়া যায়। ব্যবসাও ভাল হয় বলে জানান তিনি।

ঢাকার সায়েদাবাদের নান্নু সিকদার বলেন, তিনি পুথির কানের দুল, চুড়ি, হাতের ব্যান্ডসহ পুথির বিভিন্ন গহনা নিয়ে মেলায় এসেছেন। এবার তিনি প্রথম এসেছেন বলে জানান। তিনি আশা করছেন বিক্রি ভাল হবে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।