ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চিত্রনায়ক সোহেলকে খুন করেন ইমন, পরিকল্পনাকারী তিনজন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
চিত্রনায়ক সোহেলকে খুন করেন ইমন, পরিকল্পনাকারী তিনজন মঙ্গলবার রাতে আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব

ঢাকা: ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৩টার দিকে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ২৪ বছর পর মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) মামলার পলাতক ও চার্জশিটভুক্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

তৎকালীন মাফিয়া আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং আশিষ রায় চৌধুরী—এই তিনজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসী ইমন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করেন।

র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে গ্রেফতার আশিষ রায় চৌধুরী ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন আশিষ রায় এবং অবশিষ্ট ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন পলাতক বান্টি ইসলাম।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ট্রাম্পস ক্লাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য আসতেন। গ্রেফতার আশিষ রায় চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকেই ওই ক্লাবে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ করে আসছিলেন। পর্যায়ক্রমে ক্লাবটি সকল আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এবং গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। আজিজ মোহাম্মাদ ভাই মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বৈঠক বা তাদের পরিচালনা করার জন্য ওই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে তার সখ্য হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজিকে বান্টি ইসলাম বিয়ে করার সুবাদে তাদের মধ্যে একটি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। আর বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় যুবক বয়স থেকে একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরে তাদের এই বন্ধুত্ব ব্যবসায়িক অংশীদারত্বে রূপ নেয় এবং একসঙ্গে পার্টনারশিপে ট্রাম্পস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড ও অপরাধ জগতের ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিষ আরও জানান, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের ঠিক পাশেই ছিল ওই সময়কার বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বা বনানী জামে মসজিদ। যেহেতু ট্রাম্পস ক্লাবে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো, ভিকটিম চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদ কমিটি নিয়ে বার বার  ট্রাম্পস ক্লাবের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করেন, যা ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত হানে। অপরদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই যেহেতু আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেক্টিভিটি মেইনটেইন করার জন্য ট্রাম্পস ক্লাবকে একটা সেইফ হাউজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তাই তার স্বার্থেও আঘাত লাগে। আবার ইমনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও যেহেতু অসামাজিক কার্যকলাপ করতে একমাত্র সেইফ হাউজ পেয়েছিলেন, ওেই সময়ে যদি ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যেত তাহলে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। সব ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ওই ট্রাম্পস ক্লাব।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মসজিদ কমিটির পক্ষ হয়ে ট্রাম্পস ক্লাবটি বন্ধ করতে বার বার চেষ্টা করেন। এ কারণে তিনি বান্টি ইসলাম, আশিষ রায় চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহলে চৌধুরীর সরাসরি তর্ক এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীর ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিশোধ নিতে বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীকে অনুরোধ জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্পস ক্লাবে জনসম্মুখে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরী অপমান করেন। বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী এর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ট্রাম্পস ক্লাবে তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বান্টি ইসলাম, আশিষ রায় চৌধুরী ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ইমনকে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাব দেন। তাদের তিনজনের অনুরোধে ইমন সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাবে রাজি হন এবং হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সবশেষ গত ২৮ মার্চ আশিষ রায় চৌধুরীর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে তিনি আগামী ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরপর তাকে গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২২
এজেডএস/এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।