ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী, হাঁসফাঁস করছে প্রাণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী, হাঁসফাঁস করছে প্রাণ

রাজশাহী: রাজশাহীতে রেকর্ড তাপমাত্রার পর জনজীবন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের দাপট কমেনি।

আট বছর পর শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল সারাদেশের মধ্যেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শনিবার বেলা ২টায় এবং ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার তাপমাত্রা ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। তীব্র তাপপ্রবাহ এ দিন মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

তবে রোদের তেজ ও গরম কোনোটাই কমেনি। রমজানের মধ্যভাগে আগুনমুখো আবহাওয়ায় প্রয় অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন। সকাল থেকে দুপুর গড়াতে সড়কে যানবাহন চলাচল কমে এসেছে। কমে গেছে পথাচারীদের স্বাভাবিক চলাচলও। সড়কে নেমে সবাই গাছের সুশীতল ছায়া খুঁজছেন। যেখানেই ছায়া পাচ্ছেন; কিছুটা সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন। টানা তাপদাহ ও দুঃসহ গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষের প্রাণ।

মাথার ওপরের নীল আকাশটা যেনো তাঁতানো কড়াই হয়ে গছে। ঘরের টিনও যেন গরম লৌহকুণ্ড হয়ে উঠেছে। পিচঢালা সড়কের ওপর যেন ধোঁয়া উড়ছে। দূর থেকে সেই ধোঁয়ায় যেন সবকিছুই মরীচিকা মনে হচ্ছে। এতে দূরপাল্লার যানবাহনের চালকরা পড়ছেন বিপাকে। তাই যানবাহনের গতি কমেছে।

সূর্যের তীর্যক কিরণে শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাওই স্বস্তি নেই। গরম বাতাস শরীরে বিঁধছে আগুনের হলকার মতো। দক্ষিণের মরা পদ্মা থেকে বাতাসে ভেসে আসা ধূলিকণাগুলোও যেন এখন শরীরে গরম ছ্যাঁকা দিচ্ছে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে খালি মাথায় কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। লু হাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। তাপমাত্রার পারদ উপরেই থাকছে। প্রখর রোদে মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে। একটু শীতল প্রশান্তির জন্য শিশু-কিশোররা পুকুরের পানিতে নেমে দাপাদাপি করছে। পথের ধারে ড্রেন বা ডোবা-নালা পেলে তাতে নেমে পড়ছে প্রাণিকূল।  



রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত এই তাপমাত্রা প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। তাই ভারী বর্ষণের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনের তীব্র গরমের কারণে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহীতে হঠাৎ করে আবারও তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে।

এ সময় বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে বের না হয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, শনিবার বেলা ২টায় এবং ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ এবং বেলা ৩টায় ৫২ শতাংশ। শনিবারের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে এখনও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাই গরমের তীব্রতা কমছে না।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পার করলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

আট বছর পর শুক্রবার রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়ায়। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে দেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত পুরোনো সেই রেকর্ড ভাঙেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।