ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১০ বছর ধরে চলছিল অবৈধ পটকা কারখানা, জানে না পুলিশ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
১০ বছর ধরে চলছিল অবৈধ পটকা কারখানা, জানে না পুলিশ!

ময়মনসিংহ: বিস্ফোরণে ময়মনসিংহের নান্দাইলে আতশবাজি ও পটকা তৈরির বিস্ফোরক কারখানায়  দুই নারী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে।

অথচ বিগত ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে ব্যবসায়ী মো. বোরহান উদ্দিন এই কারখানায় নানা ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য আতশবাজি ও পটকা তৈরি করে আসছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে।    

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করেই এ অবৈধ কারখানা চলে আসছে। তাদের ভাষ্য, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত ১০ বছর ধরে এ কারখানা চলবে, এটা কখনো বিশ্বাসযোগ্য না।  

বর্তমানে পুলিশের নজরদারী সর্বত্র, আছে গ্রামপুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারী। এসবের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এ ধরনের অবৈধ পটকা কারখানা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, অবৈধভাবে পটকা তৈরির কোনো তথ্য জানা ছিল না। বিস্ফোরণের পর বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনার মূলহোতা মালিক বোরহান উদ্দিনকে আটকের চেষ্টা চলছে।  

এদিকে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামান। পরিদর্শনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।  

এ সময় ঘটনাস্থল এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ নানা ধরনের পটকা ও পটকা তৈরির উপাদান উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।  

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামান। তিনি বলেন, খবর পেয়ে জেনেছিলাম এখানে স্বল্প পরিমাণ পটকা তৈরি হতো। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে দেখেছি বিপুল পরিমাণ পটকা এখানে তৈরি হতো।  

এটি অবৈধ ব্যবসা, এই কারখানার কোনো অনুমোদন নেই। এর সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

এসপি আরও বলেন, এখানে বিপুল সংখ্যক পটকা ও পটকা তৈরির উপাদানের পাশে একটি বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। মূলত এসব থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। এটা ছাড়া এখানে অন্য কোনো ঘটনা নেই।  

তবে বিস্ফোরণের সময় বজ্রপাত হচ্ছিল বলেই প্রথমে বজ্রপাতের কথা বলা হয়েছিল। এখন সিআইডির এক্সপার্টরা কাজ করছে, কাজ শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।  

অপরদিকে, বিস্ফোরকের ঘটনায় নিহত শ্রমিক আফিলা বেগমের স্বামী আব্দুল গণি এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি করেছেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আফিলা বেগম গত ৬-৭ মাস ধরে সপ্তাহে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মুজুরিতে শ্রমিকের কাজ করত। তবে এখানে কতোদিন ধরে পটকা তৈরি হতো তা আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২০ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশাটি গ্রামে আতশবাজি ও পটকা কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে দুই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- ওই এলাকার আবুল হোসেনের স্ত্রী নাছিমা বেগম (৩০) ও একই গ্রামের আব্দুল গণির স্ত্রী আফিলা বেগম (৪৫)। এ ঘটনায় কারখানার মালিক বোরহান উদ্দিন, তার দুই স্ত্রী ও সন্তানসহ ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।  

>>> বজ্রপাত থেকে বিস্ফোরণে ২ নারীর মৃত্যু, কারখানার মালিক পলাতক

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।