ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর

‘মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
‘মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো’

ঢাকা: সাভারের রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

রোববার (২৪ এপ্রিল) রানা প্লাজার সামনে ‘মৃতদের স্মরণ করো জীবিতদের জন্য লড়াই করো’ স্লোগানে প্রতিবাদ র‌্যালি করে সংগঠনটি।

র‌্যালিতে নিহত পরিবারের স্বজন, আহত শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকরা উপস্থিত হয়।

মিছিলের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’, ‘দোষীদের ছাড়বো না’, ‘সকল তরুণ শ্রমিকদের রক্ষায় এক হও’, ‘আর কোনো রানা প্লাজা চাই না’, ‘দ্রব্যমূল্য কমাও মজুরি বাড়াও’ স্লোগান।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতৃবৃন্দ মিছিলসহ স্বজন ও আহতদের সঙ্গে একসাথে রানা প্লাজায় প্রাণ হারানো ১১৭৫ জনেরও বেশি শ্রমিকের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শ্রদ্ধা শেষে রানা প্লাজার সামনে তারা একটি প্রতিবাদ সভা করেন।

সভা শেষে নেতৃবৃন্দ ও স্বজন এবং আহতদের একটি দল উদ্ধারকর্মী নওশাদ হোসেন হিমু ওরফে হিমালয় হিমুর আত্মাহুতির স্থান বিরুলিয়া গোলাপ বাগানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

সভা দুটিতে বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পদক জুলহাস নাইন বাবু, নিহত আঁখি আক্তারের মা নাছিমা আক্তার এবং আহত শ্রমিক রুপালী আক্তার। এছাড়া আশুলিয়া শাখার সভা প্রধান বাবুল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক জিয়াদুল ইসলামু উপস্থিত ছিলেন।

স্বজনরা বলেন, আপনজন হারানোর যন্ত্রণা লাখো টাকায় পূরণ হবার না। প্রত্যেকের কাছে তাদের স্বজন-আপনজন মূল্যবান। রানা প্লাজায় নিহত হওয়া হাজারো প্রাণহানির মধ্য দিয়ে তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়েছে, হারিয়েছে আপনজন। উপার্জনক্ষম সদস্য না থাকায় পরিবারে নেমে এসেছে বিপর্যয়।

তাসলিমা আখতার বলেন, রানা প্লাজার হাজারো প্রাণ হত্যার ৯ বছর পার হয়েছে। এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি শ্রমিক এবং স্বজনরা বয়ে বেড়াচ্ছেন। মালিক সরকার এবং বায়ার এই তিন পক্ষই চায় রানা প্লাজার দুঃসহ স্মৃতি মুছে ফেলতে। কিন্তু রানা প্লাজার শ্রমিকদের বাংলাদেশের বর্তমান শ্রমিক এবং শ্রমিক সংগঠন কখনো ভুলতে পারবে না। এই স্মৃতি বাঁচিয়ে এর থেকে শক্তি নিয়ে মৃতদের স্মরণ করে এবং জীবিতদের জন্য লড়াই করতে হবে।

শ্রমিক নেতারা বলেন, দোষীদের শাস্তি বা বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এবং ক্ষতিপূরণের আইন বদল না হওয়ায় এখন পর্যন্ত সকল কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের অবহেলা করেন। তাদের মধ্যে কোনো সতর্ক বার্তা পৌঁছায়নি। বরং এই বিচারহীনতা এবং ক্ষতিপূরণের আইন বদল না হওয়ায় মালিক, বায়ার ও সরকার পক্ষ শ্রমিকের শ্রমকে অদৃশ্য করার চেষ্টা করে। একই সাথে মালিক ও সরকার যে শ্রমিকদের মানুষের দৃষ্টিতে বিচার করে না, তাই প্রকাশ পায়।



বিরুলিয়ায় হিমুর আত্মাহুতির স্থানে শ্রদ্ধা
রানা প্লাজার কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মী এবং নিহতদের স্বজনরা বিরুলিয়া গোলাপ বাগানে হিমুর আত্মাহুতির স্থানে যান। সেখানে শ্রদ্ধা জানান এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

নীরবতা শেষে তারা হিমুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, হিমু রানা প্লাজার সাহসী উদ্ধাকর্মী এবং তরুণদের প্রতিনিধি ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হয়েও তিনি শ্রমিকদের পাশে ছিলেন। রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি এবং ছাত্র ফেডারেশনের যৌথ উদ্ধারকর্মে হিমু সাহসী পদক্ষেপ রাখেন।

তারা বলেন, হিমু রানা প্লাজার ভেতর থেকে মরা গলা লাশ যেমন সাহসের সঙ্গে বের করেছিলেন তেমনি অনেকের হাত-পা কেটেও এনেছিলেন। তারপর সেই দুঃসহ স্মৃতি তাকে তাড়া করেছে সবসময়। একই সাথে সমাজের নানা অসঙ্গতিতে ক্ষুব্ধ হিমু ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার ৬ বছর পূর্তিতে নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, হিমুর স্মৃতি ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশে আর কোনো হিমুকে যাতে আত্মাহুতি দিতে না হয় সেজন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা এবং এই বৈষম্য-অসঙ্গতির সমাজ পরিবর্তনে শ্রমিক-ছাত্র-নারী এক সাথে পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।