ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পরিবারে অভাব, তাই কাজের সন্ধানে বেরিয়েছিল ৪ বোন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২২
পরিবারে অভাব, তাই কাজের সন্ধানে বেরিয়েছিল ৪ বোন 

লক্ষ্মীপুর: পরিবারে অভাবের কারণে কাজের সন্ধানে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের একই পরিবারের চার কিশোরী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, গার্মেন্টস বা বাসাবাড়িতে কাজ করে পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করার।

তবে নিজেদের ইচ্ছায় এবং অনিশ্চিত যাত্রায় কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেও আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের কাউকে এসব বিষয়ে জানায়নি তারা। এছাড়া পুলিশ তাদের উদ্ধার করার পরও তারা বাড়িতে ফিরে যেতে চায়নি প্রথমে।

তাদের ভয় ছিল, পরিবারের হাতে তাদের তুলে দিলে মারধরের শিকার হতে পারে।  

পুলিশের হাতে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছে তারা। রোববার (৮ মে) বিকেলে জেলার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আটিয়াতলী গ্রামের জেলা কারাগারের পেছনে বসবাসরত এক পুলিশ সদস্যের ভাড়া বাসা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।  

জেলা পুলিশ জানায়, নিখোঁজ হওয়ার ৩২ ঘণ্টা পর সিমু আক্তার (১৪), সামিয়া আক্তার নিহা (১৩), জোবায়দা আক্তার (১২) ও মিতু আক্তারকে (১২) উদ্ধার করে নিরাপদে পরিবারের কাছে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তারা সবাই একে অপরের চাচাতো বোন।

রোববার (৮ মে) রাত ১০টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই চার বোনকে নিজ নিজ অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রাতেই আইনি প্রক্রিয়া শেষে কিশোরীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।  

এদিকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় জেলা পুলিশ সুপার এএইচএম কামরুজ্জামান উদ্ধারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রাম থেকে চার কিশোরী নিখোঁজ হয়। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। চারজনের মধ্যে একজনের নানার বাড়ি নোয়াখালীর আন্ডারচরে। সেখানে যাওয়ার কথা বলে তারা নিজেদের ইচ্ছায় কাজের খোঁজে ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। আর্থিকভাবে তাদের পরিবার অনেকটা অস্বচ্ছল মনে হয়েছে। তাদের ইচ্ছা ছিল- কাজ করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা। তবে এ বিষয়টি তারা পরিবারকে জানায়নি। এছাড়া তাদের উদ্ধারের পরও তারা পরিবারের কাছে যেতে চাচ্ছিল না। তাদের বুঝিয়ে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, শনিবার (৭ মে) সকালে তারা চারজন তোরাবগঞ্জ বাজারে আসে। সেখান থেকে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ওঠে। অটোরিকশা থেকে তাদের লক্ষ্মীপুর শহরের দক্ষিণ তেমুহনীতে নামিয়ে দিতে চাইলে তারা চালকের কাছে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। চালক ফারুক তাদের শহরের ঝুমুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নিতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে চালক তাদের কাঁদতে দেখে কি হয়েছে জানতে চান, তখন তারা পরিচয় গোপন রেখে ঢাকা যাওয়ার কথা জানায়। চালকের সন্দেহ হওয়ায় তিনি তার পূর্ব পরিচিত পুলিশের নায়েক নুরুল ইসলামের বাসায় নিয়ে যান তাদের। ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী শিরিনের গ্রামের বাড়ি কমলনগরের তোরাবগঞ্জ এলাকায়। ফলে তারাও তরুণীদের অভিভাবকদের খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে চার কিশোরীর একজন জানায়, তার বাড়ি কমলনগরের বাদামতলীতে। সেখানে তাদের পরিবারের সন্ধান চালায় ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী।  

এদিকে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলা কারাগার এলাকায় তাদের খুঁজতে থাকে। এরই মধ্যে পুলিশের নায়েক নুরুল ইসলাম বিষয়টি কমলনগর থানাকে অবগত করেন। পরে নুরুল ইসলামের বাসা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।  

শনিবার সকালে নিখোঁজ হওয়ার পর রাতে কমলনগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই চার কিশোরীর দাদি আকলিমা বেগম।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জোবায়দা চরবসু গ্রামের মো. ইব্রাহিমের মেয়ে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শিমু মৃত আবুল খায়ের চুন্নুর মেয়ে, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিতু একই বাড়ির জয়নাল আবেদিনের মেয়ে ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নিহা শামছুল আলমের মেয়ে।  

আরও পড়ুন:

নানাবাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ চার বোন
৩২ ঘণ্টা পর সেই চার বোন উদ্ধার

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।