ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে নেত্রকোনার সরকারি শিশু পরিবারে 

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে নেত্রকোনার সরকারি শিশু পরিবারে 

নেত্রকোনা: মনোরম পরিবেশ আর উন্নত ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে পিতৃহীন ও পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের জন্য নেত্রকোনার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি শিশু পরিবারে (বালক)।

দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে জেলা প্রশাসন, উপপরিচালক, সমাজসেবার দিক নির্দেশনায় আধুনিক এবং পূর্ণরূপ জৌলুসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান উপ তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেন।

  

তিনি যোগদানের পর থেকে সততা, সৎ সাহস ও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে শিশু পরিবারটিকে দেশের একটি সেরা শিশু পরিবারে রূপান্তরে ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।  ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরুর প্রচেষ্টা ও সরকারি অর্থায়নে এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।

স্থানীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দও প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এমন এক পরিবেশ পেয়েছে যে শিশু পরিবারের ভেতরে প্রবেশ করলেই মন জুড়িয়ে যায়। এখানে বিরাজ করছে মনোরম ও নিরাপদ পরিবেশ। প্রশাসনিক ও উন্নত ব্যবস্থাপনায় বেড়ে উঠছে সরকারি শিশু পরিবার নেত্রকোনার নিবাসীরা।  

সমাজসেবা অধিদপ্তর সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, এতিম প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করে। এসব জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার মাধ্যমে লালন পালনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। সরকারি শিশু পরিবারগুলো তেমনিই এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যেখানে এতিম শিশুদের লালন পালন করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু পরিবারগুলোর মধ্যে নেত্রকোনা শিশু পরিবার অন্যতম। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি একটি মডেল শিশু পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  

শিশুদের খাবার, পড়াশোনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সবক্ষেত্রেই রয়েছে উন্নত ব্যবস্থা। বর্তমানে শিশুদের খাবার রুটিনও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বর্তমানে তাদের তিন বেলা খাবার ও বিকেলের নাস্তাসহ চারবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে খাবারের পরিমাণ এবং গুণগত মান অতীতের চেয়েও অনেক উন্নত হয়েছে।

শিশুদের থাকার কক্ষগুলোতে আনা হয়েছে আধুনিকতা। সাজসজ্জা চোখে পড়ার  মতো। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে এলইডি টেলিভিশন।  খেলাধুলার জন্য মাঠ প্রশস্ত করা হয়েছে। খেলার মাঠের পাশেই বানানো হয়েছে সুন্দর একটি ক্রীড়া মঞ্চ। শিশুদের খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য দৃষ্টিনন্দন শিশু বিকাশ চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে শিশুরা যেমন ব্যাডমিন্টন বাস্কেট বল খেলতে পারে তেমনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশু উদ্যান নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে- দোলনা, বসার সিট, ফোয়ারাসহ অন্যান্য অনেক কিছু রয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষায় পারদর্শী করার জন্য একটি কম্পিউটার ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ছেলে কম্পিউটার শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠেছে। সেলাই কাজ শেখার জন্যও রয়েছে সেলাই মেশিন। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষাও দেওয়া হয়ে থাকে। শিশুদের উন্নত মানের পোশাক পরিচ্ছদ স্মার্টনেস দেখে বোঝার উপায় নাই যে তারা পিতৃ-মাতৃহীন অবস্থায় আছে। শিশুদের বিনোদনের পাশাপাশি তাদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।  সেজন্য কাউন্সিলিং কক্ষও রয়েছে। ছোট ছেলেদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে ইনডোর গেমস হাউজ। শিশুরা যেন পাঠ্যপুস্তকের বাহিরেও অন্যান্য বই পড়তে পারে সেজন্য স্থাপন করা হয়েছে অসাধারণ একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীসহ শিশুতোষ বিভিন্ন বই। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। পাকা পাড়সহ পুকুরে সিসি ব্লক বসিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টিনন্দিত করা হয়েছে।  শিশুদের নিয়ে নিয়মিত প্রোগ্রাম করার জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি হল রুম নির্মাণ করা হয়েছে।

শিশুদের পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একটি অপেক্ষালয় নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বসে শিশুরা পত্রিকা পড়তে পারে টেনিস খেলতে পারে। পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে মনে হবে যেন এটি একটি পার্ক বা পর্যটন কেন্দ্র। শিশুদের জন্য প্রতিবছর যেমন বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বার্ষিক বনভোজন, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা, লুডু, ক্যারাম ও টেনিস ইত্যাদি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয় তেমনি সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, রচনা, চিত্রাঙ্কন এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। শিশুদের শারীরিক ও আত্মিক বিকাশের জন্য কারাতে, মেডিটেশন এবং ইয়োগা করানো হয়। প্রতিদিন শিশুরা প্রাত্যহিক সমাবেশ এবং শারীরিক কসরত করে থাকে।

শিশু পরিবারের নিবাসী একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. অসীম মিয়া বলেন, ৬ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে আছি। এখন এত সুন্দর একটা পরিবেশ আর পরিবার পেয়ে আমরা ধন্য। এখানে থেকে যা পাচ্ছি খাচ্ছি তা আমি আমার পরিবার থেকে জীবনেও হয়তো পেতাম না।  যদি আমি এই শিশু পরিবারে ভর্তি না হতাম, তাহলে এত সুন্দরভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারতাম না। জীবনটাই হয়তো এলোমেলো হয়ে যেত। এখানে থেকেই আসলে ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্ন দেখি।  

সরকারি শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মুখলেছুর রহমান খান জানান, নেত্রকোনা সরকারি শিশু পরিবার বর্তমানে যেন একটি আনন্দের ফুলবাগান। যেখানে প্রতিটি শিশু মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা ও খেলাধুলা করে, বর্তমান কর্তৃপক্ষের নিরলস পরিশ্রম ও মেধায় দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। এখানকার পরিবেশ অতীতের চেয়ে আধুনিকতায় এগিয়ে, মনোরম ও সুন্দর পরিবেশ হওয়ায় ইতোমধ্যে আমাদের এলাকার সুনাম বয়ে এনেছে।  

ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার জানান, দক্ষ জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে নেত্রকোনা সরকারি শিশু পরিবার একটি অনুকরণীয় ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। একজন উদীয়মান তরুণ দক্ষ ও মেধামী উপ তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পরই ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতেই মনটা ভরে যায়।  কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা তাদের উদ্বুদ্ধ করে।  

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে উপপরিচালক আলাল উদ্দিন বলেন, সারাদেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দরিদ্র এতিম শিশুদের লালন পালনে ৮৫টি শিশু পরিবারের মধ্যে একমাত্র প্রতিষ্ঠান নেত্রকোনা সরকারি শিশু পরিবার (বালক) কর্তৃপক্ষের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় মডেল শিশু পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  

শিশু পরিবারের উপ তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেন বলেন, আমি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও শিক্ষার মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সর্বদা চিন্তা-ভাবনা করি এবং তা বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি সবার সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি যেন শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা সবসময়ই চলমান থাকে। আমরা একটি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি, সেই মোতাবেক আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি কাজের ছবি এবং ভিডিও সরকারি শিশু পরিবার নেত্রকোনার ফেসবুক আইডিতে জনসাধারণের অবগতির জন্য আপলোড দিয়ে থাকি।

তিনি আরও জানান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো. আশরাফ আলী খান খসরু মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও হবে। নেত্রকোনা জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এলাকাবাসীর সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তদারকিতে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।