ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্লাস্টিক কারখানার দূষণে ৬৬ গাভী-ছাগলের মৃত্যু!

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
প্লাস্টিক কারখানার দূষণে ৬৬ গাভী-ছাগলের মৃত্যু!

গাজীপুর: গাজীপুরে একটি প্লাস্টিক কারখানার দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার দূষণে একটি খামারের ছয়টি গাভী ও ৬০টি ছাগল মারা গেছে।

এ ছাড়া কারখানা থেকে নির্গত ডাস্ট ছড়িয়ে হচ্ছে বায়ু দূষণ। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকাবাসী।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন লোহাকৈর দক্ষিণ পাড়া এলাকায় অবস্থিত স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। কারখানাটির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

এলাকার ভুক্তভোগীরা জানান, স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানা থেকে সৃষ্ট স্লাজ মিশ্রিত দ্রব্য সরাসরি চিমনি দিয়ে বের হয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। দক্ষিণ পাড়া এলাকার স্থানীয়দের বাড়ি ঘরে এসব ডাস্ট বাতাসের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে। ঘর-বাড়ি, গাছ, রাস্তাঘাট এ বস্তুকণার কারণে সাদা হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বস্তুটি দেহে প্রবেশ করায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। এর প্রভাব পড়ছে গবাদিপশুর দেহেও।

অভিযোগ আছে, সাদা বর্ণের এসব ডাস্ট এলাকার চারণভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। গরু-ছাগল চারণভূমির ঘাস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মারাও গেছে অসংখ্য প্রাণী। হাঁস-মুরগি, পাখিরাও দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, আলমগীর কবির নামে এক স্থানীয় স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার পাশে একটি জমিতে নিজের খামারের গরু-ছাগলের খাবারের জন্য ঘাসের চাষ করেছিলেন। ওই ঘাস খেয়ে গত ছয়মাসে তার ৬টি গাভী মারা গেছে। এ ছাড়া গত দেড় বছরে মারা গেছে তার ৬০টি ছাগল। এতে তার প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কারখানাটির দূষণের ফলে ওই এলাকার কয়েকটি মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানা থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর বস্তুকণা সরাসরি খামারগুলোয় ছড়িয়ে পড়ায় মুরগির চাষ ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়েই খামারিরা তাদের পালন বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, তারা একাধিকবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে তাদের অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানা নাম পরিচিত হলেও এর সামনে কোনো নাম-ফলক নেই।

আশিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, কারখানাটির ডাস্ট বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় রান্না করা খাবারেও দ্রব্যটি পাওয়া যাচ্ছে। এসব দ্রব্য বিষাক্ত। মানুষও নানা সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ঘর-বাড়ি নোংরা হওয়া ছাড়াও বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় বায়ু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া স্থানীয়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

আলমগীর কবির খান বলেন, স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে। কারখানার বিষাক্ত দ্রব্য বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় গাছপালা, ঘাস নষ্ট হচ্ছে। আমি ঘাসের চাষ করেছিলাম। ওই দ্রব্য ঘাসে এসে পড়ায় আমার ৬৬টি গাভী-ছাগল মারা গেছে। কারখানার কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বললে তারা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেও পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণকারী কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকলে এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

এ ব্যাপারে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন, কারখানাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন, তাহলে আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব। কারখানাটির পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

বিষয়টি নিয়ে স্টার পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার ফোন করা হয়। এ ছাড়া কারখানার গেটে গেলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২।
আরএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।