ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে বন্যার্তদের বাঁচার আকুতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
সিলেটে বন্যার্তদের বাঁচার আকুতি নিরাপদ স্থানে ছুটছেন বন্যাকবলিত মানুষেরা। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: সিলেটে গত কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা চলছে। টানা ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত সিলেট ও সুনামগঞ্জ।

শুক্রবার (১৭ জুন) দিনগত রাত থেকেই টানা বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ফলে তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। এতে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  

এমনকি বন্যার পানি নগরের অনেক উঁচু এলাকা প্লাবিত হয়ে শত বছরের রেকর্ড ভেঙেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তাই বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধার তৎপরতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বানভাসিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট, সুনামগঞ্জের নিমজ্জিত এলাকাগুলো থেকে বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, ডুবুরি পৌঁছেছে সিলেটে। বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে নৌযান ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালানোর কথা রয়েছে।  

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উদ্ধার কাজের জন্য নৌ বাহিনীর ৩৫ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ শুরু করেছে। বিকেলে ৬০ জনের আরেকটি বড় দল উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বৈরি আবহাওয়া ও সেক্ষেত্রে উদ্ধার কাজ কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।  

এদিকে সিলেটের উপশহর, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, দক্ষিণ সুরমা, হাউজিং এস্টেট, জিন্দাবাজার, কদমতলী, বাস স্টেশন, রেলস্টেশনসহ শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে পানির তীব্রতা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় জীবন নিয়ে শঙ্কিত সিলেটের মানুষরা।

এ পরিস্থিতিতে ত্রাণ না দিয়ে প্রাণে বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষেরা। তবে তাদের সে আকুতি শুনবে কে? অনেকে বাসাবাড়িতে মালামাল রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও মানুষ স্বজনদের নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র যাচ্ছেন।

এদিকে সিলেটের রেলস্টেশন বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সকাল থেকে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি সিলেটের বাস ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে সিলেটের রেলস্টেশন মাইজগাঁও থেকে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম।  

বিশেষ করে গত পাঁচ দিন ধরে সুনামগঞ্জ, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট জকিগঞ্জ, সিলেট সদর দক্ষিণ সুরমাসহ সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎহীন থাকায় এসব এলাকার কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।  

এরই মধ্যে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ উপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ওঠায় আপাতত সাব স্টেশনটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি পানি সেচে দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি আবার চালু করতে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে সিলেটের প্রায় সব সাব স্টেশনে পানি উঠতে শুরু করে। শুক্রবার দুপুর থেকে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ উপ বিদ্যুৎকেন্দ্র  সচল রাখতে যৌথভাবে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করেও পানি আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে আগের তুলনায় কয়েকগুণ পানি বেড়েছে বিদ্যুৎ গ্রিডে। পানি বাড়তে থাকায় বিদ্যুৎতের উপকেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।