ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু: বদলে যাবে মৎস্যসম্পদসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
পদ্মা সেতু: বদলে যাবে মৎস্যসম্পদসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র

পাথরঘাটা, (বরগুনা): আর কয়েকদিন বাকি স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের। গোটা দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে আনন্দে উদ্ভাসিত; বরগুনা জেলার মানুষের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস, উত্তেজনার ঢেউ সমানে বয়ে যাচ্ছে।

যারা যুগের পর যুগ ধরে একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তারা আজ আত্মপ্রত্যয়ী। অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মতো কৃষক, মৎস্য ও কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বসিত। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এ জেলার মৎস্য খাতে ‘পদ্মা সেতু’র ব্যাপক প্রভাব পড়বে, মৎস্য অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্যসম্পদে বিপ্লব ঘটাবে পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের সামুদ্রিক মাছের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই মৎস্য সেক্টর সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে আনন্দ বইছে। এ বন্দর থেকে ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কয়েক দশক ধরে ফেরিঘাটে যানজটের কারণে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় ফেরিঘাটে দিন পার হয়ে যায়। এতে মাছের গুণগত মান খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভালো দাম পায় না ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হলে মাছ ব্যবসায়ী আসবে আমূল পরিবর্তন। যার সুফল পাবেন ব্যবসায়ী, পাইকার, জেলে ও মৎস্য শ্রমিকরা।

এদিকে শুধু মৎস্য সেক্টরের ভাগ্যই বদলাবে না, বদলে যাবে সড়ক, জনপদ ও পর্যটন সেক্টর।  বরগুনার পাথরঘাটায় সর্বত্র পরিবর্তনের শুরু দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাঝেও বইছে আনন্দ। দিনে দিনেই পাথরঘাটা থেকে ঢাকার ব্যবসায়ী কাজ শেষ করে আবার গন্তব্য ফিরে আসতে পারবে। ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পাথরঘাটা-ঢাকা মহাসড়ক প্রসস্তকরন, ছোট ছোট কালভার্টসহ নানা উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) প্রায় ৪ হাজার ৮০০ টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি ছিল ইলিশ। অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করা মাছের ওপর শতকরা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। পদ্মা সেতু চালু হলে অবতরণ কেন্দ্রটিতে সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি বাড়বে। এতে সরকারের রাজস্ব আরো বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।  

পাথরঘাটা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার বলেন, ‘আমরা মাছ কিনে বিক্রির জন্য দেশে বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের ফেরি পার হতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে, মাঝে মাঝে ফেরি আটকে সময়মতো বাজার না পেলে অন্য বাজার খুঁজতে হয়। তাতে ইলিশসহ সব মাছেরই কালার নষ্ট হয়ে যায়। ভালো দামে বিক্রি করা যায় না। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। আমূল পরিবর্তন ঘটবে এই বন্দরের। ’ 

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আকন বলেন, ফেরিঘাটে যানজটের দীর্ঘ ভোগান্তিতে আর পড়তে হবে না মাছ নিয়ে। পাথরঘাটা মৎস্য ঘাট থেকে ট্রাক ছাড়ার পর ঢাকায় গিয়ে পাইকারি আড়তে থামবে। রাজধানীবাসীকে আর বরফ দেওয়া মাছ খেতে হবে না।

পাথরঘাটা মৎস্য পাইকার সমিতির সভাপতি মো. সাফায়েত মুন্সি বলেন, ভরা মৌসুমে পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর থেকে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক মাছ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। কিন্তু সড়ক পথ খুব খারাপ হওয়াতে অনেক সময় গন্তব্যে যেতে দেড়ি হওয়াতে মাছ নষ্ট হয়। ফলে পাইকারদের অনেক লোকশান গুণতে হয়। পদ্মা সেতু হওয়াতে দ্রুত যেতে পারবে এবং সময় কম লাগাতে মাছের দামও ভালো পাবে।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘মাছের ব্যবসায় সুদিন ফেরার আশায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রহর গুণছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের এই বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছের ব্যবসায় সুদিন ফিরে আসবে। সেতু না থাকায় মাছ কিনে ব্যবসায়ীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন না। ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এতে নষ্ট হয়ে যেতো মাছের মান, ভালো দাম পাওয়া যেতো না। পদ্মা সেতু চালু হলে সকাল-বিকেল গাড়ি যেতে পারবে। এতে প্রতিদিনের মাছ প্রতিদিন বিক্রি হবে। রাজধানীবাসী এবং অন্য এলাকার মানুষ সমুদ্রের তাজা মাছ খেতে পারবেন। ’

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট এম. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ফেরিঘাটে যানজটের কারণে সাগরে মাছ শিকার করা অনেক ট্রলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসে না। পাথরঘাটা থেকে ব্যবসায়ীদের মাছ কিনে ফেরি পার হয়ে যেতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে। সেসঙ্গে গুণগত মানও কমে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে এখান থেকে কোনো ফেরি পার হতে হবে না। কম সময়েই দেশের যে কোনো জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। তখন বন্দরে ট্রলার আসবে বেশি, ফলে বাড়বে এ অবতরণ কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়। এছাড়া উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে ও শ্রমিক রয়েছে, তাদের সবার ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারে এই সেতু। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।