ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা

ঢাকা: আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিদের টার্গেট করে অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টায় ওঁত পেতে রয়েছেন তারা।

চেতনাকাশক কিছু খাইয়ে বা শুকিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে ফারার হয়ে যায়। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ঈদের কোরবানির পশুর হাটকে টার্গেট করে অপতৎপরতায় মগ্ন তারা।

রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আবার কখনও যাত্রীবেশে বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ঔষধে ভেজানো রুমাল দিয়ে যাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে।  

এসব বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এছাড়াও কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

গত ২২ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকার তিতুমীর কলেজের ছাত্র ইউসুফ রেজা ওরফে রথি (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই দিন দুপুরে বাসা থেকে মোটরসাইকেলে যোগে ইউসুফ রেজা পূবালী ব্যাংকের দাউদকান্দি শাখায় ৫০ হাজার টাকা তুলতে যান। পরে বিকালে তাদের এলাকার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশে পড়ে ছিল তার মোটরসাইকেলটি। এ সময় ইউসুফের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। ওই দিন বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইউসুফ রেজা রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজের মার্কেটিং বিভাগের (স্নাতকোত্তর) ছাত্র ছিলেন।

অপরদিকে, ফারুক সিকদার (৩৫) শার্ট–প্যান্টের ব্যবসা করেন। আশুলিয়ার জিরাবোতে তার বাড়ি। ২২ জুন সকালে বাসা থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে প্যান্ট ও শার্ট কিনতে ঢাকায় আসেন। পথে পল্লবীতে তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরেন। টাকা-পয়সা হারানোর পর ফারুক বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

একই দিনে ঢাকায় এসে অজ্ঞান পার্টির কাছে আট লাখ টাকা খুইয়েছেন এখন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ময়মনসিংহের কৃষক শফিকুল ইসলাম। শফিকুলের ছোট ভাই মো. আবদুস সামাদ জানান, ২২ জুন ময়মনসিংহের নান্দাইল পলাশিয়া গ্রাম থেকে একটি ব্যাগে আট লাখ টাকা নিয়ে বনানীতে আসেন। ছোট দুই ভাই শরিফ ও আরিফ সৌদি আরবে যাওয়ার ভিসার টাকা জমা দিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বনানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সব টাকা হারিয়েছেন তিনি।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে নেই। গোয়েন্দা নজদারি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞানপার্টির চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন অভিযান চালাচ্ছেন তারা। আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে থাকে এবং অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ব বন্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন প্রস্তুত নিচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।  

একের পর এক অভিযানে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবুও অনেকেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্প্রতি রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের ১৮ সদস্যদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। এবিষয়ে র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও ইন্ট শাখা) পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বলেন, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ব বন্ধে প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ভুক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই শনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব তৎপর রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এসজেএ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।