ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাতের ঢাকা, তাও ঘুরছে না গাড়ির চাকা

মাছুম কামাল, নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
রাতের ঢাকা, তাও ঘুরছে না গাড়ির চাকা

ঢাকা: গাড়ির চাপে রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে ছোট-বড় সব পরিবহন দাঁড়িয়ে আছে।

এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষ। এক কথায় বলা চলে, যানজটে নাকাল প্রায় পুরো ঢাকা! 

সোমবার (২৭ জুন) রাত ১০টার দিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার রাস্তা থেকে শুরু করে মগবাজার এলাকার পর্যন্ত পুরো সড়কেই অসহনীয় যানজট।

অন্যদিকে গাজীপুর থেকে সায়েদাবাদ রুটে গাড়ি চলা এক প্রকারের বন্ধই বলা যায়। কিছুক্ষণ পর পর গাড়িগুলো কিছুটা এগোলেও স্থবিরও বলা চলে। ফলে, যাত্রীরা এক রকম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন মোহাইমিনুল নামের এক শিক্ষার্থী।  তিনি জানান, সন্ধ্যা ৬টায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে বাসে উঠেছেন, যাবেন রামপুরায়। ওই শিক্ষার্থী রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মধ্যবাড্ডা এলাকায় পৌঁছাতে পেরেছেন। তিনি জানেন না কয়টা বাজবে তার ওই এলাকায় পৌঁছাতে।

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শাহজাদপুর এলাকায় এসেছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম।  রাত ৮টায় গুলশানের শাহজাদপুর এলাকা থেকে বাসে উঠেছেন তিনি। সায়েদাবাদ হয়ে কুমিল্লায় ফিরবেন তিনি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি নতুনবাজার এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। এদিকে গুলশান লিংক রোড থেকে মহাখালী পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘসারি।  

বাবার সঙ্গে গুলশানের ওয়াটার বাস সার্ভিসে ঘুরতে মহাখালী থেকে এসেছিল ৯ বছরের রুবা। গাড়িতে বসে থেকে বার বার ঘেমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শিশুটি। পরে সে বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে। শিশুটির বাবার কণ্ঠে আক্ষেপই ঝরল। তিনি বললেন, ভাই যানজটের কারণেই সন্তান-পরিবারকে নিয়ে বেরোতে চাই না।

রাজধানীর বনানী, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, সায়েন্সল্যাব মোড়, এলিফেন্ট রোড, আসাদগেটে গাড়ির চাকা ঘুরেছে আধা ঘণ্টা পরে পরে। এসব এলাকায় প্রতিটি সিগন্যালেই লেগে আছে তীব্র যানজট।  আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লাগছে প্রতিটি সিগন্যাল পার হতে বিষয়টি বিজয় সরণির সিগন্যালে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নিশাত বিজয় জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট হলো বিজয় সরণি সিগন্যালে। এই এলাকার জ্যাম গিয়ে ঠেকেছে মহাখালী ফ্লাইওভারে পর্যন্ত। এই জ্যাম পার হতে লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টা।  

বিজয় সরণিতে বিকাশ পরিবহন দিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবী আরিফ হোসেন।

তিনি বলেন, অফিস শেষ করে সাড়ে ছয়টায় বনানী এলাকা থেকে গাড়িতে উঠেছি যাবো শুক্রাবাদ এলাকায়। কিন্তু জ্যামের কারণে এখানেই বসে আছি এক ঘণ্টার ওপরে। আর কতক্ষণ লাগবে কে জানে! 

বিজয় সরণিতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, অন্যদিন সন্ধ্যার পরে থেকে জ্যাম কমে যেতো। আজকের চিত্রটা উল্টো। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক অব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়া, মাত্রারিক্ত হারে যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ঢাকার যানজট। এর জন্য দরকার সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা। এছাড়া পরিকল্পিত ইউলুপ, আন্ডারপাস, ওভারপাস, ফুটওভারব্রিজ, ফিটনেসবিহীন যান নিয়ন্ত্রণ করার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে সড়কে কমতে পারে যানজট।

যানজটের বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা উত্তরের ট্রাফিক বিভাগে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কারও সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এমকে/এনবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।