ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ল্যাম্পপোস্ট বসানো নিয়ে সিসিক-কারা কর্তৃপক্ষ মুখোমুখি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
ল্যাম্পপোস্ট বসানো নিয়ে সিসিক-কারা কর্তৃপক্ষ মুখোমুখি

সিলেট : ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মিত হলেও ভূমি নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ওয়াকওয়ের পাশে বসানো ল্যাম্পপোস্ট নিয়ে বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও কারা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ল্যাম্পপোস্টের একটি খুঁটি তুলে নেওয়া নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে সরকারি দুটি সংস্থার মধ্যে। সিসিকের অভিযোগ, কারা সদস্যরা ল্যাম্পপোস্টটি ভেঙে দেয় ও খুঁটি তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া তারা সিসিকের কর্মচারীদের গালিগালাজও করে।

এমন অবস্থায় দুই পক্ষেই উত্তেজনা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনা জানতে পারেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও স্থানীয় কাউন্সিলররা। পরে তারা ঘটনাস্থলে যান। মেয়র আসার খবর পেয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ও জেলার ঘটনাস্থলে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরের ধোপাদিঘীপাড় ওয়াকওয়ে সংলগ্ন খালি জায়গার ল্যাম্পপোস্টের খুঁটি হেলে পড়ে আছে। পাশেই আরও কয়েকটি খুঁটি ফেলে রাখা হয়েছে।

সিসিক বলছে, সকালে কারা সদস্যরা ল্যাম্পপোস্টের জন্য বসানো একটি খুঁটি বাঁকা করে দেন। এ সময় সিসিক কর্মচারীদের গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন কারা সদস্যরা।    

এ বিষয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি খবর পেয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখতে পাই, একটি খুঁটি কারা পুলিশ সদস্যরা বাঁকা করে দিয়েছেন। ল্যাম্পপোস্ট খুলে নিয়েছেন।

ওয়াকওয়ে করতে ভারত সরকারের অনেক অর্থ খরচ হয়েছে। আলোক বাতির জন্য এসব খুঁটি বসানো হচ্ছে। যাতে রাতে নগরবাসী এখানে হাঁটাচলা করতে পারেন। এ কাজে বাধা দিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ সিলেটের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মেয়র অভিযোগ করে বলেন, জেল পুলিশ সদস্যরা হঠাৎ করে ওয়াকওয়ের ল্যাম্পপোস্ট ভাঙচুর করে খুঁটি বাঁকিয়ে দেয়। তারা এখানে কাজে থাকা শ্রমিকদের ধমক নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। ঘটনাটি তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। এছাড়া নগরবাসীকে অবহিত করতে তিনি সংবাদ মাধ্যমকেও খবর দিয়েছেন। বিষয়টি সবার জানা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটা তো আমার ব্যক্তি মালিকানা ভূমি নয়। আমি চাইলে একশতক ভূমি দিতে পারি না। কেবল দায়িত্বশীল হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি। সিসিক কর্তৃপক্ষ জায়গা নিতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে।

ওই জায়গাতে কারাগারের সীমানা প্রাচীর করা হবে। ইতোমধ্যে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ চলে এসেছে। ঈদের পর কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি বেশ গুজবের মতো ছড়িয়েছিল। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরই মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়েছে। মেয়র বলেছেন, একটি ল্যাম্পপোস্ট মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় রাখবেন, সেটি থাকবে। অন্যগুলো আর স্থাপন করা হবে না। এগুলো স্থাপন করলে কারাগারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে, সেটিও মেয়র মহোদয়কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, সিলেটে দুটি কারাগারে বন্দীদের রাখা হয়। পুরাতন কারাগারে একটি ডেপুটি জেলারকে ভারপ্রাপ্ত জেলারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর বন্দী থাকাতে ওখানে ব্যারোমিটারের মধ্যে যে একটি ওয়াল রয়েছে, ধোপাদিঘীর চারপাশ ওয়াকওয়েতে জনাকীর্ণ থাকলে সেটি ঝুঁকিতে থাকে। কোনো ধরণের অঘটন ঘটলে কিংবা বন্দীর পলায়নের কোনো ঘটনা ঘটলে সেটি সরকারের বদনাম। তাই ওয়াকওয়ে ঘেঁষে আরেকটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হচ্ছে। ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটি খুব দ্রুত ঈদের পরই নির্মাণ শুরু হবে।    

সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা থেকে এ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। সিসিক ধোপাদিঘীকে নতুন রূপ দেওয়ার ঘোষণার পর ভারত সরকার এগিয়ে আসে এর অর্থায়নে। ‘ধোপাদিঘী এরিয়া ফর বেটার এনভায়মেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ নামে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।