ঢাকা: রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় ৬০% ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে হেঁটে যাতায়াত করে। তা স্বত্বেও নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।
রোববার (৭ আগষ্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘জ্বালানি সাশ্রয় ও হাঁটাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে পথচারী প্রবিধানমালা দ্রুত প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করুন’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, বি-স্ক্যান, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম (ডিডিপি), ছায়াতল বাংলাদেশ, লিও ক্লাব অব ঢাকা ওয়েসিস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ মোট ১৯টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
একইসঙ্গে ক্যাম্পেইন থেকে পথচারীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জ্বালানি অপচয় রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন সম্ভব। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি সঙ্কটের মুখে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। যার প্রভাবে জনসাধারণের যাতায়াত ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য খরচও বাড়বে। ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ফলে শুধু জ্বালানি অপচয় নয়, বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট, দুর্ঘটনা, দূষণ। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ সব সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব।
বক্তারা বলেন, হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ শহরের অধিকাংশ মানুষ হাঁটা, রিকশা, গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক নীতিমালা, ২০১৩ এবং স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই জানিয়ে বক্তারা বলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে পথচারীদের প্রাধান্য নিশ্চিতকরণে দ্রুত ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ প্রণয়ন সম্পন্ন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
কর্মসূচি থেকে বক্তারা ‘পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা-২০২১’ দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; সব বয়স, লিঙ্গ ও সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পথচারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ফুটপাত নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ; সহজে এবং নিরাপদে সমতলে (জেব্রা ক্রসিং দ্বারা) রাস্তা পারাপারের সুযোগ সৃষ্টি; রাতে পথচারীদের, বিশেষত নারীদের, চলাচল নিরাপদ করার লক্ষ্যে ফুটপাথ ও সড়কে আলোর ব্যবস্থা করা; ফুটপাতে ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, খাওয়ার পানি, গণশৌচাগার ইত্যাদি নিশ্চিতকরণ; অবকাঠামো নির্মাণ দ্বারা পথচারীর নিরবিচ্ছিন্ন চলাচল বাধাগ্রস্ত না করা; ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধ; ফুটপাতে হকারদের ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা; যেখানে পথচারী চলাচলের ঘনত্ব বেশি সেখানে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য সড়ক ব্যবস্থা চালু করা; ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহার সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন, ডিজ্যাবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, বি-স্ক্যানের কো-অর্ডিনেটর ইফতেখার মাহমুদ, লিও ক্লাব অব ঢাকা ওয়েসিস-এর পরিচালক আকিব দীপু, ছায়াতল বাংলাদেশের ভলান্টিয়ার কাকলী কাদেরসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
এইচএমএস/এসএ