ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রাইভেটকারে গার্ডারচাপা

মেয়ের নতুন জীবন দেখার সুযোগ হলো না মায়ের!

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
মেয়ের নতুন জীবন দেখার সুযোগ হলো না মায়ের!

সাভার (ঢাকা): অভাব অনটনের কারণে গত বছর পরিবার নিয়ে জামালপুরের ইসলামপুর থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য আশুলিয়া খেজুর বাগান এলাকায় এসেছিলেন ফাহিমা (৩৮)। খেজুর বাগানের আশরাফ উদ্দিনের আট তলা ভবনের ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটের কক্ষে সাবলেটে থাকতেন ফাহিমা ও তার মেয়ে রিয়া মনি।

পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তারা। মা ও মেয়ে দুটি আলাদা কারখানায় কাজ করতেন। আর ফাহিমার ছেলে ফাহাদ পাশের একটি আবাসিক মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) ফাহিমার মেয়ে রিয়া মনির বিয়ে ঘরোয়াভাবে সম্পন্ন হয় ভাড়া বাড়ির ছাদে। সেখানে বাড়ির ম্যানেজার সফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী ও স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

সেই বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে আশুলিয়ার বাসায় ফেরার পথে সোমবার (১৫ আগস্ট) উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারের চাপায় মারা যান  প্রাইভেটকারে থাকা ফাহিমাসহ আরও পাঁচ জন। তবে এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান নববিবাহিত দম্পতি হৃদয় ও রিয়া।

এ খবরটি শোনার পর ফাহিমার আশুলিয়ার বাসার প্রতিবেশীরা বিষয়টি মানতে পারছেন না। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ফাহিমার সেই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ফাহিমার রুম তালা বদ্ধ। এ সময় ফাহিমার প্রতিবেশীরা বলেন, যাদের ভুলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।

ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ের নতুন জীবন দেখার আর সুযোগ হলো না মায়ের। ভবনটির ষষ্ঠ তলায় ৬০৪ নম্বর ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ফাহিমা। বাকি দুটি কক্ষে থাকেন আরও দুটি পরিবার। ফাহিমা ও তার মেয়ে রিয়া পৃথক দুটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গত শনিবার ওই ভবনের ছাদে রিয়ার বিয়েতে ২০ থেকে ২৫ জন আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বেশ হাসি-খুশিও ছিলেন ফাহিমা।

তিনি বলেন, গতকাল সকালে যখন মেয়েকে আনতে যান ফাহিমা ও তার বোন। তখন তাদের হাতে মিষ্টিসহ নানা সামগ্রী ছিল। আমাকে বলে গেল মেয়েকে আনতে যাচ্ছি। কিন্তু বিকেলে শুনি গার্ডারের চাপায় ফাহিমাসহ পাঁচজন মারা গেছেন। জলজ্যান্ত মানুষগুলো এভাবে হঠাৎ মারা যাবে এটা কে জানে। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

 ফাহিমার প্রতিবেশী মালেকা বানু বলেন, ‘এই পরিবারটি অনেক ভালো ছিল। দরিদ্র হলেও তাদের সব কিছু পরিপাটি ছিল। আমাদের পাশের বাসা তাদের কখনো কোনো ঝামেলার কথা শুনিনি। মেয়েটাকে ভালোভাবেই বিয়ে দিল। শুনেছিলাম ছেলেটা ভালো পরিবারের। কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হলো। আল্লাহ ভালো জানেন। এমন মৃত্যু আমরা কখনো আশা করিনি। এতিম হয়ে গেল ফাহিমার আপার মেয়ে ও ছেলেটা। ’

বিচার দাবি করে মালেকা বানু বলেন, উন্নয়নের জন্য সড়কে কাজ হচ্ছে। কিন্তু কোনো নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তা না থাকায় যারা মারা গেল তাদের কি শাস্তি হবে? আমরা শাস্তি চাই।

প্রসঙ্গত, সোমবার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে আনতে যান ফাহিমা। একই প্রাইভেটকারে তিনি আশুলিয়া থেকে ফিরছিলেন মেয়ে রিয়া, জামাতা হৃদয়, হৃদয়ের বাবা আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল, রিয়ার খালা ঝর্ণা এবং ঝর্ণার দুই সন্তান জাকারিয়া ও জান্নাতুলকে নিয়ে। বিকেলে তাদের প্রাইভেটকারটি উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এলে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপরে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন মারা যান। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ফাহিমাকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার টেঙ্গারগড় এবং ঝর্ণা এবং ঝর্ণার দুই সন্তানকে মেলান্দহে উপজেলায় দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।