ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যেভাবে কমল হয়ে ওঠেন রিকশা চোর চক্রের মূলহোতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
যেভাবে কমল হয়ে ওঠেন রিকশা চোর চক্রের মূলহোতা

ঢাকা: ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করে কামাল হোসেন কমল। একদিন তার রিকশাটি চুরি হয়ে যায়।

এতে রিকশার মালিক তার কাছ থেকে রিকশার দাম রেখে দেয়। এতে সে চুরি যাওয়া রিকশা খুঁজতে শুরু করে। খোঁজাখুঁজি একপর্যায় রিকশা চোর চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর সে নিজেই ওই রিকশা চোর চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে রিকশা চুরি করা তার পেশায় পরিণত হয়। কমল হয়ে ওঠেন চক্রের মূলহোতা।

বুধবার (১৭ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর সবুজবাগ ও মুগদা থানা এলাকা থেকে ২৩টি চোরাই অটোরিকশা উদ্ধার করে এবং আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূলহোতা কামাল হোসেন কমলসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। চক্রের বাকি সদস্যরা হলেন- মো. সাজু (৩৫), মো. ফজলু (৩০), মো. শাহিন সরদার (৬০)।

অভিযানে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত ২৩টি অটোরিকশা, ১৮টি অটোরিকশার চার্জার ব্যাটারি, ৪টি মোবাইল ফোন, ৪টি মাস্টার চাবি এবং নগদ এক হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ৭ বছরে পাঁচ শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছে। এসব রিকশা তারা পাঁচ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। চক্রের মূলহোতা কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাতটি চুরি মামলা এবং ফজলুর নামে একটি মাদক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গ্রেফতার কমল ১২ বছর ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে। প্রথমে কমল নিজেই একা রিকশা চুরি করতো। সে নতুন রিকশায় উঠে রিকশা চালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিত। এরপর চালক অজ্ঞান হয়ে গেলে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনও রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করতো।

এছাড়াও রিকশা চুরির জন্য সে একটি চক্র গড়ে তোলে। চক্রের সদস্য সাজু রিকশা চালিয়ে যেত। পথে নতুন রিকশা পেলে তারা নজরদারী করত। তারপর কমল রিকশার চালকে বলত সামনের রাস্তায় একটি বাসা থেকে কিছু মাল তোলা হবে। নির্ধারিত বাসার কাছাকাছি গিয়ে চালককে ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিতো। চালকের মোবাইল নাম্বার রেখে দিতো। বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে সহজ সরল রিকশা চালক তার কথায় রাজি হয়ে যেত।

তারপর তার সুবিধামতো একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে চালককে বলতো আপনাকে বাসার ভেতরে ঢুকে মালামাল নিয়ে আসতে হবে। এতে চালক বাসার ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র চক্রের অন্য সদস্য ফজলু রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত। মালামাল নিয়ে নিচে এসে রিকশা না পেয়ে চালক হাউমাউ করে কান্না শুরু করত। তখন কমল রিকশা খোঁজার নাম করে সেখান থেকে পালিয়ে যেতো। এরপর চুরি যাওয়া রিকশা শাহীন, আকবর, মনির এবং বাবলুর গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত।

তিনি বলেন, চক্রটি রিকশার মালিককে ফোন দিয়ে রিকশার মুক্তিপণ দাবি করতো। মুক্তিপণের টাকা পেয়ে অজ্ঞাত স্থানে রিকশাটি ফেলে রেখে যেত এবং মালিককে ফোন করে নিয়ে যেতে বলতো।

রিকশা চুরির অপরাধে এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল কমল। অনেক সময় চোরাই রিকশার রঙ পালটে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিতো।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন,  মান্ডা খালপাড় এলাকায় গ্রেফতার শাহিনের একটি রিকশা গ্যারেজ রয়েছে। সে ৩০ বছর ধরে রিকশার গ্যারেজ চালায়। গত ৭ বছর আগে কমলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বেশি লাভের আশায় সে তার গ্যারেজ ব্যবহার করে চোরাই রিকশা বিক্রি ও নিরাপদ হেফাজতে রাখতে সহায়তা করতো। একটি রিকশা বিক্রির ১০ শতাংশ কমিশন তাকে দিতে হতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
এসজেএ/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ