ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

১১ বছর ছদ্মবেশে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
১১ বছর ছদ্মবেশে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না

মানিকগঞ্জ: বিভিন্ন ছদ্মবেশে ১১ বছর পার করলেও শেষ রক্ষা হলো না  চাঞ্চল্যকর হিরু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল রহমানের (৩২)।  

সোমবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিপিসি-৩, র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লে কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, আসামি আব্দুল রহমানের একটি পিকআপভ্যান ছিল এবং তিনি পেশায় একজন পিকআপচালক। একই গ্রামের হিরু (ভিকটিম) বিভিন্ন পেশায় কাজ করতেন। হিরু আসামি আব্দুল রহমানের বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে পিকআপ ভাড়া নিতেন। একপর্যায়ে আব্দুল রহমান তার বাবাকে ভিকটিম হিরুর কাছে পিকআপ ভাড়া দিতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে একদিন হিরু আসামি আব্দুল রহমানের বাবার কাছে থেকে পিকআপ ভাড়া আনতে গেলে তিনি পিকআপ ভাড়া দেবেন না বলে জানান। হিরু জানতে পারে যে আব্দুল রহমান হিরুর কাছে পিকআপ ভাড়া নিতে নিষেধ করছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে হিরু আব্দুল রহমানকে রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এ ঘটনার পর থেকে রহমান ভিকটিম হিরুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গোপনে হিরুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ২২/০৯/২০১০ তারিখ আসামি আব্দুল রহমান পিকআপভ্যান চালিয়ে মিতরা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাঙ্গালা বাজারে যাওয়ার পথে সিংগাইর থানাধীন আমতলী নামক বাসস্ট্যান্ড এর কাছাকাছি পৌঁছালে আব্দুল রহমান দূর থেকে হিরুকে পাকা রাস্তার ওপর দেখতে পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পিকআপটি সজোরে গায়ে তুলে দিলে হিরু গুরুতর জখম হয়।  

স্থানীয় লোকজন হিরুকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় হিরুর স্ত্রী মোসা. মেহেরজান বাদী হয়ে আসামি আব্দুল রহমান ও মো. ইউনুছের (৩৫) নামে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

পরবর্তীকালে ওই মামলার আসামি আব্দুল রহমান ও ইউনুছদের পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। গ্রেফতার আসামি আব্দুল রহমান ও মো. ইউনুছ ৪ মাস জেলহাজতে থেকে জামিনে মুক্তি পায়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি আব্দুল রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন এবং অন্য আসামি মো. ইউনুছকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মানিকগঞ্জের বিচারক ওই মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ও উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম হিরু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ০২/০৯/২০২১ তারিখে চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামি আব্দুল রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। ওই ঘটনার পর থেকে আসামি আব্দুল রহমান দীর্ঘ ১১ বছর পলাতক ছিলেন।

আত্মগোপনে থাকাকালীন আসামির জীবনযাপন: আসামি জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর এই মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর ঢাকা চলে যান। পরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে আব্দুল রহমান প্রবাসে চলে যান। গত ১১ বছর ধরে আসামি ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ ব্রুনাই (প্রবাস) আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রথমদিকে তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি, বাস ও ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

সিপিসি-৩, র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন গঙ্গাধর পট্টি এলাকা থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আটক করে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।