ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

লাইনে দাঁড়িয়ে মেলেনি ট্রেনের টিকিট, শিক্ষকের আবেগঘন চিঠি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
লাইনে দাঁড়িয়ে মেলেনি ট্রেনের টিকিট, শিক্ষকের আবেগঘন চিঠি

নওগাঁ: বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। টিকিট চাইলে রেল স্টেশনের কাউন্টারে দায়িত্বরত নারী ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকিট নেই, সব টিকিট এসিল্যান্ড স্যারের লাগবে’।

এতে মর্মাহত হয়ে ওই শিক্ষক চিঠি আকারে নিজ হাতে একটি প্যাডে ঘটনাটি লেখেন। সেই চিঠি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ঝড় তুলেছে সমালোচনার।

ওই শিক্ষকের নাম মো. মোবারক আলী শেখ। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার দোগাছী গ্রামের বাসিন্দা এবং নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

চিঠিতে ওই শিক্ষক যা লিখেছেন, তা তুলে ধরা হলো:
‘সান্তাহার রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়েছি রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬.২২ টায় ১ নং কাউন্টারে আমি ১ম ব্যক্তি। আশা ছিল ২টা টিকেট পাব এসি স্নিগ্ধা। তারিখ ১৫/০৯/২২ ট্রেন কুড়িগ্রাম। ৮.০০ টায় কাউন্টার খোলা হলো। টিকেট যিনি দিচ্ছেন উনি একজন মহিলা। বললাম ‘মা’ আামাকে এসি ২টা টিকিট দেন। উনার উপরের বস একজন, যিনি টিকেট কাউন্টারের হেড। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক আমাকে টিকেট না দিয়ে বসের জন্য এসি স্নিগ্ধার সব টিকেট তাঁর বসকে দিয়ে দিলেন। আমি কয়েক বার তাঁদের কাছে অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছি। আমার বয়স ৬৫ বছর পেরিছে। আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বসের কথা রানীনগরের এসি ল্যান্ড স্যারের সব টিকেট লাগবে। তাই তিনি আমাকে ২টা টিকেট (এসি স্নিগ্ধা) দিতে পারবেন না। আমি অনেক দু:খ পেয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। বুঝাতে পারছিনা নিজের মনকে। কাউন্টার থেকে বেড়িয়ে বাসায় আসলাম।

মো. মোবারক আলী শেখ
অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক
নওগাঁ কেডি সরকারী উবি। ’

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোবারক আলী শেখ বলেন, চিঠিতে যা লিখা আছে, সবই সঠিক। আমার চাওয়া ছিল শুধু দুটি টিকিট। বয়স্ক যারা টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়ায়,  সবারই উচিত তাদের সম্মান করা। চিঠি দেখে পরে কয়েকটি জায়গা থেকে ট্রেনের টিকিট দেওয়ার জন্য আমাকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু আমি নেইনি।
 
এ বিষয়ে কথা হলে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুর রহমানের বলেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের জন্য ট্রেনের স্নিগ্ধা শ্রেণির এসি চেয়ারের তিনটি টিকিট একজনের মাধ্যমে কিনিয়েছি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করতেই পারি। আর অনেক সময় আমিও তো টিকিটি পাই না। এর বেশি কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী নাসরিন সুলতানা বলেন, স্টেশনের দুই কাউন্টার থেকে নিয়মিত এবং অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। তার (শিক্ষক) চাহিদা ছিল এসি চেয়ারের দু’টি টিকিট। কম্পিউটারে যখন সার্চ করা হলো, তখন একটি টিকিট দেখা যায়। যেহেতু সিট নেই, এজন্য তাকে এসি কেবিনের কথাও বলেছিলাম। কিন্তু তিনি নিতে চাননি। তিনি অন্য কোনো ট্রেনের টিকিটও নিতে চান না।

সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং মনিরুল করিম বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই কাউন্টার থেকেও টিকিট বিক্রি হয়। ওই শিক্ষককে টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা যায়, তার চাহিদা মতো টিকিট নাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।