ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অপরাধ ঝুঁকি থেকে এখন স্বাবলম্বী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
অপরাধ ঝুঁকি থেকে এখন স্বাবলম্বী

কক্সবাজার থেকে: ভৌগলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মাদকসহ নানা অপরাধের বাড়তি ঝুঁকিতে সীমান্তজেলা কক্সবাজার। যেখানকার যুবসমাজ মাদকাশক্ত থেকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

সেই কক্সবাজারেই অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এমন ৩৬ জন তরুণ-তরুণীকে স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মজীবন শুরুতে সহায়তা করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

'অপরাধকে না বলুন' স্লোগানকে সামনে রেখে 'নবজাগরণ' শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এই ৩৬ জনের মধ্যে একজন কক্সবাজারের কলাতলির বাসীন্দা সৈয়দ হোসেন। পড়াশোনা না করা সৈয়দ ৪ ভাই-বোনের মধ্যে বড় হলেও কিছুই করতেন না। ঘুরে ফিরে সময় কাটানো এই ব্যক্তিকে সার্ফিং শিখিয়ে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করেছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, র‌্যাবকে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। আমি মনে করি এতে অনেক উপকার হবে, এখন চাকরিতে ইনভলব হতে পারব। এখনই হোটেল সায়মন থেকে আমি চাকরির অফার পেয়েছি, এর ফলে আমার বেকার জীবন অবসান হবে।

সার্ফিং শেখার ফলে এই সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে বিভিন্ন সার্ফিং প্রশিক্ষণ ক্লাবে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। এই বেকারমুক্তিতে পরিবারের সবাই খুশি বলেও উল্লেখ করেন সৈয়দ।

কক্সবাজার রামুর বাসীন্দা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার রামুকে সেলাই মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে র‌্যাব। তিনি বলেন, বাবা দিনমজুর, তাই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে স্বাবলম্বী হতে এই প্রশিক্ষণ অনেক কাজে আসবে।

কলাতলির সাইফুল ইসলামকে ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রফিক নামে এক বড়ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে র‌্যাবের মাধ্যমে ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যার ফলে তিনি এখন বিচে ফটোগ্রাফির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।

সাবরিনা ইয়াসমিন নামে একজনকে দেওয়া হয়েছে হাউজকিপিংয়ের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষ করার পর সায়মন লং-বিচে চাকরির ব্যবস্থাও হয়েছে। স্বাবলম্বী হতে পেরে তিনি অনেক খুশি।

এ কর্মশালার আওতায় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠাীর তরুণী লাম নু খাই মার্মা জানান, নানাভাবে পিছিয়ে থাকলেও এ প্রশিক্ষণ তার জীবনের জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে। সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ তাকে স্বাবলম্বী করেছে। তিনি এখন সুন্দর ও স্বনির্ভর জীবন করতে চান। এ কাজে প্রশিক্ষণ বিনামূল্যে ও সেলাই মেশিনও দেওয়া হয়।

যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শুধু তারাই নয়, তাদের অভিভাবকরাও র‌্যাবের এ কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। কক্সবাজার হাজিপাড়ার বাসিন্দা হেলাল দেওয়ান জানান, দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তার ভাই নুরুল আমিন মুন্না, কিছুই করতেন না। মাদক প্রবণ এলাকা হওয়ায় খুব আতঙ্কে থাকতেন। কখন কী করে বসেন- সেই চিন্তায়।

তবে র‌্যাবের দেওয়া ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ তার ভাইকে সুযোগ করে দিয়েছে কাজ করার। তিনি বলেন, আশা করছি ভালো কিছু হবে।

র‌্যাবের 'নবজাগরণ' নামে এই কর্মসূচির আওতায় ৩৬ জনের মধ্যে হোটেল সার্ভিস বয় ৬ জন, সার্ফিং ৫ জন, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণ ৫ জন, ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ ৫ জন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ১০ জন এবং ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৫ জনকে। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। এরপর সেলাই মেশিন ও ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে একটি করে সেলাই মেশিন ও ক্যামেরা তুলে দেওয়া হয়। সবাইকেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সহায়তার আশ্বাসও দেয় র‌্যাব।

র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে শুধু অভিযানেই সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকরী পন্থায় বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যাতে অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।

তিনি বলেন, কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৬ জনকে সেলাই, ড্রাইভিং, টুরিস্ট গাইড, ফটোগ্রাফি, রেস্টুরেন্ট সার্ভিস এবং সার্ফিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ শেষে অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, অপরাধী হিসেবে কেউ জন্ম নেয় না। মূলত সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাকে অপরাধী হিসেবে পরিণত করে। যেসব সামাজিক পরিস্থিতি তাকে অপরাধী হতে বাধ্য করে, সেগুলোকে আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমাজ থেকে অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। পৃথিবীর কোথাও এমন নেই যেখানে শূন্য অপরাধ। তবে শূন্য অপরাধের সমাজ কায়েম করতে আমরা চেষ্টা করতে পারি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যেসব এলাকা ভারনারেবল, জনসংখ্যা অতিরিক্ত এবং কর্মসংস্থান কম, সেখানের লোকজনকে টার্গেট করেছেন র‌্যাব। এসব লোকজন যাতে অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে, সেজন্য তাদেরকে আলোর পথ দেখাচ্ছে র‌্যাব। এটা নিঃসন্দেহে একটা সাহসী উদ্যোগ। সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো আলোকিত বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে একসঙ্গে বেঁচে থাকবে এটা আমরা চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।