ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যানজটে ভোগান্তির শেষ নেই রাজধানীবাসীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
যানজটে ভোগান্তির শেষ নেই রাজধানীবাসীর

ঢাকা: সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস ছিল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। এদিন সকাল থেকেই অফিসগামী যাত্রী ও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গণপরিবহনের পেছনে ছুটতে দেখা যায়।

বিশেষ করে সকাল থেকেই সড়কে ছিল গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ।

সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকদের। তারাও ছিলেন যাত্রীর অপেক্ষায়। গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, ব্যক্তিগত যানবাহনে ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে করে যে যার মতো ছুটেছেন কর্মস্থলে। আর সড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ও বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজের কারণে সৃষ্টি হওয়া যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী।

সোমবার বেলা বাড়ার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে যানজট। এর মধ্যে গুলিস্তান, বাড্ডা, বিজয় সরণি মোড়, মহাখালী, এয়ারপোর্ট রোড ছিল অন্যতম। এছাড়া সকাল থেকেই ফার্মগেট-শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নেয় যানজটে। তেজগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কেও যানবাহনের প্রচুর চাপ ছিল। বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িলসহ প্রগতি সরণিতে যানবাহন খুব ধীরে চলেছে।

দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা আজহার রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঢাকার যানজট। সড়কে তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। যানজটে আটকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে নারী-শিশু এবং কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা বেশি ভুগছেন। এর মধ্যে আবার অস্বস্তি বাড়িয়েছে গরম।

কারওয়ানবাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদ হাসান বলেন, রাজধানীতে অনেক জায়গায় উন্নয়ন কাজের কারণে রাস্তা ছোট থাকায় গাড়ি ঠিক মতো চলতে পারে না। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, উল্টোপথে গাড়ি চলাসহ নানা কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। রাস্তার পাশে অবৈধ যানবাহন পার্কিং করে রাখার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

গুলিস্থানে বাস যাত্রী শামীম হোসেন বলেন, মিরপুর থেকে সকালে রওয়ানা হয়ে এক ঘণ্টার পথ যেতে লেগেছে দুই ঘণ্টা। বাসে বসে থাকতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। রাস্তায় খানা-খন্দে ভরা থাকায় ও মেট্রোরেলের কাজ চলায় গাড়ির লাইন পড়ে যায়। তাই আস্তে আস্তে আসতে হয়। এতে অনেক সময় বাসে বসে থাকতে হয়েছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ১৫ বছরের ব্যবধানে এখন তা কমে সাড়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবে রাস্তায় চলতে গেলে গাড়ির গতি এর চেয়েও কম মনে হয়। সব মিলিয়ে ঢাকার সড়ক দিন দিন নিশ্চল হওয়ার পথে।

বুয়েটের এক হিসেবে, এখন যানজটের কারণে ঢাকায় দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে বছর শেষে যানজটে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া শুধু কর্মঘণ্টার ক্ষতি নয়, যানজটের কারণে ক্ষতির অনেক দিক রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই গবেষণায়। তীব্র গরম, বিপুল শব্দ ও বায়ুদূষণের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। সেখান থেকে শরীরে নানা রোগও বাসা বাঁধে। এসব রোগের চিকিৎসায় বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়।

ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, যান চলাচলের জন্য রাস্তা সংকট আর নগরজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলায় এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এছাড়া এই সংকট থেকে বাঁচতে হলে প্রাইভেট যানের পরিবর্তে গণপরিবহণের ব্যবহার বাড়ানোরও তাগিদ তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।