ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রমিক নেতা শাহ্ আতিউল ইসলামকে স্মরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
শ্রমিক নেতা শাহ্ আতিউল ইসলামকে স্মরণ

ঢাকা: বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের (টাফ) প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আজীবন মুক্তি সংগ্রামী শাহ আতিউল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পরিবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রো অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখ্তার।

এ দিন সকালে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

আলোচনা সভায় তাসলিমা আখ্তার বলেন, আতিউল ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আজকে বাংলাদেশে যখন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নাই, ন্যায্য ও বাঁচার মতো মজুরি নাই তখন আমাদের লড়াইও অনেক বড় ও বিশাল। আন্তর্জাতিক পুঁজির দাপটের এই কালে, ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে  শ্রমিক সংগঠনের সামনে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরো বলেন, মালিকরা করোনার সময় যেমন ভয় চাপিয়ে দিয়েছিল শ্রমিকদের ওপরে এখনো অটোমেশনসহ নানাকিছুর ভয় দেখাচ্ছেন। কাজেই কাজ হারানোর আশঙ্কা, বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটে সবচেয়ে বেশি দুর্দশার মধ্যে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। সেই সাথে দেশে দুঃশাসন, নৈরাজ্য তো আছেই। এইখানে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন কীভাবে এগোবে সেটা আমাদের লক্ষ্য।  আজকে মজুরি বিষয়ে একটা সামগ্রিক দাবি আমাদের ওঠাতে হবে এবং সেটা নিয়ে জোরালোভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, আশির দশকে সারাবিশ্বে পুঁজিপতি গোষ্ঠীর বিজয় অর্জিত হয়। আবার আমাদের মতো দেশে রাষ্ট্রীয় শিল্পভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে এখানে গার্মেন্টস চালু হলে সেখানে শ্রমিকরা লড়াই করেই আজকের জায়গায় পৌছায়; যেমন নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, সময়, ছুটি ইত্যাদি কিছুটা হলেও আদায় করতে পারতো। কিন্তু বর্তমান অবস্থাটা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে।

সিপিডির একটি গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিপিডি বলছে—একেকটা পরিবারে খাওয়া-দাওয়ার খরচ হিসাবে ২২,০০০ টাকা লাগে। অন্যদিকে তিনি সরকার প্রধানের দুর্ভিক্ষ নিয়ে এবং সবাইকে উৎপাদন বাড়ানোর তামাশার কথাও উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জননেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্র হচ্ছে শ্রেণিসমূহের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জায়গা। কাজেই এর ধাক্কাধাক্কি ও প্রাধান্যের মধ্যেও অধিকার আদায়ের জায়গা থাকার কথা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি নেই। কাজেই শ্রমিকদের অধিকার, মজুরি, শ্রমপরিবেশ এবং ন্যূনতম ব্যবস্থা কিছুই পাচ্ছে না কেউই।

তিনি আরও বলেন, দেশে ইলেকশন নাই, দেশে ভোটাধিকার নাই অথচ টকশোতে কুসুম কুসুম আলোচনা চলছে। বিরোধী দলের জনসভা ঠেকাতে সরকার নিজে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে দেয়।

তিনি আরো বলেন, এই কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনের দিন ভোট দিলেও আপনার ভোট গণনা হবে না, আপনার প্রার্থী জিতবে না; তার উপায় নাই। আজকে রাষ্ট্রে স্পেস নাই, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক জায়গাগুলোও বন্ধ করা হয়েছে। কাজেই জনগণের অধিকারের নানা প্রশ্ন তোলার উপায় সংকুচিত এবং রাজপথের লড়াইয়ে কেবল ভয়, আতঙ্ক ও অনৈক্যের অবস্থা। শাহ আতিউল ইসলামরা পাকিস্তান আমলেও এ অঞ্চলে যেমন শ্রমিক আন্দোলনের সংগ্রাম এবং অধিকার আদায় করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমানে সে পরিস্থিতিও নেই।

শাহ আতিউলি ইসলামের মধ্যে এতটুকুও অহমিকা দেখেননি বলে উল্লেখ করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, কেরানি এবং কারিগর কার বেতন বেশি হবে? পাকিস্তান আমলেও শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট বেশি ছিল। সরকারি হিসাব মতেই জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০,০০০ টাকার নিচে হতে পারবে না।

গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিষয়ে আলোচনা টেনে তিনি বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা রপ্তানিতে কত ভ্যালু অ্যাড করে পণ্যে তার হিসাবও হতে হবে। আজকে সরকার সরকারি সুইপার পিয়নদের সর্বনিম্ন মজুরিও নির্ধারণ করেছে ২৪০০০ টাকা।

শাহ আতিউল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের অন্যতম নেতা ফিরোজ আহমেদ বলেন, পাকিস্তান আমলের শ্রমিক আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এবং তাঁর মৃত্যুতে একটা আন্দোলন যুগের অবসান হলো।

তিনি আরও বলেন, সরকার যতই ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে সবকিছুকে চাপিয়ে দিক না কেন এখানে দুর্নীতি লুণ্ঠনের কারণে এবং বিশেষত জ্বালানিখাতে যে বিপর্যয় সেটাই ভয়াবহ নয়। এর রাজনৈতিক দিকটা ও এর প্রধান কারণগুলোর বড়টা হচ্ছে এদেশে বৈধতাহীন, জবাবদিহিতাহীন একটা সরকার জনগণের ওপর চেপে বসে আছে।

আফম জহিরুল ইসলাম বলেন, আতিউল ইসলাম মারা গেছেন দুই বছর হয়। মৃত্যু সবারই অনিবার্য। আতিউল ভাইকে স্মরণ করি; কেননা আমাদের শ্রমিক আন্দোলনের তার জীবন থেকে অনেককিছু শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। তিনি জীবনব্যাপী যে সংগ্রাম করেছেন, তাতে কোনো বিচ্যুতি নেই।

আতিউল ইসলামের সহধর্মিণী সোহেলা রুমি বলেন, তিনি সংসারের কথা কখনই চিন্তা করতেন না, এমনকি বৃদ্ধকালে নিজের চিকিৎসা নিয়েও ভাবতেন না। আতিউল ইসলামের স্মারকগ্রন্থ বের হওয়ার যে পরিকল্পনা চলছে সেখানে আপনারা লেখা দেবেন এই আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।