ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর অগ্রগতি ৪৬%, যথাসময়ে উদ্বোধনের আশা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২২
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর অগ্রগতি ৪৬%, যথাসময়ে উদ্বোধনের আশা

ঢাকা: যমুনা নদীতে দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।  যমুনার টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার দূরে রেলসেতুটি নির্মাণাধীন।

ইতোমধ্যে এই সেতুর ৪৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল সহজ করবে এই সেতু। একই সাথে আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবেও ব্যবহৃত হবে।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর সচিবালয় সংলগ্ন রেল ভবনে একান্ত সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান এসব তথ্য জানান।

যদিও এক দফা ডিপিপি সংশোধন করায় সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পর প্রকল্পের ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ৪৬ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সময়ে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৬ শতাংশ। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী সেতুর প্রকল্প পরিচালক।

গত আগস্ট মাসে প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু চালু হলে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও জানান, সাইটের কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। ৫০টি পিলারের মধ্যে ১৬টির কাজ ধরা হয়নি। বাকিগুলোর কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। ১২টির সুপারস্ট্র্যাকচারের কাজ চলছে।

প্রসঙ্গত, নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

গত মে মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) উদ্যোগে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরে আইএমইডি প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বেশ কিছু দুর্বল দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) দেশের বৃহত্তম এ রেলসেতু নির্মাণে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আইএমইডি বলছে, ডিপিপিতে প্রথমে প্রকল্পটি ৯০ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২৪ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাও প্রকল্পের অন্যতম দুর্বল দিক। রেলের সড়ক বাঁধ নির্মাণে যথাযথ ও অনুমোদিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি। এটাও প্রকল্পের দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

তথ্যমতে, বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য পৃথকভাবে নদী শাসন করতে হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর উভয় দিকে ৫৮০ মিটার ভায়াডাক্ট (সংযুক্ত উড়ালপথ) থাকবে। যমুনা ইকো পার্কের পাশ দিয়ে এটা বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এ জন্য ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার সংযোগ রেলপথ নির্মাণ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ৩টি স্টেশন বিল্ডিং, ৩টি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, ৩টি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬ টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলসেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও ২টি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুর উপর দিয়ে ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। এজন্য নতুন স্বতন্ত্র রেলসেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে দেশটির সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২২  
এনবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।