গোপালগঞ্জ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত পাঁচুড়িয়া খালের সঙ্গে মধুমতি নদীর সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৬৩ বছর পর খালে প্রবেশ করেছে মধুমতি নদীর পানি।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে তাদের প্রাণের দাবি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এদিন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা মধুমতি নদীর সঙ্গে পাঁচুড়িয়া খালের সংযোগ স্থাপন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, পৌর মেয়র মো. রকিব হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন নাহার, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমিন, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন, এলডিইজির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোহসীন উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন খানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাজনীতিবীদরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১ অক্টোবর খালটির পুন:সংযোগ কাজের উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন খানের তত্ত্বাবধানে দিনরাত কাজ চলে। এই কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো গোপালগঞ্জ পৌরসভা, সড়ক বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সড়কের দুই পাশের নির্মিত বহু পাকা ও আধাপাকা ইমারত অপসারণ করেই খনন করা হয়েছে খালটি।
এদিকে, দীর্ঘ ৬৩ বছর পর এ খালটির বন্ধ মুখ উন্মুক্ত হওয়ায় দূষণ আর দখলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত খালটি। এরফলে দীর্ঘদিন পরে হলেও দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল বাতাস উপভোগ করতে পারবেন খালের দুই পাড়ে বসবাসকারী মানুষ। তারা নিত্যদিনের প্রয়োজন মিটাতে পারবেন খালের পানি দিয়ে। খালের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন মৎস্যজীবীরা। আবারও এই খালে দেখা যাবে ডিঙ্গি ও টাবুরে নৌকা। যে নৌকায় ঘুরে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন সবাই। এতে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে স্থানীয় পাঁচুড়িয়ার বাসিন্দা সমর বাইন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক এই খালটি ষাটের দশকের প্রথমদিকে বন্ধ করা হয়। সেই খালটি আজ উন্মুক্ত করা হলো। এতে একদিকে যেমন জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষা হলো, অন্যদিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেল খালপাড়ের মানুষের। এই জন্য খালপাড়ের মানুষ অনেক উৎফুল্ল। তারা অনেক খুশি।
আরেক বাসিন্দা বরিউল ইসলাম রবি বলেন, পাঁচুড়িয়া খালের দুই পাড়ে যে নোংরা পরিবেশে মানুষ বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছিলেন, তার হাত থেকে আজ মুক্ত হলো। খালপাড়ে দুর্গন্ধের কারণে আমাদের বসবাস করতে খুব সমস্যা হচ্ছিলো। খালটির সঙ্গে মধুমতি নদীর সংযোগ স্থাপন হওয়ায় এ সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন খালপাড়ের বাসিন্দারা। এই জন্য আমরা এলাকাবাসী অনেক খুশি।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান বলেন, ১৯৫৯ সালে ব্যাংকপাড়াস্থ গোডাউন এলাকায় ভাঙ্গণ দেখা দেয়। তখন সেই ভাঙ্গণের হাত থেকে খাদ্য গোডাউন রক্ষা করতে তৎকালিন ফরিদপুর জেলা পরিষদ থেকে খালটির মুখ বন্ধ করে দেয়। এরপর দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হলেও খালটির মুখ উন্মুক্ত করার জন্য কেউ উদ্যোগ নেয়নি। এই খালটির সঙ্গে জাতির পিতার স্মৃতি জড়িয়ে থাকায় একটি সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে খালটির বন্ধমুখ উন্মুক্ত করে অবাধ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষা পাবে এবং এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।
পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন বলেন, এই পাঁচুড়িয়া খালের স্বপ্ন জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই ছিলো। আমি যখন উনার সঙ্গে কথা বলি, তখন জেলা প্রশাসকও উপস্থিত ছিলেন। উনার কথাই ছিলো আমার বাবা নৌকায় করে এই পাঁচুড়িয়া খালে চলতেন। তিনি পাঁচুড়িয়া খালটাকে মধুমতি নদী ও বর্ণির বাওরের সঙ্গে সংযোগ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এই সংযোগের ফলে জনগণ উপকৃত হবে, দুর্গন্ধমুক্ত হবে, স্রোত থাকবে এবং মানুষের আস্থা ছিলো যে, এটা একদিন লেকে পরিণত হবে। বিগত দিনে মানুষ ভাবতেই পারেনি যে, এটা এক সময় লেকে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যাই আমাদের শিখিয়েছেন, কিভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, বঙ্গবন্ধু তার স্মৃতি বিজড়িত এই পাঁচুড়িয়া খাল দিয়েই টুঙ্গিপাড়ায় আসা-যাওয়া করেছেন। বৃটিশের সময় এখানে একটা লোহার পুল (ব্রিজ) ছিলো। এই গোডাউনকে রক্ষা করার জন্য এটা বন্ধ করে দেয়া হয়। পুনঃসংযোগ স্থাপনের ফলে মধুমতি নদীর সঙ্গে বর্ণির বাওর ও বাঘিয়ার নদীরও সংযোগ স্থাপন হলো। এতে জোয়ার-ভাটা হবে। এতে আমাদের যে স্বপ্ন তা পূরণ হবে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই খালে পানি প্রবাহ বন্ধ ছিলো। এই খাল দিয়ে চলাচল করা বঙ্গবন্ধু এখানে যে লঞ্চঘাট ছিলো সেখানে নামতেন। তার কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের একটা কষ্ট ছিলো। এই স্মৃতিটা ধীরে ধীরে মানুষ বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা অনেক চেষ্টা করছিলাম এই খালটি উন্মুক্ত করতে। দীর্ঘ এক মাস ১৬ দিন দিনরাত কাজ করার পর আজকে আমরা সফল হলাম। এটা কোনও একক মানুষের প্রচেষ্টা নয়। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসতি স্থাপনকারীদেরও একটা বড় সহযোগিতা আছে এবং তারা নিজেদের মতো করে জায়গাগুলো থেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। একইসঙ্গে আমাদের স্থানীয় জনগণ ও সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ- সবাই সহযোগিতা করেছেন। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
ইকে/এনএস