ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চা-চক্রে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন ইডিইউর নারীরা

তানভীর পিয়াল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
চা-চক্রে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন ইডিইউর নারীরা ...

নারীর নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ)। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স তো রয়েছেই, পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও কর্মরতদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সেশন-সেমিনার আয়োজনও নিয়মিত ঘটনা।

 

এসব উদ্যোগ কতোটা ফলপ্রসু হলো, এর বাইরেও আরো কিছু করা যায় কি না তা নিয়ে এক চা-চক্রে আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন ইডিইউতে কর্মরত নারীরা। শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত ৩২ জন নারী এ মুক্ত আলোচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) কর্তৃক ঘোষিত ‘অ্যাড্রেসিং জেন্ডার-বেজড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে ইডিইউ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমপ্লেইন্ট কমিটি (এসএইচসিসি) সম্প্রতি এ চা-চক্রের আয়োজন করে। এ বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বজুড়ে ‘১৬ দিনের এক্টিভিজম’কর্মসূচি পালন করছে ইউএনএফপিএ।

তাদের ভাষ্য, বর্তমান বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজন নারী যৌন সহিংসতার শিকার এবং এর প্রভাব তারা সারাজীবন ধরে বয়ে বেড়ায়। এই সহিংসতা যে এসব নারীর জীবনযাপনকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা নয়, বরং একইসাথে তাদের পরিবার ও সমাজেও রাখছে ক্ষত। নারীর প্রতি এ সহিংসতা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকেও স্তিমিত করে দেয়। ফলে, বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীকে বাসযোগ্য পৃথিবী দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকতে হবে সমাজের প্রত্যেকের।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত চা-চক্রেও এসব কথা ঘুরে-ফিরে বারবার এসেছে আলোচনায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তারা। বাংলাদেশে মোট নারীর প্রায় ৪০ শতাংশ বর্তমানে কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মরত আছে গার্মেন্ট শিল্পে এবং এ ক্ষেত্রটিতেই সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।  

এ বিষয়ে নিজের লেখা একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনন্যা নন্দী বলেন, ‘৯০-এর দশকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের কলকারাখানা স্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে। গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে অনেক পরিবার। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যেই অনেক নারী উদ্যোক্তা উঠে আসেন। যার প্রতিফলন দেখা যায় ক্রমবর্ধমান জিডিপি-তে। কিন্তু এসব সাফল্যের গল্পের পাশাপাশি রচিত হয়েছে প্রচুর পিছিয়ে পড়ার গল্পও। যার অন্যতম কারণ নারীর প্রতি আমাদের সমাজে ঘটে চলা অন্যায় ও সহিংসতা। ’

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির পরিবেশ নারীর জন্য কতোটা অনুকূল সে আলোচনাও উঠে আসে এ সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার ফারহানা আহমদ সিগমা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই নারী। এছাড়া কর্মরতদের মধ্যেও নারীর সংখ্যা কম তো নয়ই, বরং দিন দিন তা বাড়ছে। আমাদের কর্তৃপক্ষ নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সবরকম সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এছাড়া, সম্প্রতি পিছিয়ে পড়া সম্ভাবনাময় নারীদের জন্য বিনাখরচে পড়ার সুযোগ দিয়েছে ইডিইউ কর্তৃপক্ষ। যা বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে অ্যাক্সেস অ্যাকাডেমির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন সহকারী অধ্যাপক তাসমিম চৌধুরী বহ্নি। তিনি বলেন, পাঠক্রমের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারে সহায়ক নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে অ্যাক্সেস অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে, সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট সেমিনার নামক কোর্সে যৌন হয়রানি ও লৈঙ্গিক অসমতা ছাড়াও সামাজিক আরো বিভিন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করে তা মোকাবেলার কার্যকর উপায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা তাদের দেওয়া হয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের সাথে সাথেই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।

এ মুক্ত আলোচনায় প্রায় প্রত্যেকেই ইডিইউতে নিজেদের অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নেন। অনেকেই তাদের আশপাশে ঘটে চলা নানা অন্যায় ও সহিংসতার কথাও তুলে ধরেন। এসব কথা প্রকাশ্যে আনার উদ্দেশ্য নিয়েই আয়োজন করা হয়েছিলো এ চা-চক্রের, যাতে রাখঢাক না রেখেই প্রত্যেকে আড্ডাচ্ছলে অংশ নিতে পারে এসব আলোচনায়।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।