ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

যে মুহূর্তে আ’লীগ হারবে মেয়র নির্বাচনে -দুই

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১২
যে মুহূর্তে আ’লীগ হারবে মেয়র নির্বাচনে -দুই

প্রিয় পাঠক, অহেতুক বিলম্বের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী । শারীরিক অসুস্হতাই এজন্যে দায়ী।



ভীষণ গ্যাঁড়াকলে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপি’র ‘অভিমানী’ মনোবৃত্তিকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো যদু-মধু-রাম-শ্যামকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনবে। সেই আশায় গেলোদিন গুড়ে বালি দেবার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব কিছুই সম্ভব। তবে নিঃসন্দেহে দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের তীব্র চাপে আছেন বিএনপি’র কেন্দ্রের নীতি নির্ধারকেরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বিএনপি’তে অনেক। একজনকে মনোনয়ন দিলে অন্যজনের অসন্তুষ্টি দলের আন্দোলনের জন্যে হুমকি হবার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিএনপিপ্রধান বেগম জিয়া হয়তো চাটগাঁ ও কুমিল্লার মতো কোনো চমকপ্রদ স্ট্রাটেজি নিতে পারেন যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে।

অতীতের স্হানীয় সরকারের নির্বাচনী অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনার স্বার্থেই ধরা যাক বিরোধী দল বিএনপি সরাসরি কোনো প্রার্থী দেবে না। কৌশলে অন্য কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। ফলতঃ আওয়ামী লীগের সব রসায়ন বাতিল হতে বসেছে। নতুন করে হিসাব-নিকাশে বসতে হবে জেতার জন্যে প্রার্থী মনোনয়নে। এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর প্রিয় বিষয় এক্সপেরিমেন্ট। এই নির্বাচনে আবার তিনি না জানি কোন এক্সপেরিমেন্টে মাতেন!

ঢাকা দক্ষিণ মূলতঃ পুরান ঢাকার বর্ধিত সংস্করণ। যদিও ঢাকা এখন অনেকাংশে কসমোপলিটান তবুও পুরান ঢাকায় ‘বহিরাগত’ বা অভিবাসীদের ‘ঠাঁই’ খুব একটা নেই। পুরান ঢাকার ‘আদি বাসিন্দারা’ নিজেদের একজনকেই মেয়র হিসেবে দেখতে আগ্রহী। এই ভোটারের সংখ্যা ফেলনা নয় বরং ডিসাইডিং। এরই মধ্যে যদিও কামরাংগীরচরসহ অন্যান্য নতুন বসতিতে বিভিন্ন জেলার মানুষের শংকর সমন্বয় ঘটেছে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ‘ইচ্ছা-অনিচ্ছা’কে প্রাধান্য দিয়েই সেখানকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আসনে হানিফপুত্র সাঈদ খোকন, হাজী সেলিম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নাসির উদ্দিন পিন্টুদের মনোনয়নে বিবেচনা করা হয়। দলীয় বিবেচনায় হানিফ-পুত্র সাঈদ খোকনের নাম বিপুল উৎসাহে উচ্চারিত হলেও ওয়ান-ইলেভেনে ‘ঈমাম বদল করা` খোকনের প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার অসন্তুষ্টির গুঞ্জনও বাজারে আছে। তবে সব মিলিয়ে সাঈদ খোকনের সার্বিক ইমেজ বেশ ক্লিন। মেয়র পদের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী হাজী সেলিম। তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতির মূলধারায় উঠে আসা হাজী সেলিমের শেকড় বেশ গভীরে প্রোথিত। কামরাংগীরচরসহ বিভিন্ন বস্তিতে হাজীর পরিচিতি দুঃসময়ের বন্ধু বলে। তিনি বস্তিবাসীদের কাছে নব্য এক রবিন হুড।

মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে হাজীর সম্পর্ক বেশ গভীর। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গেও হাজীর নিবিড় সম্পর্ক। পুরান ঢাকার আগুনে নিঃস্ব হওয়া তিন কন্যাকে প্রধানমন্ত্রী ’দত্তক’ নিলে হাজী সেলিম তাদের বিবাহের সব খরচ বহনসহ কন্যা সম্প্রদান করে মিডিয়ার নজর কাড়েন। হাজীর বিরোধী পক্ষরা অবশ্য বেশ জোর লবিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর কানে মন্ত্রণা দিচ্ছেন যে, হাজীর মূল শেকড় বিএনপি। অভিযোগটুকু হালে পানি পাবে বলে অনুমানে আসে না। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল বদল নৈমিত্তিক ঘটনা মাত্র।

মেয়র পদপ্রার্থী আরেকজন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। এরশাদ মহাজোটের স্বার্থে ফিরোজ রশীদকে মনোনয়ন দেবার জন্যে জোর লবিং চালাচ্ছেন। এরশাদের জমানার মন্ত্রিত্বে ফিরোজ রশীদের ব্যক্তিগত সততা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সব মিলিয়ে তিনি ক্লিন ইমেজের। উপরন্তু উনার বাড়ী গোপালগঞ্জে। প্রধানমন্ত্রীর নিজ এলাকার মানুষ হবার সুবাদে ফিরোজ রশীদের ললাটে মনোনয়ন জুটতে পারে বলে গুঞ্জন বেশি। এখনতো প্রশাসনে শুনি গোপালগঞ্জের জয় জয়াকার। আগে এই সুবিধাটুকু নিয়েছিলেন বগুড়াবাসী।

কাজী ফিরোজ রশীদের মনোনয়ন হবে এক টিকেটে দুই ছবি। এরশাদ মহাজোটের ওপর সন্তুষ্ট থেকে উত্তরে আওয়ামী প্রার্থীকে জিতিয়ে আনবেন। অন্যদিকে, গোপালগঞ্জের একজনকে মেয়র নির্বাচিত করা। এছাড়া দলীয় কাউকে প্রার্থিতায় সমর্থন জুগিয়ে কোন্দল চাংগা করার আশংকাও থাকবে না। খোকনকে মনোনয়ন দিলে হাজী সেলিম বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন। হাজীকে দিলে খোকন। সেক্ষত্রে চাটগাঁ ফর্মুলায় বিএনপি লাভবান হতে পারে।

যদি বিএনপি প্রকাশ্যে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সব হিসাব-নিকাশ বদলে যাবে। বিএনপি’র অপ্রকাশ্য সমর্থনেও নির্বাচনী রসায়নে পরিবর্তন দেখা দেবে। তবে নির্বাচনী জয়ী হবার জন্যে মার্কার চেয়েও বড় বেশী প্রয়োজন হবে ক্লিন ও সৎ ইমেজের মনোনয়ন।

দেখা যাক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকেরা কী সিদ্ধান্ত নেন।

ইমেলঃ [email protected]

বাংলাদেশ সময় ১০২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১২
সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।