ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মুখোমুখি লড়াইয়ে মান্না-আখতার

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১২
মুখোমুখি লড়াইয়ে মান্না-আখতার

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা ’ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসিতে দুনিয়া শাসন করেছিল। ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসন পাকাপোক্ত হয়েছিলো জাতিতে-জাতিতে, ধর্মে-ধর্মে, ভাষায়-ভাষায় বিভাজন সৃষ্টির কারণে।

বাঙালিরাই বাঙালিদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে ধর্মের স্লোগান তুলে। মুসলমান নেমেছিলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভাষাভাষী হওয়ার অভিযোগে। এভাবেই ক্রমাগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বাঙালি।

ব্রিটিশরা এদেশ থেকে সাম্রাজ্য গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল প্রায় পঁয়ষট্টি বছর আগে। ``ভাগ করো আর শাসন করো`` (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) পলিসির অবসান ঘটেনি বাংলার মাটিতে। কিন্তু পরবর্তীকালে অপকর্মটি চালিয়ে গেছেন ‘ভাই-বেরাদারের’ ছদ্মবেশে থাকা পাকি শোষকরা। স্বাধীন বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি ইস্তেমাল হতে দেখি। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিতর্কে দেশকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিভক্তির বিতর্কে। দুই বড় দলের ছত্রছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় আজ পুরো জাতি, ``হয় আমাদের, নয় তাদের’ বিভক্তিতে। বড় দুই দলের স্নেহধন্য ও অনুগত হওয়া ভিন্ন ‘রাজনৈতিক’ গত্যন্তর নেই। বড় দুই দলের আশীর্বাদে নেতা, উপেক্ষায় বাতিল। ব্যক্তিগত সততা ও যোগ্যতা এখন কোনোভাবেই বিবেচ্য নয় রাজনীতির মূলধারায়।

বড় দলগুলো ‘মাশাল্লা’ চরিত্রের অধিকারীদের বিভিন্ন ‘স্বার্থে ও কারণে’ মনোনয়ন দেয়। বিকল্পহীন সামান্য ভোটারদের কাছে ক-মাশাল্লা বা খ-মাশাল্লাদের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয়। বিজয়ী ও বিজিত---এই দুই মাশাল্লা মিলেমিশে সাধারণ মানুষদের ভাগ্যবিধাতা বনে বসে। মাশাল্লাদের সম্পদ-বিত্ত বাড়ে বিপরীতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন নিদ্রা চাংগে ওঠে আনুষঙ্গিক ‘কোলেটারাল’ ঝুট-ঝঞ্ঝাটে। ডিভাইড অ্যান্ড রুল রাজনীতির কারণে কোনো ভিশনসম্পন্ন, যোগ্য আর মিশনারি মানসিকতার রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয় না। লম্বাবুলির রাজনৈতিক বক্তৃতার আড়ালে ঢাকা পড়ে নেতৃত্বের ভেকধারী নেতাদের মানসিকতা ও জ্ঞানের দৈন্য। কোথাও কোনো পলিসির কথা শোনা যায় না।

 ঢাকার বহুকাঙ্ক্ষিত মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি মাথাচাড়া দিয়েছে পুরোদমে। নিজ দলের ‘বেয়াড়া’ ও ‘মুখরা’ মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সামাল দিতে বা ‘সাইজ’ করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা কায়দা-কানুন করছে। দলের অভ্যন্তরে মেয়র পদের দাবিদার অনেক মাশাল্লা-নেতা। ইমেজ সংকটে থাকা এই মাশাল্লাদের মনোনয়নে আম-ছালা দু’টোই যাবার আশংকা থাকে। অন্ততঃ চাটগাঁ ও নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের ফলাফল সেই সাক্ষ্যই দেয়।

নিপাট ইমেজের মান্না ক্ষমতাসীন দলের নিরাপদ প্রার্থী হতে পারতেন কিন্তু অহংবোধের কারণে দলীয় নেতৃত্ব মান্নাকে দলে টেনে নেবার বদলে মান্না-প্রজন্মের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে উস্কে দিচ্ছেন মান্নার বিরুদ্ধে। যেনবা মান্নাই আওয়ামী বিবেচনায় বিরোধী দল! প্রথমে শিরীন আখতারকে মাঠে নামিয়ে সন্তোষজনক ফলাফল বা ফিডব্যাক পেতে ব্যর্থ হয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মান্নার বিরুদ্ধে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানো হচ্ছে তারই দীর্ঘদিনের সহচর আখতারুজ্জামানকে।

প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা-আংকারা ফ্লাইটে নেয়া সিদ্ধান্ত বা এক্সপেরিমেন্টের সুবাদে ডাকসুর দুই সাবেক ভিপি আবদ্ধ রিংয়ে নামবেন ‘টিল ডেথ’ ফাইটে। আখতারও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নিয়েছেন। মধ্যিখানে রাজনৈতিক বলী মায়ার কপাল আরেক দফা পুড়লো। প্রধানমন্ত্রীর সংগে আংকারা সফরে থাকা বিশ্বস্ত সূত্র ভোররাতে এমনটা নিশ্চিত করেছেন।

মান্না এখনো প্রকাশ্য প্রচারে পোস্টার-ফেস্টুন নিয়ে নামেননি। নীরব এই প্রচারণা অভিযানে যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এতোই শংকিত হয়ে ওঠে, তাহলে মান্নার পুরোদমের প্রচারাভিযানে আওয়ামী প্রতিক্রিয়া হবে? ঢাকার মেয়র হবার একমাত্র যোগ্যতা এখন ক্লিন ও সৎ ইমেজ। আখতারের কোনো ইমেজ ঘাটতি না থাকলেও মান্নার বিপরীতে সেটা কাজ করবে কি না তা প্রশ্নবিদ্ধ। মান্নার বিরুদ্ধে নির্বাচনের সাইকোলজিক্যাল ফ্যাকটরটাও উপেক্ষা করার নয়।

যে কোনো বিচারেই মায়া-শিরিনের চেয়ে আখতারুজ্জামান উন্নত প্রার্থী; কিন্তু মান্নার বিরুদ্ধে আখতার কতটুকু কামিয়াব হবেন জানি না। তবে বিএনপি বা জাতীয় পার্টির প্রার্থী-মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে থাকবে মেয়র পদের ভাগ্য।

পাদটীকা : প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক পরামর্শকদের কেউ কেউ বিনা খাটুনিতে ও পুঁজিতে লাভের ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের যুক্তি, সরাসরি কাউকে সমর্থন না দিয়ে সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে দলীয় ‘সমর্থন পাবার’ প্রত্যাশায় রাখার মধ্যেই আওয়ামী লীগের লাভ বেশি। এতে দলে ভাঙনের আশংকা থাকবে না; উপরন্তু আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন দেওয়ার রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। সেই পরামর্শের অংশ হিসেবে আপাততঃ আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থন না দেবার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রার্থীদের নিজ দায়িত্বে জিতে এসে প্রমাণ করতে হবে তিনিই সেরা ও জনগণের পছন্দের।

এক্ষত্রে আওয়ামী লীগ প্ল্যান এ-বি-সি ইস্তেমাল করতে যাচ্ছে। উত্তরে আখতার ও শিরিন এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকন ও হাজী সেলিমকে নিজেদের মধ্যে ফয়সালা কিংবা পরস্পরকে পরাজিত করেই প্রমাণ দিতে হবে যোগ্যতার। তবে মান্না কিংবা ফিরোজ রশীদ বিজয়ী হয়ে এলে প্ল্যান সি অনুযায়ী মান্নাকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে আর ফিরোজ রশীদের সাফল্য দাবি করা হবে মহাজোটের পক্ষে।

[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ১২ এপ্রিল, ২০১২

সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।