ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

পাকিস্তান সফরকে না বলুন

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২
পাকিস্তান সফরকে না বলুন

পাকিস্তান হঠাৎ করে বিসিবির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) জানি-দোস্ত হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু পাকি দেশটি কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের সুখেদুঃখেও তারা পাশে দাঁড়ায় না।

একাত্তরের ক্ষততো আছেই, সর্বশেষ এই দেশটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে। তারা নিজেরাই জঙ্গি-মদদদাতা এবং জঙ্গি আক্রান্ত, আমাদের মতো শান্তিপ্রিয় দেশগুলোতেও ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গি সাপ্লাই দেয়, অথবা এখানে জঙ্গিরা বিপদে পড়লে আশ্রয় দেয় তাদের। লোটাস কামালের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার গ্রেনেড হামলার আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকেও আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ভেগে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাকিস্তানে! আর আওয়ামী লীগের এমপি লোটাস কামাল কেন এভাবে পাকিস্তানের দায়িত্ব নেবার জন্য উতালা-দিওয়ানা হয়ে গেছেন, তা জানতে হবে না?

ক্রিকেটার যারা খেলবে তারা পাকিস্তান যেতে চায় না। দলের নির্ভরযোগ্য এক ক্রিকেটার বলেছেন, তার পিতা হৃদরোগী। তিনি এখন এভাবে পাকিস্তান গেলে তার পিতার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কে এর দায় নেবে? সবচেয়ে অবাক ব্যাপার লোটাস কামাল এ নিয়ে বিসিবির সঙ্গে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেননি। দলের ক্যাপ্টেন, সহ-ক্যাপ্টেনকে খেলোয়াড়দের বোঝাতে বলেছেন। এটা কী এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া হলো? তাহলে কার সঙ্গে আলোচনা করে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে? আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তো তার এসব এলোমেলো লোকজনের কারণে ক্রিকেটের দলগঠনেও হস্তক্ষেপ করতে হয়! সর্বশেষ এশিয়া কাপের দল গঠনের সময় আকরাম খানের পদত্যাগ ফেরাতে আর তামিমের অন্তর্ভুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এখন দেশের বিরুদ্ধে বিরূপ একটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক-ক্রিকেটে-নিষিদ্ধ-গন্তব্য পাকিস্তানে জাতীয় দল পাঠাতে লোটাস কামাল প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অথবা সম্মতি নিয়েছেন কি না, তা জানা দরকার।

লোটাস কামাল যখন একা একা সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, তখনও আইসিসি বলছে তারা এখনও পাকিস্তানকে নিরাপদ দেশ মনে করছে না। সেখানে তাদের আম্পায়ার পাঠাবে কি না, সে সিদ্ধান্তও তারা এখনও নেয়নি। আর লোটাস কামাল বলে দিয়েছেন, আইসিসি আম্পায়ার পাঠাক আর না পাঠাক, বাংলাদেশ সেখানে যাবে! আর দুবাইতে বসে যখন সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলো সেদিনই পাকিস্তানের একটি জেলখানায় হামলা চালিয়ে ৪০০ জঙ্গিকে মুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। জঙ্গি মদদদাতা এই রাষ্ট্রটির এই জেল-পলাতক জঙ্গিরাও কি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে অভ্যর্থনার জন্য তৈরি হবে? যারা খেলার আয়োজনকে বেশরিয়তি মনে করে বলেই তাদের দেশে এসব আয়োজন বন্ধ করতে শ্রীলংকান ক্রিকেটারদের ওপর হামলা চালিয়েছে! সেই থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ একটি দেশ পাকিস্তান। দুনিয়ার কোনো ক্রিকেট টিম পাকিস্তানে খেলতে যায় না। পাকিস্তানের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচগুলো দুবাই-শারজাহ-আবুধাবির মতো কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হয়। পাকিস্তান যে এখনও মোটেই নিরাপদ না তা সবশেষ জেলখানায় হামলা চালিয়ে জঙ্গি বন্দিদের মুক্ত করে নেবার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতিতে অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত  তো অন্তত জঙ্গি রাষ্ট্রের কলঙ্ক বাংলাদেশের নেই। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যা-ই থাকুক, বাংলাদেশে অন্তত জেলখানায় হামলা চালিয়ে পাঁচশ জঙ্গিকে বের করে নিয়ে যাবার কথা কল্পনায়ও ভাবা যায় না। যা খুব স্বাভাবিক বিষয় লোটাস কামালের প্রিয় পাকিস্তানে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, খেলোয়াড়রা তাকে বলেছেন, তারা পাকিস্তানে খেলতে যেতে চায় না। যেখানে অন্য কোনো দেশ পাকিস্তানে খেলতে যেতে রাজি নয়, সেখানে বাংলাদেশকে কেন বলির পাঁঠা বানানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুর্জয়। তিনি সরকারের তরফ থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের চেয়ে তো ক্রিকেট বড় হতে পারে না, বলেছেন দুর্জয়। সরকারকে সতর্ক বলেছেন, ক্রিকেট টিমটাকে যাতে এ অবস্থায় এনে শেষ করে দেওয়া না হয়।

আমার মনে হয় পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনো নিরপেক্ষ কমিটি তদন্ত করে দেখা উচিত। কারণ লোটাস কামাল দেশের কোনো সফেদ চরিত্র না। দলকে যেনতেন ধরে বেঁধে পাকিস্তান নিয়ে গেলেই কী পাকিস্তান তাকে আইসিসির প্রেসিডেন্ট করে দেবে? না ব্যবসা বা অন্য কিছুর টোপ? পুরো বিষয়টি খোলাসা হওয়া দরকার। জানা দরকার পাকিস্তানের কাছে তার দায়টা কোথায়? আর অন্যদের অমতে বাংলাদেশ পাকিস্তান চলে গেলে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সহ আইসিসির প্রভাবশালীরা যে লোটাস কামালের স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে, সে গ্যারান্টি তাকে কে দিয়েছে? এর সঙ্গে দেশের মানষজনকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে অনুরোধ করবো। কারও লোভের কারণে যাতে দেশবাসীর প্রিয় টিমটার ছারখার না হয়, সে ব্যাপারে প্রতিবাদী-সোচ্চার হও বাংলাদেশ। পাকিস্তান সফরকে না বলুন।

ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২

সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।