ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যত গুজব

মনোয়ার রুবেল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১২
ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যত গুজব

আগে গুজব বাতাসে ছড়াতো। এখন গুজব ছড়ায় কম্পিউটারের মনিটরে।

ফেসবুক নেটওয়ার্কে গুজবের ছড়াছড়ি। ফেসবুকে বিভিন্নজনের স্ট্যাটাস দেখে মনে হয় তারা ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন, কেমন আছেন, শতভাগ নিশ্চিত। একজন লিখেছেন, ইলিয়াস আলী ডিজিএফআই কার্যালয়ে বন্দী। আরেকজন লিখেছেন, ইলিয়াস ইজ ফিনিশড। জিজ্ঞেস করলাম, কবে? তিনি উত্তর দিলেন- ২২ তারিখ রাতে। “সংবাদের উৎস কি?” “কেন জানেন না? এই খবরতো হাওয়ায় উড়তাছে”। “জানি । আর আপনি হাওয়া থেকে এই খবর ধরে এনে কম্পিউটারে ভরে দিছেন? বাহ! বেশ!”

হাওয়াই এখন খবরের উৎস। হাওয়ায় অনেক গুজব উড়ছে। ইলিয়াস আলী সম্পর্কে চলমান সবচেয়ে জনপ্রিয় গুজবটি হচ্ছে- ইলিয়াস আলী প্রথম হরতালের দিন রাত পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। ঐরাতে গোয়েন্দাদের সাথে মিসেস ইলিয়াসের আপোসরফার একটা চেষ্টা হয়েছিল। পরে, সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ধমক খেয়ে মিসেস ইলিয়াস আপোস রফার পথ থেকে সরে আসেন এবং সেই রাতেই ইলিয়াস আলীকে ফেলে দেওয়া হয়। (পাবলিক “মেরে ফেলেছে” বলে মজা পায় না। বলতে হয় “ফেলে দিয়েছে”। বলার সময় গলা কাটার ভঙ্গি করে মুখে শব্দ করতে হয়)। অবাক ব্যাপার হলো, এই গুজব বিশ্বাস করতে সবাই পছন্দ করছে। একজন লোক মারা গেছে তা শুনতে সবাই রোমঞ্চিত হচ্ছে! বিএনপি সমর্থকরা আন্দোলন চাঙ্গা করতে এটা বলছে তাই না, আওয়ামী লীগাররাও এটা বলছে। অবশ্যি তাদের বলার কায়দা কানুন ভিন্ন। তারা বলছে- খালেদা জিয়া তাকে প্রথম দুদিন নাকি লুকিয়ে রেখেছিলেন। আন্দোলন যেহেতু জমে উঠেছে তাই তাকে এখন বের করলেই বিপদ। তাই তাকে সাইজ করে দেওয়া হয়েছে।

গুজবের সত্য মিথ্যে জানি না। আমরা চাই গুজবই থাকুক, গুজব যেন সত্য না হয়। ইলিয়াস আলী দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন, “আপনারা দেখবেন যাতে আমার এই বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে না যায়। ” আমরাও চাই এই বাচ্চা দুটির জন্য হলেও ইলিয়াস আলী বেঁচে থাকুন।

অনুমানে একটা কথা অনেকেই বলছেন, ইলিয়াস আলী সম্ভবত বলির পাঁঠা হতে যাচ্ছেন বা হয়েছেন। ইলিয়াস আলী ফিরে না এলে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দুদলই লাভবান। বৃহত্তর সিলেটে ইলিয়াস আলী একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন। ইলিয়াস আলী ফিরে না এলে আওয়ামী লীগের সুবিধা। তাছাড়া তিনি সরকারের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থেকে থাকলে সেখান থেকে ফেরত আসার পর যখন তা ফাঁস হবে তখন সরকার আরো বেকায়দায় পড়বে। বিএনপির আন্দোলন গর্জে উঠবে। তিনি ফেরত না এলে বিএনপির জন্যও তা আরো লাভজনক। ইতিমধ্যে বিএনপি তিনদিন হরতাল দিয়েছে। একজন ইলিয়াস আলী জন্য চারজন খুন হয়েছেন। ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। জনজীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। বিএনপি আরো হরতাল দেবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এটিই কি সমস্যার সমাধান? না।
প্রধানমন্ত্রী না থাকায় সরকার কতোটা ভারসাম্যহীন এই ঘটনায় তা আবার দেখা গেল। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনা সামাল দেওয়ার জন্য কোনও রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায় নি। তৃতীয় দিনের মতো হরতালের ডাক দেওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের মতো অদূরদর্শী সিদ্ধান্তও হয়তো নিতে যাচ্ছিল সরকার। টকিং মাস্টার বলে খ্যাত কামরুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, হানিফরা গর্তে মুখ লুকিয়েছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া তাদের দু মিনিটও রাজনীতির যুদ্ধে টিকে থাকার যোগ্যতা ও সাহস নেই। আবার প্রমাণ হলো।

যা হোক, শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন। আশা করছি, তিনি অচলাবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নেবেন। বিরোধীদল যদি সত্যিই ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে সরকারকে কিছুটা সময় দেওয়া। আর সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজন বিরোধীদলের সাথে একটা আন্তরিক সমঝোতায় আসা। হরতাল ও সহিংসতা বন্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  উচিত হবে যেভাবেই হোক বিএনপির কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নেওয়া যাতে ইলিয়াস আলীকে খুঁজতে সুবিধা হয়। সত্যিই যদি ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করাই বিএনপির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আশা করি বিএনপি অবশ্যই সময় দেবে। রাষ্ট্রও অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা কাটিয়ে উঠবে।

মনোয়ার রুবেল
ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্লগার।
Email: [email protected]
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।