ঢাকা, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

পুলিশ যখন সাজিদদের পেটাচ্ছিলো, ফটো সাংবাদিকরা তখন ছবি তুলছিলো!

রাহাত মিনহাজ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২
পুলিশ যখন সাজিদদের পেটাচ্ছিলো, ফটো সাংবাদিকরা তখন ছবি তুলছিলো!

বাতাসে আগুনের হলকা। মাথার উপর ঠা ঠা রোদ।

এরই মধ্যেই শনিবার দুপুরে পুলিশের কুংফু-কারাতের শিকার তিন ফটো সাংবাদিক। কেউ এক পা তুলে চাইনিজ স্টাইলে, কেউ গ্রাম্য কায়দার গলায় গামছা দিয়ে হ্যাচকা টান দেওয়ার ঢংয়ে, কেউ আবার সাদা পোশাকে রংবাজ স্টাইলে। যে যেভাবে পেরেছেন ঝাল ঝেড়েছেন। সাংবাদিকদের উপর যেন জন্মের ক্ষোভ মিটিয়েছেন। মারতে মারতে রাস্তায় শুইয়ে দিয়েছেন। টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলেছেন। আর পুলিশের মুখে যে ভাষা (খিস্তি-খেউড়) শোনা গেছে তা,  কোন কালেই বা লেখার যোগ্য ছিলো!

বলতে দ্বিধা নেই... এ সব ঘটনা ঘটে ১০ থেকে ১৫ জন ফটো সাংবাদিকের সামনে ! যারা প্রতিদিন একসাথে বিভিন্ন অ্যাসাইমেন্ট কাভার করেন। গল্প করেন। সময় কাটাতে নানা খোশ গল্পে মেতে ওঠেন।   এতো কাছের সেই সব সহকর্মীর সামনেই পুলিশ তিন ফটো সাংবাদিককে এভাবে পেটালো। আর তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন! তুলতে তো হবেই, না হলে ছবি পাওয়া যাবে কিভাবে। সহকর্মীকে পুলিশের প্রহার থেকে বাঁচানোর চাইতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যাস্ত থাকলেন!

রোববারের দৈনিক পত্রিকাগুলো একবার দেখুন। সব পত্রিকায় এ ঘটনার একটাই ছবি। জাহিদ ভাইকে একদল পুলিশ `সাদরে আপ্যায়ন` করছেন! সাদা পোশাকধারী এক আপ্যায়নকারী (শ্রদ্ধেয় পুলিশভাই!) হাসিমুখে হাত-পা উঁচিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। আর আমাদের ক্যামেরাপার্সন ভাইরা ছবি সবাই এক সাথে ক্লিক করছেন।  

এই ছবির পেছনের কাহিনী এমন মনে হলেও ঘটনাটা আসলে তা ছিলো না। এ ঘটনার ছবি একদল ফটো সাংবাদিক তোলেননি। তুলেছেন শুধু খালেদ সরকার। যে ছবি তুলতে গিয়ে তিনি নিজে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে পত্রিকাগুলো দেখলে মনে হয়, পত্রিকার ফটো সাংবাদিক ভাইরা সকলেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একসাথে একই সময় দাঁড়িয়ে এ ছবি তুলেছেন।

রোববার প্রায় সব শীর্ষ পত্রিকায় তাদের নিজস্ব ছবি বলে এই ছবিটি ছাপানো হয়েছে। কেউ বলে নি এটি তাদের ছবি নয়। আমাদের সময় আরো এক ধাপ এগিয়ে। সে পত্রিকার ফটোসাংবাদিক আবু সুফিয়ানের নামে ‘ক্রেডিট’ দিয়ে ছবিটি ছাপা হয়েছে।

এই ছবিটি প্রতিটি পত্রিকায় ছাপা হওয়া অবশ্যই দরকার ছিলো। ছাপা হয়েছেও। তাতে কোনো আপত্তি বা প্রশ্ন নেই। তবে কষ্টটা অন্য জায়গায়।   ছবিটার ‘ক্রেডিট’ খালেদ সরকারকে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো? যিনি ছবিটার জন্য তপ্ত দুপুরে পুলিশের আঘাত সহ্য করলেন তাকে ক্রেডিট দিলে পত্রিকাগুলো কি, খুব ছোট হয়ে যেতো? নাকি অন্যান্য ফটো সাংবাদিকের চাকরি হুমকির মুখে পড়তো?

প্রত্যাশা, ওই ছবিটার ক্রেডিট যাতে অবশ্যই খালেদ সরকারের নামে দেওয়া হয়।

লেখক: রাহাত মিনহাজ, স্টাফ রিপোর্টার, এটিএন বাংলা

বাংলাদেশ সময় ১০৩৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২

সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর 

[email protected]
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।