ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘অন’ থাকতে অনলাইনে

তুষার আবদুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১২
‘অন’ থাকতে অনলাইনে

দুনিয়াটা এখন আর বোকা বাক্সের হাতে বন্দি নয়। দুনিয়া  এখন  বুদ্ধিদীপ্ত আন্তর্জালের মুক্ত বাতায়নে।

পৃথিবীর দিগন্ত সেখানে অসীম। সেই দিগন্ত যদি হয় গন্তব্য, তাহলে হতে হবে  চলতি হাওয়ার পন্থি। এজন্য নিজেকে ২৪ ঘণ্টাই ‘অন’ রাখতে হচ্ছে। আর যদি ‘অফ’ মুডে থাকি তাহলে বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। ‘অন’ মুডে থাকার উপায়? ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে, আন্তর্জালের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। যোগাযোগটা হবে নিরবিচ্ছিন্ন। এখন আন্তর্জালে ‘অন’ থাকা মানে- প্রতি মূহুর্তে আমি বিশ্বের সঙ্গেই আছি। বিশ্বের সঙ্গে থাকা, বা চারপাশ সম্পর্কে হালনাগাদ থাকার মূল কথাটা হচ্ছে, যে কোনো বিষয়ের তথ্য যেন আমার জানাশোনার গণ্ডির মধ্যে থাকে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই বাতায়ন থেকে আমি প্রয়োজনীয় তথ্যটি নিয়ে নিতে পারি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, বাতায়নে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য। সেই তথ্য প্রাপ্তি থেকে কেন পিছিয়ে থাকবো? তাই দিনমান থাকতে হবে ‘অন’।

আন্তর্জালে ‘অন’ থেকে তথ্য বাতায়নের দুনিয়ার নাগরিক হতে হলে অনলাইন গণমাধ্যমে বিচরণ করতে হবে। বিশ্ব গণমাধ্যম এখন এসে আটকা পড়ছে ‘আন্তর্জালে’। পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও- সবাই আন্তর্জালমুখি। এই মাত্র ধরিত্রীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানাতে অনলাইন গণমাধ্যমের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না সাবেকি মাধ্যমগুলো। যদি দৈনিক পত্রিকাকেই প্রথমে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনি, তাহলে দেখা যাবে ভোরে ১২-২৪ পাতার সংবাদপত্রটি যে খবরগুলো নিয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছলো তা বাসি খবরে ঠাসা।   বেশিরভাগই আগের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া খবর। তারপর থেকে প্রতি মূহুর্তে দুনিয়া বদলে গেছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন তথ্য। এমনকি যে খবরগুলো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর বেশ কয়েকটির ফলোআপ বা হাল নাগাদ তথ্য যোগ হয়েছে, এগুলো সহজেই জায়গা করে নিয়েছে অনলাইন পত্রিকাতে। পাঠকরাও সর্বশেষ খবরটির খোঁজ নিতে অনলাইন পত্রিকারই দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই বাস্তবতা অবশ্য দৈনিক পত্রিকাগুলো মেনে নিয়েছে। তাই অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে দৌড়ে টিকে থাকতে বিশ্বজুড়েই প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলো অনলাইন সংস্করণ চালু করেছে। এই সংস্করণটি ২৪ ঘণ্টা ‘অন’ রাখতে তাদের রয়েছে আলাদ কর্মীবাহিনী। এই অনলাইন সংস্করণে মূল পত্রিকার খবরগুলোর পাশাপাশি স্ক্রলের মাধ্যমে সর্বশেষ খবর দেয়া হয়। আবার বিশেষ বিশেষ খবরগুলোর বিস্তারিতও থাকে।   বিশ্ব এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা হচেছ অনলাইনের এই জোয়ারের মধ্যেও ভোরের দৈনিক বা বৈকালিক দৈনিকগুলো টিকে আছে। এর একটি গড়পড়তা কারণ হচ্ছে পাঠকদের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে সংবাদপত্র পড়ার অভ্যস্ততা বা বিলসিতা। আর বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশের বেলায় বলতে হয়- ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল অল্প পরিসরের জনগোষ্ঠীর কাছেই সহজলভ্য মাত্র। তবে তরুণ জনগোষ্ঠি দ্রুত অনলাইন পত্রিকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, এটা সুবাচক দিক।

এবার টেলিভিশনের সঙ্গে অনলাইন পত্রিকার প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে আসা যাক। টেলিভিশন ২৪ ঘণ্টার খবর প্রচার করছে। সেখানে নিয়মিত বুলেটিনের বাইরেও স্ক্রল বা টিকারের মাধ্যমে সদ্য তৈরি হওয়া খবরগুলো জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব বিবেচনায় ব্রেকিং আকারে সেই খবরগুলোর দিকে দর্শকের নজর কাড়া হচ্ছে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেলে চোখ রাখলেই খবর। তারপরও খবরের ক্রেতা ধরতে টেলিভিশনগুলো কেবল টিভি পর্দার উপর ভরসা রাখতে পারছে না। তাদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে অন লাইনের। প্রত্যেক ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেলেরই আছে অনলাইন সংস্করণ। এটা যেমন বিবিসি, সিএন এন’র আছে তেমনি আছে দেশীয় চ্যানেলগুলোরও।   টেলিভিশনে খবর-প্রতিবেদন প্রচারের পাশপাশি ওই অনলাইন সাইটগুলোতে ভিডিও ফুটেজও সংযুক্ত থাকছে। কথা হলো, টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী মাধ্যম কেন অনলাইনের আশ্রয় নিলো? উত্তর সবার জানা- প্রথমত টেলিভিশন যেখানে সেখানে, যখন-তখন বসে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু যে কেউ তার কাজের জায়গাটিতে যদি কম্পিউটার-ইন্টারনেট থাকে তাহলে অনলাইন সংস্করণটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন। এমনকি  সেলুলার ফোনেও অন লাইন পত্রিকা সহজেই পড়ে  নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসীদের কাছে টেলিভিশনটি পৌঁছে দেয়ার সহজ উপায় হচ্ছে অনলাইন সংস্করণ। আর তৃতীয় কারণটি টেলিভিশন হচ্ছে একটি মুছে যাওয়া মাধ্যম।   আজ যে খবরচিত্রটি প্রচারিত হলো, তা আগামীকাল প্রচার হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু অনলাইন সংস্করণে ঐ খবরচিত্র দেখার সুযোগ দীর্ঘদিন রয়ে যায়।

অনলাইন পত্রিকাকে এখন আর বিকল্পধারার গণমাধ্যম বলার সুযোগ নেই। মূলধারায় চলে এসেছে এই মাধ্যমটি। মেধাবী সাংবাদিক আলমগীর হোসেনের (বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ) নেতৃত্বে বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম দিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল অনলাইন পত্রিকার যাত্রা। এখন বলা যায়, এই মাধ্যমটিতে বাংলাদেশে বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে পরিচিত হতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এবং বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমসহ দু’একটি ছাড়া অন্য অনলাইন পত্রিকার উপর পাঠকরা আস্থা রাখতে পারছেন না। এই দুটি অনলাইন পত্রিকাতেই পেশাদারি সাংবাদিকতার চর্চাটি হচ্ছে। বলা যায়, এর আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যই মূলধারার সাংবাদিকতা। কিন্তু অন্য অনলাইন পত্রিকাগুলোর বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ড দৈনিক পত্রিকার রূপ ধারণ করে বসেছে। তাদের উদ্দেশ্য-বিধেয় বিশেষ গোষ্ঠীর প্রপাগান্ডা বা অনলাইন পত্রিকাটিকে ক্ষমতা বা ব্যবসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। তবে এর মাঝে কোনো কোনো তরুণ দল অনলাইন পত্রিকাকে মুক্ত খবরের মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইটাও চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি আছে। কারণ অনলাইন পত্রিকায় বিনিয়োগটা যেমন সহজলভ্য হয়নি তেমনি বিজ্ঞাপনদাতারাও এই মাধ্যমটিকে এখনও ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তবে  দেশে অনলাইন পত্রিকার  জোয়ার ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। কিন্তু এই জোয়ারকে ধরে রাখতে হলে, আন্তর্জাল বাসিন্দাদের কাছে পত্রিকাগুলোর আস্থাভাজন হতে হবে। এখন অনেক অনলাইন পত্রিকার দেওয়া খবরই মূহুর্তের মধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। অনলাইন পত্রিকার খবর যদি হয় সামাজিক সাইটের মতো কৌতুককর। তাহলে তার গাম্ভীর্যটাই নষ্ট হয়ে যায়। একথা ঠিক,  এখানে পেশাদার সাংবাদিকতা আরও নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে অনলাইন পত্রিকার জন্য এখনও কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। অনলাইন পত্রিকাবান্ধব নীতিমালা তৈরি হলে এখানে ছত্রাক জাতীয় গোষ্ঠিগুলো সটকে পড়বে নিশ্চিত। আর তখন তথ্য-বাতায়নে ‘অন’ থাকাটা হবে অনেকটাই সংশয়মুক্ত!

লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, সময় টেলিভিশন
/এডিএ সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।