ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ক্লিনহার্ট’ এবং ‘ক্লিন হার্ট’

জাহিদ নেওয়াজ খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১২
‘ক্লিনহার্ট’ এবং ‘ক্লিন হার্ট’

নামে ভিআইপি রোড, অথচ শাহবাগ থেকে বাংলামোটর হয়ে ফার্মগেট সড়কে সবসময়ই যানবাহনের ভিড়। ব্যস্ত সময়ে সেই ভিড় আরো বাড়ে, যানজটে সড়ক হয়ে যায় প্রায় কচ্ছপগতির।

বছর তিনেক আগে এরকমই এক সন্ধ্যায় আবিষ্কার করলাম আমাদের ডানপাশে হোমড়া-চোমড়া কোনো মন্ত্রীর গাড়ি। তার সামনে পুলিশ, পেছনে পুলিশ; ডানে-বামেও পুলিশ। প্রটোকল দেখেই নিশ্চিত হওয়া গেলো, যে মন্ত্রী যাচ্ছেন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

অন্ততঃ আগে যাওয়ার সুযোগ দিতে হয় বলে রাস্তায় মন্ত্রী কাউকে চলন্ত প্রতিবেশী হিসেবে দেখলে খুব আরামবোধ হয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলে তো কথাই নেই, কারণ স্বাভাবিক কারণেই পুলিশ তাদের মন্ত্রীকে আগে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে কখনো বাড়াবাড়িও করে। কিন্তু এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেলো। আনন্দের কারণ এই না যে পুলিশ কোনো বাড়াবাড়ি করছে না। গাড়িতে যিনি বসে আছেন তিনি আমার খুব প্রিয় সেই কারণেও আনন্দ না। আনন্দ এই কারণে যে, পুলিশ যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রটোকল দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তিনি সাহারা খাতুন।

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, সাহারা খাতুন এভাবে পুলিশ প্রটোকলে চললে আনন্দের কারণ কি? বিশেষ করে সেই রিপোর্টারদের কাছে উত্তরটা খুব সহজ, যারা সাহারা খাতুনকে অনেকদিনই ফার্মগেট এলাকায় হরতালের সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন, যে পুলিশ তাকে পিটিয়ে রাস্তায় শুইয়ে দিয়েছে, সেই পুলিশই যখন তাকে নিরাপত্তা আর প্রটোকল দিয়ে একই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায় তখন রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের যে জয় ঘোষিত হয় তা অনেক আনন্দের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সাহারা খাতুন পরে অনেক সমালোচিত হয়েছেন, এখন তিনি টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। আর তার জায়গায় এসেছেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। দু’ জনের মধ্যে পার্থক্য হলো, সাহারা খাতুন রাজনীতির মধ্যেই বেড়ে ওঠা এক মানুষ; আর মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রশাসনযন্ত্রে থেকে রাজনীতির ছোঁয়া পেয়ে পেয়ে রাজনীতিক।

১৯৬৫ সালে সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনে যোগ দেওয়া ড. আলমগীর আমলাতন্ত্রে পরিচিত এক অফিসার ছিলেন অনেক আগে থেকেই। তবে সাধারণের কাছে তার পরিচিতি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তুমুল আন্দোলনের সময় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নেতৃত্ব দিয়ে জনতার মঞ্চে যোগদানের মাধ্যমে। আর প্রশাসনযন্ত্রের ওই অবস্থানটাই ছিলো ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের কফিনে শেষ পেরেক।

পরে সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। সেসময় গঙ্গার পানিচুক্তি এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তি সইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

সরকারি চাকরি শেষে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হন। সম্ভবত ১৯৮০ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত উগান্ডার অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে তার যে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা, ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখেই ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। এক্ষেত্রেও তিনি সফল। মূলতঃ তার নেতৃত্বেই প্রণীত হয় বাংলাদেশের ৫ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।

তবে বাংলাদেশের মতো আধা-গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিকের যে যন্ত্রণা মহিউদ্দীন খান আলমগীর প্রথম তা টের পান ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর। ২০০২ সালে কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হলে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। পরে অবশ্য জনতার মঞ্চে যোগ দেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ড. আলমগীরের কারাজীবনপর্ব অবশ্য বিএনপি আমলেই শেষ নয়। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তাকে গ্রেফতার করা হলে আবারো নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এ পর্যায়ে তাকে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। তবে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও মন্ত্রিসভায় ডাক পাননি তিনি। সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের   রোষানলে পড়ে নির্যাতিত হলেও কথিত সংস্কারপন্থীদের মতো তাকেও মন্ত্রিসভার বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দু`একজন কথিত সংস্কারপন্থীর মন্ত্রী হওয়া অথবা মন্ত্রিত্বের আমন্ত্রণ জানানোর সমান্তরালে ড. আলমগীর মন্ত্রী হয়েছেন।

ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পালায় সেখান থেকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে সরে যেতে হয়েছে। কিন্তু ব্যর্থতার কারণে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তিনি যে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তা-ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এখনকার প্রযুক্তির এই যুগে টেলিকম মিনিস্ট্রির গুরুত্ব অনেক। অনেকে মনে করেন, সাহারা খাতুনের জায়গায় মহিউদ্দীন খান আলমগীরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসা মানে সরকারের কিছু ইচ্ছা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। বিশেষ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আন্দোলনের আশংকা সরকার করছে, তা সফলভাবে মোকাবেলা করা পরিকল্পনা থেকেই তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে।

তবে ড. আলমগীরের জন্য দুর্ভ্যাগ্যের বিষয় হলো, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সেসময় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার উত্থান, এখন সেই তত্ত্বাবধায়কের জন্য সম্ভাব্য  আন্দোলন মোকাবেলা করতে হবে তাকে;----- রাষ্ট্রের সশস্ত্র কর্মচারী পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি দিয়ে।

এর আগে আমরা দেখেছি, পুলিশের হাতে বারবার নির্যাতিত সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর পুলিশের একইরকম জুলুম-নির্যাতনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কিছুটা নরম হলেও একই  সুর নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরের কণ্ঠেও। বিশাল সাফল্যের সঙ্গে কিছু ঘটনার জন্য সমালোচিত র‌্যাবের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে তিনি বলেছেন, ``আইন প্রয়োগের সময় কারো মৃত্যু হলে সব মৃত্যুকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বলা যাবে না। ``

নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা সত্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কেউ গুলি করলে আত্মরক্ষায় তারাও গুলি করবে, সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু ‘ক্রশফায়ার-এনকাউন্টার-বন্দুকযুদ্ধের’ গল্পগুলোতো পুরো বাংলাদেশের জানা। ওই গল্পগুলো নিশ্চয়ই তারও অজানা নয়। সমস্যা হলো, যে মানুষ প্রকৃত একজন সন্ত্রাসীর এনকাউন্টারে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, সেই মানুষই প্রতিবাদে মুখর হয় লিমনের মতো নিরীহ কেউ র‌্যাবের গুলিতে পঙ্গু হয়ে গেলে।

আবার  ড. আকবর আলি খানের মতো নাগরিক সমাজের যে নেতারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে প্রতিদিন প্রশ্ন তোলেন, সেই তারাই আবার গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, দুদককে দিয়ে হলমার্কের টাকা আদায় হবে না; সেজন্য অভিযুক্তদের র‌্যাবের রিমান্ডে পাঠাতে হবে।

বিষয়টা তাই জটিল। বত্রিশ  বছর প্রশাসনযন্ত্র চালানো এবং এরপর চার বছর মন্ত্রিত্ব করা ড. আলমগীরও জানেন, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না। লুৎফুজ্জামান বাবররা অপরাধীদের সরাসরি খুন করে শায়েস্তা করতে যে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, তার যে রাজনৈতিক অপব্যবহার তার শিকারতো ড. আলমগীর নিজেই। সেই তিনিই যখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে আইনি ভাষায় সাফাই গান, তখন কিন্তু এসব  বাহিনী যা-খুশি-করার-লাইসেন্স পেয়ে যায়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকার পরও নাগরিক বোধসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে মহিউদ্দীন খান আলমগীর তার পূর্বসূরীদের মতো সেই ব্ল্যাংক চেক দেবেন কি না, এখন এটা তার বিষয়।

তবে র‌্যাবের সঙ্গে বৈঠকেই আগের সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০২-০৩ সালে সেনাবাহিনীর যে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’, সেসময়ের  বিচারবহির্ভূত সবক`টি হত্যাকান্ড তদন্ত করে তার মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ জানানোর কথাও বলেছেন তিনি।

মূলতঃ বিরোধীদল দমনের উদ্দেশ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির নামে ওই অপারেশন চালানো হয়। ২০০২ সালের ১৭ অক্টোবর অপারেশন শুরুর দিনই গ্রেফতার ৫০০ জনের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থাকায় প্রথমদিনই ওই অভিযানের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। পুরো অভিযানে শত শত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর সঙ্গে সেসময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরীকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেনাবাহিনী।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, অভিযানে নিহত হয় কমপক্ষে ৪৪ জন, তবে সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় ১২ জনের কথা। আর ওই মৃত্যুগুলোর কারণ হিসেবে ‘হার্ট-অ্যাটাকের’ দাবি করা হয়। ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা ‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’ গ্রেফতারের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১১ হাজার, এদের মধ্যে সন্ত্রাসী তালিকায় ছিলো ২,৪০০ জন।

‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ যে ভিন্নমত দমনের একটি অস্ত্র ছিলো তার আরেক প্রমাণ ময়মনসিংহে সিনেমাহলে বোমা হামলার ঘটনার পর ড. মুনতাসীর মামুন এবং শাহরিয়ার কবীরের মতো লেখক-বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার। একে তো সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন অবস্থায় ওই রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছিলো, তার ওপর  গ্রেফতার করা হয়েছিলো লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের। পরে প্রমাণ হয়েছে সিনেমাহলগুলোতে জঙ্গিরা হামলা করেছিলো। আর গ্রেফতার করা হয়েছিলো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যারা বেশি সোচ্চার তাদের।

তবে এখন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন করে ওই ‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে তদন্তের কথা বলছেন, তা নিয়ে আইনি জটিলতা আছে। কিছু বিভাগীয় অ্যাকশনের কথা জানা গেলেও ২০০৩ সালে জাতীয় সংসদে দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ওইসব হত্যাকান্ড থেকে দায়ীদের সব অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও অবশ্য ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার অসম্ভব নয়। এরই মধ্যে অধ্যাদেশটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল হবে কি না, আর হলে ডক্টর মহিউদ্দীন খান আলমগীরের পরিকল্পনামতো তদন্ত হবে কি না সময়ই তা বলে দেবে। তবে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ হলেই যে পার পাওয়া যায় না তার বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই অধ্যাদেশ বাতিল হওয়ার পর বিচারে খুনিদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে, ধরা পড়লে পালিয়ে থাকা খুনিদেরও  ফাঁসির দড়ি গলায় পরতে হবে।

‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’ যে প্রায় অর্ধশত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে তার বিচার কোনোদিন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে তদন্তের কথা বলে ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর অবশ্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে একটি বার্তা দিতে পেরেছেন। তা হলো কোনো সরকারের আমলে অন্যায় আচরণ করে ওই সরকারের আমলে পার পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। আমরা ধরে নিতে চাই সচেতনভাবেই তিনি এই বার্তা দিয়েছেন।

‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’র সূত্র ধরে এই বার্তায় বিশেষ করে র‌্যাবের হৃদয় শুদ্ধ করার সুযোগ এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি র‌্যাবকে সেই সুযোগ দেবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত তার। তবে নাগরিকবোধসম্পন্ন ড. আলমগীরের কাছে অনেকে সেই আশা করেন যে অন্তত লিমনের মতো ঘটনা আর ঘটাতে পারবে না র‌্যাব। কিন্তু তার সরকার তাকে সেই সুযোগ কতোটা দেবে তা নিয়ে সন্দেহ এবং প্রশ্ন অনেক।

একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদলের আন্দোলন দমনে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি কী আদেশ দেন, কিভাবে তার বাস্তবায়ন ঘটান; আর সেই সময় তিনি কতোটা শুদ্ধ হৃদয় এবং নাগরিক চেতনার পরিচয় দেন সেটাও দেখার অপেক্ষায় অনেকে।

জাহিদ নেওয়াজ খান: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল আই

বাংলাদেশ সময় ১৭৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১২
সম্পাদনা:জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।