ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রয়োজন মেগাপ্রজেক্ট

ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
প্রয়োজন মেগাপ্রজেক্ট

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যেখানে বিভিন্ন মাধ্যম, ধরন ও প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মতো বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর অন্তর্ভুক্ত।

 

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই স্তরের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে পরিচালিত হয়, যার ফলে সরকারের তত্ত্বাবধান অত্যন্ত সীমিত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে; তবে এই বিদ্যালয়গুলোর কাঠামো, পরিবেশ, শিক্ষার মান ও পরিচালন পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই।

এই বিদ্যালয়গুলোর অনেকাংশ মানসম্মত শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করতে ব্যর্থ। শিশুদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ছোট, জনাকীর্ণ শ্রেণিকক্ষে, যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল, খেলার জায়গা ও মৌলিক অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর ও সীমাবদ্ধ পরিবেশ শিশুদের শেখার জন্য এক নেতিবাচক অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায়ও উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য রয়েছে, যেখানে সরকারি বিদ্যালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় এবং কওমি মাদরাসা অন্তর্ভুক্ত।

যদিও এই বৈচিত্র্য উপকারী হতে পারে, যেমন—এটি পছন্দের স্বাধীনতা প্রদান করে, তবু এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। শিক্ষক, সুযোগ-সুবিধা সবচেয়ে বেশি দেওয়া দরকার প্রাথমিকে। অন্য দেশের তুলনায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে টারশিয়ারি লেভেল পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশে খুবই কম।

বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায়ও উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য রয়েছে, যেখানে সরকারি স্কুল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা ও ক্যাডেট কলেজ অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ক্যাডেট কলেজগুলোকে অভিজাত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং তারা অত্যধিক পরিমাণে সরকারি বরাদ্দ পাচ্ছে।

এই পদ্ধতি শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একটি কাঠামোগত বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, কারণ সরকার ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি বিভাজনমূলক ব্যবস্থা তৈরি করেছে। একটি ন্যায়সংগত সমাজে সরকারের দায়িত্ব হলো সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমান সুযোগ ও বরাদ্দ নিশ্চিত করা। মাধ্যম বা ধরনের পার্থক্য নির্বিশেষে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ সুবিধা ও সহায়তা প্রদান করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা সমান মানের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

এই বৈষম্য দূর করতে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমান সুযোগ প্রদান করছে এবং সব পটভূমির শিক্ষার্থীরা একই স্তরের যোগ্যতা অর্জন করছে।

ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।