ঢাকা: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে আমার একাত্ম হওয়ার কারণ ছিলো শুধুই বিগত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর উগ্র বাস্তবায়ন, বিচার বহির্ভূত হত্যা-গুমের মতো অপরাধ যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো।
জুলাই গণভ্যুত্থানে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো একটি বিশেষ ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে সমান্তরাল অন্যান্য ন্যারেটিভকে প্রাধান্য দেয়া।
১৯৭১কে পরম্পরা ধরেও ওইসব ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা যেতো। '৭১ আওয়ামী লীগ বা হাসিনা লীগের একার না। সে ইতিহাস আমরা প্রত্যেকে জেনেও ১৬ বছর উচ্চকণ্ঠ হইনি। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগের দখল করা মুক্তিযুদ্ধের এইসব চেতনা, ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদের আদলে বাঙালি জাতীয়তাবাদকরণ, হিন্দু-মুসলমান বিরোধ এ সবকিছু জেনেও জনতার সঙ্গে একটা বিষয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম— সেটা হলো ৭৫ এর অগাস্টের ঘটনা। আজ বলতে বিব্রত হচ্ছি, শুধু একটা প্রশ্নই বিব্রত করছে— ৭৫ এর নৃশংসতা কেন অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছিল? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বারবার প্রমাণ করলেন যে, ৭৫ থেকে তিনি কোনো শিক্ষা নেননি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আমি প্রথাবিরোধী আন্দোলন হিসেবে এইজন্য চিহ্নিত করি কারণ এখানে একটি বয়ানের সমান্তরালে নানাবিধ বয়ান কমন প্ল্যাটফর্ম পেয়েছিলো—যা পরবর্তী সময়ে একদফা দাবিতে পরিণত হয়। আমাদের ছোটোকাগজ আন্দোলনের এই ৪০ বছরে আমরা অন্তত কয়েকজন চেয়েছি একটা সাহিত্য সমাজ—যাদের একটা কমন এগ্রিমেন্ট থাকবে। এমনকি যারা নিবেদিত লেখক এবং মননের ব্যাপ্তি নিয়ে অন্যান্য মিডিয়াতেও লেখেন— আমি ছোটোকাগজের লেখক হয়েও— তাদের কখনো অসম্মান করিনি। আমার মিডিয়ার দিকে না যাওয়ার কারণ হিসেবে যেমন আদর্শের দিক রয়েছে তেমনি এটাও সত্য, যে শ্রেণির মানুষের প্রতি আমার পক্ষপাত সে ধরনের লেখা মিডিয়ার খোরাক জোগাতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার নামে আমার কিছু লেখার অংশ নিয়ে, বিভিন্ন দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছত্রছায়ায় কেউ কেউ আমাকে এমনভাবে ‘কাল্ট’ বানিয়েছে যাতে রাষ্ট্রের শিল্প-সাহিত্যের নানাবিধ কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে আমার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে না পারি। এতে তাদের অস্তিত্বের ভিত কিছুটা হলেও নড়ে যায়। একদিন তারা স্বাবলম্বী হবেন নিশ্চয়ই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আমার কিছু কথা বলা জরুরি। এমন কিছু বিষয় আছে যা এই মুহূর্তে বলা দরকার। কারণ এখন যা হচ্ছে তা দুঃসহ। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা না-বুঝে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার নাম করে আমার মতামত, চিন্তা-ভাবনা জনগণের কাছে পৌঁছাতে না পারুক এটা অনেকের কাম্য ছিলো। তাদের মননের ঊনতা দেখে সহমর্মিতার জায়গা থেকে এতোদিন নীরব ছিলাম।
আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমি কিছুটা পথ-নির্দেশনা দিতে পারি। সেটা গ্রহণযোগ্য হতেই হবে এমন প্রত্যাশা আমার নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আমি কখনোই নিবিষ্ট হয়ে কথা বলার জায়গা মনে করি না।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট মিডিয়ার কেউ যদি প্রয়োজন মনে করেন আমার সঙ্গে কথোপকথনে আসতে পারেন। আগেই বলে রাখা ভালো, আশা করি এর বিনিময়ে কোনো কলাম লেখা বা আমার সৃজনশীল লেখা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা করবেন না। আর অন্য কোনো বিশেষণে নয়, সাহিত্যে ৪০ বছর পার করা একজন লেখকের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করাও নির্ভীক সংবাদপত্রের দায়িত্ব বলে মনে করি।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫
এএটি