ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি প্রসঙ্গে

সুদীপ্ত দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৫
মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি প্রসঙ্গে ...

একজন ডাক্তার দেশ জাতি তথা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানবিক গুণসম্পন্ন ডাক্তার তৈরি হওয়া প্রিয় মাতৃভূমির জন্য বড়ই দরকার।

এই উপলব্ধিবোধ আশা করি সারাদেশে সচেতন জনগোষ্ঠির মাঝে অবশ্যই নাড়া দেবে। একজন ডাক্তার তৈরি হওয়ার পথে যে সমস্ত বাধা বিপত্তি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে, তা পরিহার হওয়া বাঞ্চনীয়।

দেশে মেডিক্যাল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিক্যাল কলেজ আছে। সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে মোট আসন ৫৪৫টি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। আর ভালো কলেজে ভর্তি হয় তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।

কোটা পদ্ধতি: যে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন হলো, মেধার সর্বত্র মূল্যায়নের জন্য সেই কোটা পদ্ধতি সবদিক থেকে বাদ দেওয়া দরকার। কোটার সুবিধা নিয়ে যে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের  কম পেলো, সে কিভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো একটা শাস্ত্র অধ্যয়ন করবে?

জিপিএ পয়েন্ট বিবেচনা: এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র ভিত্তিতে যে নম্বর কর্তন করা হয়, তা বিশেষভাবে ভাবা দরকার। কেননা করোনাকালীন সময়ে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ৩ বিষয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হওয়া এবং ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এইচএসসিতে অটোপাস দেওয়ার কারণে জিপিএ মার্কের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বিধায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ পয়েন্ট এর বিষয়টা পুনঃবিবেচনা করা দরকার।  

নম্বর কর্তন: মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কর্তন পরীক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই পদ্ধতি পরিবর্তন করা দরকার।

পরীক্ষার সুযোগ ৩ বার: এমবিবিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বিসিএস পরীক্ষার মতো কমপক্ষে ৩ বার হওয়া উচিত। এতে কোনও কারণে একবার ব্যর্থ হলে ২য় বা তিনবার মিলতে পারে সাফল্য।

প্রাইভেট মেডিক্যালের লাগাম টানা: প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ার জন্য বিশাল অংকের টাকা দরকার। এতে দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সন্তানদের ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছে অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা দিয়ে ডাক্তারী পড়তে হলে সেই টাকা ডাক্তার হওয়ার পর তুলে নেওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়া এবং সরকারি মেডিক্যালে পড়া নিয়ে বৈষম্য এবং খরচের তারতম্য থাকলে মেধার বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়বে। যদি প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়ার খরচ কমানো না যায়, তবে ভর্তি ফি এবং সেমিস্টার ফি ৩ কিস্তি থেকে বাড়িয়ে ১২ কিস্তি করা দরকার। এর সাথে পড়ুয়াদের সুবিধার্থে সরকারিভাবে ভর্তুকি এবং সুদ ছাড়াই ব্যাংক লোন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার।

আসন সংখ্যা বৃদ্ধি: ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। সারাদেশে জনসংখ্যা অনুযায়ী ডাক্তারের যে চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী সরকারিভাবে ডাক্তারী পড়ার জন্য মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের আসন সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি করলে ক্ষতি নেই।

ভর্তি বাণিজ্য: সরকারি ও বেসরকারিভাবে আনুমানিক ১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেলেও ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করানো অপ্রয়োজনীয়। এটা ভর্তি বাণিজ্যের সুযোগ করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে অনুরোধ, ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ভর্তি ব্যবস্থা নিয়ে একটা কিছু করুন, যাতে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয়।  

লেখক: শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৫
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।