ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

মুক্তমত

দেশে সুশীল সংকট

গোলাম রাব্বানী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২৩, মে ২৯, ২০২৫
দেশে সুশীল সংকট

সুশীল সমাজ বলতে সমাজের বিশিষ্টজনদের বোঝানো হয়ে থাকে। যারা দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করে থাকেন।

বিভিন্ন সময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার থাকতেন। বিগত সময় বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমও তাদের বক্তব্য প্রচার করেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিবেকের তাড়নায় অথবা গণমাধ্যমের প্রয়োজনে কেউ কোনো কথা বলছেন না।  

বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার সুশীল ব্যক্তির অভাব ছিল না। এখন তারা সবাই চুপ হয়ে গেছেন। নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে যারা কথা বলতেন তাদের প্রায় সবাই বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টে আছেন। সে কারণে এখন গণমাধ্যম খুঁজে পাচ্ছে না সুশীলদের।  

সমাজের বিশিষ্টজন বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. আহসান এইচ মনসুর, ড. আলী রীয়াজ প্রমুখ।  

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কেউ উপদেষ্টা হয়েছেন, কেউ কেউ সংস্কার কমিশনে স্থান পেয়েছেন। যে কারণে সরকারের বাইরে থেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের সংখ্যা কমে গেছে। হাতে গোনা দু-একজন ব্যক্তি ছাড়া বিশেষ কোনো ইস্যুতে বক্তব্য নেওয়ার গ্রহণযোগ্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।  

এদিকে রেহমান সোবহান বর্তমানে বিভিন্ন একাডেমিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কাসেম ফজলুল হক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখছেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আলী রীয়াজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে ছিলেন। বর্তমানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রয়েছেন। ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  

এছাড়াও আহসান এইচ মনসুর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনিও সরকারের সঙ্গেই রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘরানার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হারুন-অর-রশিদ, ড. মীজানুর রহমানসহ অন্যদের খবরও মিলছে না। অর্থতৈনিক সংকট, ব্যবসায়ীদের হয়রানি, দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা এবং নারী অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যুতে দীর্ঘকাল ধরেই সোচ্চার ছিল সুশীল সমাজ।  

রাজনৈতিক দল এমনকি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতেও তাদের ভূমিকা আলোচনায় এসেছে নানা সময়ে। কিন্তু সুশীল সমাজের সেই ‘শক্তিশালী কণ্ঠ’ ক্রমেই ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান সংকট নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার আগের কয়েক বছরেও নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেওয়া এবং রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে বেশ সংঘবদ্ধ হয়ে উঠেছিল সুশীল সমাজের একটি অংশ। তারও আগে বিশেষ করে আশি ও নব্বইয়ের দশকে দেশের বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা ইস্যুতে যে দলবদ্ধ বক্তব্য বা বিবৃতি দিতেন তা আলোচনার ঝড় তুলে ছিল। আবার এরশাদের পতনের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মোট তিনটি আমলেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জোটবদ্ধ থেকে শক্তি দেখিয়ে জনস্বার্থে কথা বলেছে সুশীল সমাজ।  

বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবতা হলো এখন অনেক ঘটনাতে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বরং খুব একটা দৃষ্টি দিতে চান না বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার যারা কথা বলার চেষ্টা করেন তাদের অনেককে সংগঠিত আক্রমণের মুখে পড়তে হয় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।  

অনেকের মতে, বাংলাদেশে সেই অর্থে সুশীল সমাজ কখনো তৈরিই হয়নি বরং সামরিক শাসনের অবসানের পর রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়ে সুশীল সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তির রাজনৈতিক চরিত্র পরিষ্কার হয়ে গেছে। নানা কারণে চুপসে গেছে অনেকেই। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ বিভিন্ন পক্ষভুক্ত হয়ে গেছে। সংকুচিত হয়েছে জাতীয় স্বার্থে কথা বলার সুযোগও।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।