ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মধ্যপন্থা নয়, চাই গভীর দেশপ্রেম

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১২
মধ্যপন্থা নয়, চাই গভীর দেশপ্রেম

ইদানীং একটা বিষয় দুর্বোধ্য ঠেকছে। বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, ছাত্রলীগের মস্তানি, ব্যাংক লুটপাট বা অন্যান্য বিষয়ে ভরাডুবির সমালোচনা করি।

পরিবারতন্ত্রের প্রতি আমার কোনো সমর্থন নেই, সমর্থন নেই স্তাবকতা বা চামচামিতে। গণতন্ত্রের উদ্ভাস আর অসাম্প্রদায়িকতা চাই বলেই দেশের ওপর চেপে বসা যাবতীয় অপমানেরও প্রতিকার চাই।

আজকাল যে কোনো আড্ডা বা সভায় আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার নামে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান প্রকারান্তরে রাজাকারতন্ত্রের প্রতি সমর্থনে সত্যি বিরক্ত হয়ে উঠছি। প্রবাসে পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশে বসবাসের পর ও এমন আচরণ অদ্ভূত. দেশে ও দেখছি সরকার বিরোধিতার নামে "আসিফ নজরুলীয়" টকশোর বিস্তার। এরশাদের পদাংক অনুসরণকারী এই অধ্যাপক এখন গুরু এরশাদের প্রশংসায় ও পঞ্চমুখ. ইচ্ছেমত যাকে তাকে অপমান করছেন, ইতিহাসের বারোটা বাজাতে চাইছেন।

এদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে নব্য রাজাকারতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধীদের বয়কট করার বিকল্প দেখছি না। এরা যখন প্রকাশ্য ও মুখর হচ্ছেন, মার্জনা চাওয়ার পরিবর্তে দাপট দেখাতে বেরিয়ে আসছেন, তখন আমাদেরও সোচ্চার হতে হবে।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, দেশের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের ফসল জন্মভূমির ইজ্জত বাঁচাতে। এটা স্পষ্ট সরকারের ভেতর এখন অস্হিরতা চলছে। একমুখি হলে যা হয় তা-ই। সবকিছু নেত্রীনির্ভর হলে ঘন্টা বাঁধার কাজ ব্যাহত হবে এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সংগ্রাম ও উজ্জ্বল নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন করলেও আজ তার ভেতর নেতৃত্বের সংকট চলছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাই তার প্রমাণ। তিনি যখন যা খুশি বলছেন কিনতু দল নিশ্চুপ। দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করার পরও এমন বক্তব্য রাখতে পারা এবং তা মেনে নেবার অর্থ বোঝা মুশকিল। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ড. কামাল বা কাদের সিদ্দিকীর বেলায় এই ধৈর্য কোথায় ছিল?

তা ছাড়া শোনা যায়, জামায়াত-শিবিরের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানোর মানুষ দলের ভেতর কিলবিল করছে। শ্রুত যে, একেবারে উপরের স্তরেও জামায়াতের প্রতি দুর্বল আর মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদারদের সহযোগিতাকারী নেতাও আছেন।

এই দ্বৈত চরিত্র আওয়ামী লীগকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিয়েছে। এর প্রমাণ টকশোগুলোয় আওয়ামী লীগারদের অসহ্য ও উগ্র আচরণ। যুক্তি তর্কের পরিবর্তে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে তারা আজ জন-সমর্থনহীন।

সে সুযোগে উঠে আসা আসিফ নজরুলরা বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তির স্বপ্ন দেখছেন. একবার লেজে গোবরে হবার পরও তাদের আশা মরেনি। এবার তারা খামোখা এরশাদের সমর্থন করছেন ভাবলে বোকামী হবে।

কিছুদিন আগে বিজয় দিবসে ১/১১-র অন্যতম এক প্রণেতার সাথে কথা হচ্ছিল। জানলাম দল ছাড়তে ভয় পায় বা সংস্কারপন্থী হবার ভয়ে ভীত নেতাদের ওপর ১০০% নির্ভর করবেন না তারা। গেল বার এসব নেতা এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়ে পড়ায় শেষতক তরী ডুবে গিয়েছিল। এবার তারা সজাগ। এরশাদের মত সাপকে সাথে নিতেও অসুবিধে নেই তাদের। প্রয়োজনে জামায়াতের একটি অংশকেও সাথে রাখবে এবার। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ নিয়েও এরা প্রশ্ন তুলছেন। আটক বিচারাধীন নেতাদের নিয়েও আবোল তাবোল কথা বলছেন। এই ষড়যন্ত্র এখন আংকারা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে, তুরস্কের নেতা নাকি চান  বিচার বন্ধ হোক , ফাঁসির আদেশ না হোক।

কে তিনি? কি তাঁর ভূমিকা? ২৯ ডিসেম্বর তার দেশের বিমান হামলায় নিহত ইরাকি শিশু-কিশোরদের রক্তের দাগ এখনো শুকায় নি। এখনো বিচার হয়নি সে অপরাধের। মানবাধিকারের প্রশ্নে নাজুক অবস্থানে থাকা তুরস্ক আমাদের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে অথচ সরকার কিছু জানে না এ কোন প্রহসন? ফের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এমন কিছু নাকি বলেন নি তারা। সন্দেহ-অবিশ্বাসের এই খেলা এখন আওয়ামী লীগের নিত্যকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে আমরা শংকিত। মনে করছি যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে ও প্রহসন হচ্ছে।
 
সরকার না পারলেও জনগণকেই ঠেকাতে  হবে। এদেশ ও জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সামনে এগিয়ে যেতে যাবতীয় দুশমনের বিরুদ্ধে বজ্রকঠিন দৃঢতার বিকল্প নেই। মধ্যপন্থা নয়, আমাদের প্রয়োজন গভীর দেশপ্রেম।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।