বেশ ক’দিন ধরেই আমরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছি। বিশেষ করে ২৫ অক্টোবর ছিল বেশি ভয়ের।
কি হবে ২৫ অক্টোবর? গৃহযুদ্ধ; সরকারি দল, বিরোধী দল, নিরাপত্তা বাহিনির ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ? রাজপথে লাশের স্তূপ? আরও একটি ওয়ান ইলেভেন? ২৫ তারিখের আগের রাতে ঠিকমত কারো ঘুম পর্যন্ত হয়নি; না জানি রাত পোহালে কি হয়! হলোও তাই; বলতে গেলে গোটা দেশ প্রায় রণক্ষেত্র! ২৫ তারিখে সারাদেশে সংঘর্ষে নিহত হয় ৫ জন!
বিরোধী দলীয় নেত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ঘোষণা দেন, দু’এক দিনের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা না করলে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল! উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করে নৈশভোজে আলোচনার আমন্ত্রণ জানান, হরতাল প্রত্যাহারের আনুরোধ করেন।
কিন্তু না! বিএনপি তা না মেনে হরতাল বহাল রাখে! বিএনপির একটাই দাবি, নির্দলীয় সরকার! এদিকে আওয়ামি লীগের কথা, সর্বদলীয় সরকার, যার প্রধান হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। কেউ কারো অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি। তার অর্থ কি দাড়ালো? সরকার, বিরোধীদল সবার মনের কথা একটাই, ‘সব মানলাম, তবে তালগাছটা আমার। ’
২৭, ২৮, ২৯ অক্টোবরের টানা ৬ ঘণ্টা হরতালে সারাদেশে নিহত হয় মোট ১৩ জন; আহত হয় সহস্রাধিক! লাভ কি হয়েছে? কার্যত কোনই সমাধান হয়নি! সেই টানাপড়েন এখনো চলছে। একই দাবিতে সোমবার থেকে আবার টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে। দু-দলই ক্রমশ অবস্থা কেবল ঘোলাটেই করছে।
অবস্থাদৃষ্টে হতবাক না হয়ে উপায় নেই। ভাবতে অবাক লাগছে, এটা স্বাধীন দেশ! আমাদের স্বাধীনভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা এবং মত প্রকাশের অধিকার আছে! আমাদের শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে, নির্বিঘ্ণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ দেশটা আফগানিস্তান বা ইরাক নয় যে রোজ কয়েকটা করে লাশ পড়বে, আর এটা হয়ে যাবে স্বাভাবিক ঘটনা! এই ক’দিনে যে ১৮ জন প্রাণ হারালো, তার হিসাব কে দেবে? ওই ১৮ পরিবারের অবস্থা এখন কি? এটা কি দেশে শান্তির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, সুশাসনের জন্য?
শুধু বিরোধী দল নয়, আজকের সরকারি দলও যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারাও একই ধরনের কর্মসূচি দিয়েছে। হরতাল দিয়ে সব সময় বিরোধী দল বলে, গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠার জন্যই আমাদের এই আন্দোলন।
সরকার, বিরোধীদল উভায়কে বলছি, স্বাধীনতার এতো বছর পরও যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি, তখন খ্যান্ত দেন। নতুন করে ভাবুন। অন্যের দোষ না খুঁজে ভাল কাজ দিয়ে প্রমাণ করুণ আপনারাই যোগ্য।
জালাও পোড়াও, আর ধ্বংসের রাজনীতি এ দেশের মানুষ আর চায় না।
আপনাদের এই গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা অনেকটা, রাতের আঁধারে কুমারি মেয়েকে সম্ভাব্য ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা করে নিজে ধর্ষণ করে তাকে গণধর্ষণ থেকে রক্ষা করার মত! দেশের বড় দুই রাজনৈতিক জোটের ঠেলাঠেলিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। আতঙ্কে মানুষ বাইরে বেরুতে পারছে না, স্বাভাকিব কাজকর্ম করতে পারছে না। গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবধিকার, ঐক্য, সাম্য, এসব এখন কেবল সংবিধানের মোটা মোটা পাতায লেখা থাকে। অর্থাৎ, ‘মোল্যার গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নাই। ’
মোস্তাফিজুর রহমান: সাহিত্যিক, সাংবাদিক, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি