ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

পুড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

শাখাওয়াৎ নয়ন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৩
পুড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আপনারা যারা অপরাজনীতি করেন, তাদের বলছি না। আমাদের মতো আপনারাও ইতোমধ্যেই সংবাদপত্রে কিংবা টেলিভিশনে এই ভয়াবহতম দৃশ্যটি দেখেছেন।

তার পরেও আপনাদের বোধোদয় হয় নি। কোনো দিন হবে কি না তাও জানি না। আপনাদের কাছে বলে যে কোনো লাভ হবে না তা আমরা মোটামুটি জেনে গেছি।

যারা আমার মতো সাধারণ মানুষ তাদেরকে অনুরোধ করছি, একবার ভেবে দেখুন তো, আপনার ছেলেকে এইভাবে কেউ পুড়িয়ে মেরে ফেললে আপনার কেমন লাগবে? অপরাজনীতির আগুনে পুড়ে কয়লার মতো কালো হয়ে যাওয়া শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কিভাবে, কতো কষ্টে একজন অসহায় বাবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বসে আছেন? ওই পিতার আসনে একটিবার নিজেকে বসিয়ে দেখুন কিংবা ওই সন্তানের পোড়া দেহটাতে নিজের সন্তানের বা নিজের দেহ কল্পনা করে দেখুন। কেমন লাগে?
 
আমি ওই পিতার মুখে, পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া ওই শিশুর মুখেই বাংলাদেশের ছবি দেখতে পাচ্ছি। লাল বল ভেবে ককটেল হাতে নেওয়া মুরাদের ব্যান্ডেজবাঁধা দুই হাতেও বাংলাদেশের ছবি দেখতে পাচ্ছি। কষ্টে খেতে পারি নি, বেদনায় সারারাত ঘুমাতে পারি নি। অপরাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে অভিসম্পাত করেছি। সরবে নীরবে বারবার বলেছি, আপনারা কার গায়ে আগুন দিচ্ছেন? কার গায়ে পেট্রোল বোমা মারছেন? এভাবে হয়তো একদিন ক্ষমতা দখল করতে পারবেন, কিন্তু ততোদিনে পুড়ে যাবে সমগ্র বাংলাদেশ।

এতোকিছুর পরেও অপরাজনীতিকদেরকে এখন আর জনগণের বন্ধু মনে করার কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তারা জনগণকে বলি দেন। শুধুমাত্র ‘ফর দ্য পাওয়ার, বাই দ্য পাওয়ার, অব দ্য পাওয়ার’---এর জন্যই কিছু রাজনীতিদুষ্ট মানুষ এতো ছলাকলা, এত পাশবিকতা, এত বকধার্মিকতা করছেন! তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছেন। তাদের ভয়ে মানুষ ক্ষোভের কথা, দুঃখের কথা বলতে পারছেন না। দেশের মানুষ হরতালও চান না, আবার অবৈধভাবে কেউ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকবেন, তাও চান না। দেশের মানুষ শান্তি চান, শুধুই শান্তি চান।

বাংলাদেশে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি আছে, সুন্দরবন রক্ষা কমিটি আছে, কিন্তু ‘মানুষ রক্ষা কমিটি’ নাই। দেশের খনিজ সম্পদ, সুন্দরবন আমাদের অমূল্য সম্পদ, জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের জীবনের মূল্য কি সুন্দরবনের কোনো একটি গাছের চেয়েও কম? মানুষের কথা কি কেউ একবারও ভেবে দেখবেন না? বাংলাদেশে এখন ‘মানুষ রক্ষা কমিটি’ প্রয়োজন।

দেশে এমন কেউ কি নেই, যারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের রক্ষা করবেন? কিংবা রক্ষা করার জন্য রাস্তায় নামবেন, লংমার্চ করবেন? নাকি দিনের পর দিন বছরের পর বছর অপরাজনীতিদুষ্ট কিছু অসৎ লোকের লোভের আগুনে সমগ্র বাংলাদেশ পুড়তেই থাকবে? বাংলাদেশ যদি পুড়েই যায় অপরাজনীতিকরা কি অক্ষত থাকতে পারবেন? তাদের জান-মাল কি নিরাপদ থাকবে? তাদের সন্তানরাই বা যাবে কোথায়?

একবার যদি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জেগে ওঠে, তাহলে কিন্তু অপরাজনীতিক ও তাদের অপকর্মের প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামবে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকেও নিরস্ত্র বাঙালি ভয় পায় নি। সুতরাং, এখনকার অপরাজনীতিকদেরও ভয় পাবে না। বাংলাদেশের যেকোনো একটি এলাকার মানুষ যদি শুধু এক মুহূর্তের জন্যও জেগে ওঠে তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ জেগে উঠবে। জনগণ একবার রাস্তায় নেমে আসলে তখন কিন্তু কোনো ফর্মুলাই কাজে লাগবে না।

লেখকঃ কথাসাহিত্যিক, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।





বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩
জেএম/এএসআর/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।