ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এরশাদ বনাম কাজী জাফর: মশকরা বন্ধ করুন

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩
এরশাদ বনাম কাজী জাফর: মশকরা বন্ধ করুন

বাংলাদেশ যখন জ্বলছেম আমাদের কথিত নেতারা তখনো জাতির সঙ্গে মশকরা করে চলেছেন। আমার পরিচিত এক তরুণী চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন।

শেষ খবর পাওয়া অবধি তিনি ফেনীতে আটকে আছেন।

তিনি একা নন, হাজার হাজার মানুষ রেলবন্দি, বাসবন্দি, হাজার মানুষের কাজ নেই। লাখো মানুষের জীবন অনিশ্চিত। আর কোটি কোটি মানুষ আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায় অস্থির। সারা দেশ জুড়ে জামায়াতি তাণ্ডবের নীরব দর্শক আওয়ামী লীগ আর যোগানদাতা বিএনপি।

এমন কঠিন সময় খুব একটা আসেনি আগে যে, রাজনীতি দেশকে এমন তাণ্ডব আর ধ্বংসের মাঝখানে ফেলেছে তার ভূমিকাটা একটু দেখুন।

আমাদের নেতারা যারা কিছু না করেই ধনী, যারা কোন কাজকাম ছাড়াই নিয়ত সংবাদ শিরোনাম টকশো মিডিয়ার প্রাণ তারা কোথায়? কোথায় তাদের প্রতিরোধ বা সমঝোতার ভূমিকা?

আমরা মনে করতাম, বড় দু’দলের বাইরে থাকা দ গুলো দু:সময়ে পাশে দাঁড়াবে। আজ তাদের কি চেহারা? একদা বাম মেনন ভাই আর ইনুর দল তো আখের গোছানোয় ব্যস্ত। তাঁরা আছেন নতুন মন্ত্রিত্বের সোনালী স্বপ্নে মশগুল। পাঞ্জাবির কড়া ইস্ত্রি ভেঙে রাস্তায় নামার টাইম নাই তাঁদের।

কম্যুনিস্ট পার্টি আছে তত্ত্ব নিয়ে, এই নির্বাচন সিদ্ধ, নাকি আতপ না বাসমতি এ দ্বন্দ্বে দিশেহারা তারা।

হঠাৎ পাল্টে যাওয়া কাদের ভাই এখন কোথায়? বাঘা বাঙালি ভারতের ইঁদুর হবার জন্য এখন ইন্ডিয়ায়। শোনা যায় লাখ লাখ টাকার উপহার নিয়ে গেছেন তিনি। দেশে বড় বড় বুলি আর কাজে ভারত তোষণ। বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেনসহ বাদবাকীরা ঘন ঘন বিবৃতি আর ফর্মুলা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ সর্বনাশ যা হবার তা হয়েই চলেছে। বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন, যানে আগুন, জানে আগুন, সারা দেশ আগুনময়।

এমন কঠিন সময়ে রাজনীতির নিকৃষ্ট খেলায় নেমেছেন জোকার এরশাদ সাহেব, আর তার দীর্ঘদিনের চ্যালা কাজী জাফর। নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাবার পর থেকে রেগে থাকা কাজী জাফর বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন এরশাদকে। এই লোকটি গত বিশ বছরে দেশের কোন উপকারে এসেছে, কেউ বলতে পারবেন? আমার জন্মের আগে অথবা শৈশবে বাম রাজনীতি করতেন এই তাঁর পুঁজি।

দুনিয়া থেকে আলাদা এক দেশের চামচামি করে সারাজীবন কাটানো এই লোক সামরিকতন্ত্রের দালালি আর এরশাদের অবৈধ সরকারের মদতদাতা হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এমনই প্রধানমন্ত্রী যার গায়ে চিনি চুরির কলংক লেগে রইল সারাজীবন। সে আগুনে তিনি আমাদের সিডনি তথা অস্ট্রেলিয়া জ্বালাতেও ছাড়েন নি।

বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করে এ দেশের শরণার্থী কোটায় আশ্রয় প্রার্থী হয়ে সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়েছিলেন। প্রথমবারের মত এদেশের জাতীয় দৈনিক ও মিডিয়ায় কলংকের শিরোনাম হল আমাদের দেশ। তারা লিখেছিল - বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপদ আবাস  হয়েছে সিডনি। তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি অনুদানের অর্থ নিয়েছিলেন এমনও শোনা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের অর্জিত সুনাম আর ভালো ইমেজের মুখে এমন কালিমা আর কেউই লেপন করতে পারেনি।

সব সুবিধা-সুযোগ ভোগ করার পর রুগ্ন কাজী জাফর হঠাৎ ভালো হয়ে দেশে চলে গেলেন। মাঝে মাজে আসেন বৈকি। এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্হার সুবিধা ভোগ করে বিনে পয়সায় সরকার ও জনগণের টাকায় গড়ে ওঠা ওয়ার্ল্ডক্লাশ চিকিৎসা সেবা নিয়ে চাঙ্গা হয়ে আবার ফিরে যান। এই লোকটিই এখন আবার লাইম লাইটে।

কি যে দুর্ভাগ্য আমাদের। নব্বই এর পরাজিত স্বৈরশাসক আর তার চামচা মন্ত্রী, ভিন দেশে দেশ ও জাতির ইমেজ নিয়ে মশকরা আর জঘন্য কাজে ব্যস্তরাই আবার নাম ভূমিকায়।

দেশ যখন জ্বলছে, মানুষ যখন বাঁচা-মরার মাঝখানে পিষ্ট, তখন এরা পরস্পরকে বহিষ্কারের খেলায় মত্ত। এমন মানুষকে আমরা নেতা মানি। এরা জাতির ভালো বোঝে না, মানুষের জীবন বোঝে না। এদের চাওয়া কেবল গদী আর পাওয়ার।

রবীন্দ্রনাথের সে গানটিকে একটু ঘুরিয়ে বলি- আমি চিনি গো চিনি তোমারে .... চিনি’র চিনি এই লোকরাই আমাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে সারাজীবন?? বাঙালি তুমি ঘুরে দাঁড়াও। তোমার পিঠ কিন্তু দেয়ালে।

অজয় দাশগুপ্ত: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।