প্রতিদিন যেই ছেলেটি চা নিয়ে আসত, আজ আসেনি। কাজে আসার জন্য বাসে উঠেছিল, বাসটি কিছুদূর যাওয়ার পরই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।
এ যেন প্রতিযোগিতা, সহিংসতার মাত্রা নিরুপণের। ঢাকার বাইরে সহিংসতা বাড়লে বিরোধী দলীয় নেতাদের সন্তোষ প্রকাশ, ঢাকায় কম হলে অসন্তোষ। তাদের দাবি একটাই- নির্দলীয় সরকার।
কি হবে এতে? নিরপেক্ষ নির্বাচন! তারপর? ক্ষমতার হস্তান্তর! অতঃপর? সরকার দলীয় উন্নয়নের সাফাই ও বিরোধীদলের হরতাল, অবরোধ। তারপর আরও অনেক সাধারণ মানুষের জীবন মৃত্যু আর ধ্বংসের মুখোমুখি।
স্কুলে যাওয়া মেয়ের অন্ধত্ব, মায়ের একমাত্র সম্বল হারানো, পুড়ে যাওয়া শরীর, আর্তচিৎকার, হাহাকার, সারাজীবনের কষ্ট। এ যেন নিরন্তর সহিংস রাজনীতির এক অস্থির প্রতিযোগিতা।
দয়া করে রাজনীতিবিদরা বলবেন কি আপনারা থামবেন কোথায়?
স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পর এই মহান বিজয়ের মাসে অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার সাথে বলছি, এ দেশের সাধারণ মানুষ আজও পরাধীন। দেশের গুটিকয়েক মানুষের কাছে আজও আমরা জিম্মি। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষের আর্তনাদ আমাদের স্বাধীনতার গৌরবকে ম্লান করে দিচ্ছে না কি!
পতাকার রং বদলে যাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে এর অন্তর্নিহিত অর্থও। সবুজ হয়ে যাচ্ছে রাজনীতিবিদদের বিলাসিতার রঙে মোড়া সবুজ কার্পেট আর সাধারণ মানুষের রক্ত দিয়ে পতাকার লাল রং পূর্ণ হচ্ছে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বোমা হামলা, ভাঙচুর, বাসে আগুন। কেমনতর রাজনৈতিক কর্মসূচি এগুলো? আর কত লাশ? আর কত আর্তনাদ?
কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আক্রান্ত হতে পারে আপনারই কোনো স্বজন, পরিজন!
সরকারের প্রতি অনুরোধ, যদি থামাতেই না পারেন তবে সমঝোতা করুন। মানুষের উর্ধ্বে সংবিধান নয়। মানুষের প্রয়োজনেই সংবিধানের সৃষ্টি। সেই জনগণই যদি আক্রান্ত হয়, তবে সংবিধানের স্বার্থকতা কোথায়? আর আপনাদের সফলতাই বা কোথায়?
এক বন্ধুর মুখে শুনলাম জাপানের প্রধানমন্ত্রীকেও ট্রাফিক সিগনালে বসে থাকতে হয়। তার সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার হয় সাধারণ মানুষ। সিগন্যাল থামার পর প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে গিয়েছেন।
আর আমাদের দেশে! সরকার দলীয় ক্ষমতাবানদের কথা না হয় বাদই দিলাম এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা/নেত্রী ও যদি রাস্তা দিয়ে যান ,তাহলে রাস্তার সাধারণ যান চলাচলে থাকে প্রতিবন্ধকতা।
আসুন আমাদের সাধারণ মানুষের মতো আপনারাও হরতাল-অবরোধে বাসে বা সিএনজিতে করে অফিসে যান। রেলে করে গন্তব্যস্থলে যান। যখন বাস, সিএনজিতে ঢিল বা পেট্রোল বোমা ছুড়বে, রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হবে তখন আমাদের আরও দশটা সাধারণ মানুষের মতো আপনারাও তার মুখোমুখি হোন।
চিকিৎসার জন্য কেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাবেন! আসুন ঢাকা মেডিকেল কলেজে বর্হিবিভাগে টিকিট কেটে অপেক্ষা করি কখন ডাক্তার আসবেন।
পারবেন তো মাননীয় সরকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা-নেত্রীরা? যদি না পারেন তবে এগুলো বন্ধ করুন, পারস্পারিক বিরোধিতা ত্যাগ করুন। মানুষ ও দেশকে ভালবাসতে শিখুন । মানুষ ও দেশও কখন আপনাদের ভালোবাসবে।
লেখক: জাহিদুর রহমান নাহিদ
শিক্ষক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
ই মেইল- [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৩