ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এরশাদ ও কয়েকটি গান

সাঈদ চৌধুরী টিপু, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩
এরশাদ ও কয়েকটি গান

১.
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন ‘ছায়ামায়াময়’ (ধোঁয়াটে)  হয়ে ওঠে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। তার যুগ শেষ হয়েছে প্রায় দুই যুগ আগে।

তবুও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ এখনও একটা ফ্যাক্টর হয়ে আছেন। তাকে নিয়ে অতীতে কম জল ঘোলা হয়নি; ভবিষ্যতেও যে আরও বাকি আছে এর আভাসও মিলছে। নির্বাচন নিয়ে দেশ যখন একটা প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আবার হাজির হয়েছেন স্বমহিমায়।
 
নানা নাটক শেষে সরকারবিরোধীদের হতাশ করে ‘সর্বদলীয়’ সরকারে শরিক হয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি। মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন তিনি এবং তার অনুসারীরা। হঠাৎই বেঁকে বসলেন। তিনি নির্বাচনে যাবেন না। উধাও হয়ে গেলেন কিছু সময়ের জন্য। বেরিয়ে এসে জানালেন, নির্বাচনেও যাবেন না। ‘সর্বদলীয়’ সরকারেও তার দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। এবার হতাশ সরকার, হতাশ সাজানো মঞ্চ ভেঙে যাবার ভয়ে। এরশাদের ডিগবাজিতে বিরোধী শিবিরে আনন্দের ছোঁয়া লাগলেও সন্দেহরও কমতি নেই। শেষ পর্যন্ত অনড় রইবেন তো এরশাদ!
এরশাদ বরাবরই এমন রহস্যময়!

২.
এরশাদের সঙ্গে গানের সম্পর্ক নতুন নয়। গীতিকার হিসেবে এরশাদের এককালে ভালোই নাম ডাক (!) ছিল। ১৯৮৮ সাল। দেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা। আমার তখন শৈশব। ঝাপসা মনে পড়ে বিটিভির পর্দায় দশটার ইংরেজি সংবাদের আগের দৃশ্য। রাষ্ট্রপতি এরশাদ তখন সাফারি স্যুটের প্যান্ট  গুটিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় হেঁটে চলেছেন। প্লে ব্যাকে শুনা যাচ্ছে তার নিজের (?) লেখা গান ‘তোমাদের পাশে এসে আজকের চেষ্টা আমার’। স্বৈরাচারের তকমা গায়ে নিয়ে এরশাদ যখন ‘সিংহাসন’ থেকে নামলেন তখন তার গানকীর্তি নিয়েও কম কাহিনি হয়নি। কী কীর্তি সেটা এখানে উল্লেখের বিশেষ প্রয়োজন নেই। কীর্তি যাই হোক এরশাদ যে গান ভালোবাসেন সেটা মানতেই হবে। তার জীবনে গানের এমনভাবে ধরা দেওয়া বোধহয় সে ভালোবাসারই ফসল। তাকে ঘিরে বাতাসে তাই নানা সুরে গান ভাসে। তাকে নিয়ে গানের আনাগোনা সরকারি দলের হৃদয়ে। সুর ওঠে বিরোধী শিবিরের তানপুরাতেও। আবার তার নিজের মনেও সুরের কমতি নেই।


‘তোমাকে হারাতে যদি হয়, লাগে মনে এই ভয়। ’ সদ্য মহাজোট ছেড়ে বেরিয়ে আসা এরশাদকে নিয়ে বোধহয় এমন সুরই বাজছে আওয়ামী লীগের হৃদয়ে। তারা কোনোভাবেই এরশাদকে হাতছাড়া করতে চায় না। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে এরশাদকে নির্বাচনমুখি রাখতেই হবে। সরকারের পুরোটা সময়ই এরশাদকে হারানোর ভয় ছিলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনে। আগেও এরশাদ একটু নড়লেই সরকার বাহাদুর হাতে রাখা সুতোয় টান দিতেন। এবারও এরশাদের বাসভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির নজরদারি বেড়েছে। এরশাদ আগেও সুতো ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এবারও কি পারবেন?

বিরোধী দলও নতুন করে এরশাদকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে। সুর আছে তাদের মনেও। শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের গানের তালে তারা নিজেদের মতো সুর ধরেন-‘তুমি জনতার মঞ্চে এসে বলে দাও মুচকি হেসে আমি ছাড়া তুমি আর কারো না। ’ তারা চান আপামর জনতার ধারণা ভেঙে দিয়ে এরশাদ বলে উঠুন আমি বিএনপির সঙ্গে আছি। তারা চান এরশাদ যেনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তাদের সঙ্গে জোরকণ্ঠে স্লোগান ধরেন।
চিরদিনের পাকা খেলোয়াড় এরশাদ হিসেব মেলাতে থাকেন নিজের মতো করে। ফসল নিয়ে নায়ে চড়লে লাভ বেশি না ক্ষেত থেকে ধান তোলাতেই লাভের পাল্লা ভারি হবে। হিসেব কষেন এরশাদ, আর গুনগুন করে লোকগীতির সুর তোলেন, ‘আমি কোন কূল হতে কূলে যাবো কাহারে সুধাই রে। ’ এরশাদ শুধুই ভাবেন।
আসলে এরশাদের ‘নদীর কূল নাই, কিনারও নাই। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।