ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমরা কি এই গণতন্ত্র চেয়েছিলাম?

তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
আমরা কি এই গণতন্ত্র চেয়েছিলাম? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/(ফাইল ফটো)

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম একটি লাল সবুজের পতাকা । প্রিয় মা, মাটি ও মানুষের জন্য এমন আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা লাভ করলাম পরক্ষণেই তা ম্লান হয়ে গিয়েছিল কুচক্রী মহলের অপশাসনের কাছে-- এ ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। এরপর আবার শুরু হল গণতন্ত্রের জন্য লড়াই। দলমত নির্বিশেষে এ লড়াইয়ে শামিল হল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। অবশেষে গণমানুষের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হল স্বৈরশাসক-সরকার। এরপর আমাদের  গণতন্ত্রের পথে হেঁটে চলা। আর গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতার পালাবদলে নেতার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং যারাই গণতন্ত্রের বুলি আওড়ে ক্ষমতায় এসেছে তারাই এদেশের সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে।   এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি?  

স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে চলেছি আজ। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এমন কঠিন আর অভিনব অবস্থার মুখোমুখি বাঙালি জাতিকে খুব একটা পড়তে হয় নি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে, কৃষক এত কষ্ট করে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ, বহু কল-কারখানা বন্ধ হবার মুখে; অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। দেশের সাধারণ মানুষ যেখানে দিশেহারা তখন একশ্রেণির মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের সম্পদ। তারা অবৈধ উপায়ে গড়ে তুলছে অঢেল সম্পদের পাহাড়।

আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও আমরা বিভক্ত স্বাধীনতার পক্ষের কিংবা বিপক্ষের শক্তি হিসেবে। ক্ষমতাবান বড় দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কার্যক্রম স্বৈরতন্ত্রকে যেন হার মানায়। দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য যেখানে সংসদে বসে দু’দলের যুক্তিতর্ক হওয়ার কথা, সেই পবিত্র সংসদ আজ প্রধান নেতা-নেত্রীদের গুণগান বা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে-নিন্দায়ই বেশিরভাগ সময় ব্যয় হতে দেখি। আর যারাই বিরোধীদলে থাকেন সংসদে কথা বলতে দেয়া হয় না—এমন খোঁড়া অজুহাতে তারা রাজপথে অবস্থান নেন।

কি ঘটছে এখন বাংলাদেশে? দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অবস্থা আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা ভাববার জন্য কি কোনো সচেতন দল বা মানুষ নেই বাংলাদেশে? একের পর এক হত্যা, আগুনে দগ্ধ হওয়া,গুম হওয়া কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করা অথবা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়া- এগুলোই যেন আজ স্বাভাবিক ঘটনা। বহির্বিশ্বের নানাবিধ চাপ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে প্রধান দলগুলোর সমঝোতায় না পৌঁছানো আমাদেরকে কোথায় নিয়ে ঠেকায় সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। বিশেষ করে আমরা যারা বর্তমানে প্রবাসে আছি দেশের মানুষের মত আমরা ও সারাক্ষণ শংকায় থাকি কোথায় জানি পরিচিত কেউ আহত বা নিহত হল। দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশের এই কঠিন সংকট মুহুর্তে প্রতিনিয়ত আমাদের একটি মানসিক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হ; এতে করে আমাদেরও স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা নব্বইয়ের গণতন্ত্রের আন্দোলনে বাঙালি হেরে যায় নি বরং সব আন্দোলনেই জয়ী হয়েছে গৌরবের সাথে। এ আন্দোলনগুলো আমাদের মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। সারাবিশ্বে বাঙালি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের কর্মের মাধ্যমে। আর দেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে।

তাই প্রবাস থেকে আমাদের আকুল আবেদন, আমরা মানুষের স্বাভাভিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, স্বাধীনভাবে মানুষের কাজকর্ম করার অধিকার চাই, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, দেশের মানুষের শান্তি চাই এবং সর্বোপরি সত্যিকারের গণতন্ত্রের বাংলাদেশ চাই; যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন: উচ্চ শিক্ষায় জাপানে অবস্থানরত

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।