ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি বিয়ে এবং কিছু কথা

ড. জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩
একটি বিয়ে এবং কিছু কথা ছবি: সংগৃহীত

বুধবার অনলাইন গণমাধ্যমসহ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পড়ে জানতে পারলাম টক শো কিং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আসিফ নজরুল ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূনতনয়া দু`মাস আগে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। পাক্কা সেলিব্রেটিদের মতই দীর্ঘ দু`মাস বিয়ের খবরটি তারা চেপে রেখেছিলেন।

কাশি যেমন চেপে রাখা কঠিন, বিয়েও ঠিক তেমনি।

তাই চেপে রাখা গোপন বিয়ের খবরটি অতঃপর তারা তাদের ছবিসহ প্রচার করেছেন নিজ নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে। কাজেই সেলিব্রেটিদের গোপন বিয়ের ন্যায় এই খবরটিকে কিছুতেই গুজব বলে উড়িয়ে দেবার কোনো সুযোগ নেই।
 
হয়ত অনেকেই বলতে পারেন, বিয়ে একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, এ নিয়ে আলোচনা করা রুচিকর নয়। কিন্তু যেহেতু আসিফ বা শীলা কেউই আম-আদমির পর্যায়ে পড়েন না, আমাদের মিডিয়ার কল্যাণে দুজনেই সেলেব্রেটি স্ট্যাটাস পেয়েছেন, কাজেই আমরা তাদের নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠব এটাই তো স্বাভাবিক। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হতেই পারে এবং হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
 
আসিফ নজরুল মিডিয়ায় যা বলেন এবং লেখেন তার প্রভাবে তার ভক্তসংখ্যা বিশাল। শুনেছি ফেসবুকেও তার লক্ষাধিক ফলোয়ার। সরকারবিরোধী জ্বালাময়ী বক্তব্যের কারণে তিনি বিরোধী শিবিরের চোখের মণি। অর্থাৎ খুব দ্রুত সময়ে শিক্ষিত জনগণের একটি অংশের কাছে তিনি রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

রোল মডেল হিসেবে যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তখন অবশ্যই শুধু তার মুখের কথা নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনযাপনও আলোচনার পর্যায়ে পড়ে। এহেন ব্যক্তি যখন একের পর এক সংসার গড়েন, বিধি মোতাবেক তালাক নেন এবং আবার বিয়ে করেন তখন মনে প্রশ্ন জাগে তিনি কি বহুবিবাহের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন?
 
হুমায়ূনের সাথে আসিফের সম্পর্কের টানাপোড়ন নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর আসিফের লেখা একটি কলাম পড়েছিলাম। সেখানে আসিফ হুমায়ূন আহমেদের কথা যতটা না লিখেছেন, নিজের সম্বন্ধেই লিখেছেন বেশি। তিনি বিচিত্রার তরুণ সাংবাদিক হয়ে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় হুমায়ূনের সঙ্গে কতটা বেয়াদবি করেছিলেন, ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিলেন সেসব জানিয়েছেন।

হুমায়ুনকে ভাই, গুলতেকিনকে ভাবী সম্বোধন করে হুমায়ূন পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা করে হুমায়ূন পরিবারের সঙ্গে মিশে যে তিনি চরম বিশ্বাসভঙ্গের মত কাজ করেছিলেন সে কথাও আসিফ অকপটে জানিয়েছিলেন।
 
অবশ্য কি সেই বিশ্বাসভঙ্গ ছিল এবং কেন হুমায়ূন তাকে বর্জন করেছিলেন সেকথা আমরা তখন জানি নি। তবে শিলার সঙ্গে এই বিয়ের খবরে আর ১০ বছর আগের তাদের প্রেমের গুঞ্জনে অনুমান করে নিতে পারি যে আসিফ কিভাবে হুমায়ূনের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করেছিলেন। তার মানে শীলা আহমেদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতাকে ভালোভাবে নিতে পারেন নি জন্য হুমায়ূন আহমেদ।
 
একজন বাবা হয়ে মেয়ের ভালো চাইবেন এটাই তো স্বাভাবিক। অভিজ্ঞ হুমায়ূনের চোখ নিশ্চয়ই আসিফকে চিনতে ভুল করে নি। আর ভুল করেন নি বলেই হুমায়ূন পরবর্তী সময়ে আসিফকে বর্জন করেছিলেন। তার সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রাখেন নি।
 
এতো গেল সদ্য শ্বশুর হুমায়ূনের সঙ্গে আসিফের সম্পর্কের হিসাব। কিন্তু কথা হলো আসিফ-শীলার দীর্ঘদিন আগের সেই প্রেমের সম্পর্ক নিশ্চয়ই ভেঙ্গে গিয়েছিল। তা নাহলে দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে যাওয়ায় দুজনেই তো আলাদা সংসার পেতেছিলেন। দু’জনেই পরে আলাদা বিয়ে করেছিলেন।

পত্রিকা থেকেই জেনেছি আসিফ তার কোনো এক ছাত্রীকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন, তারপর তাকে ডিভোর্স দেন। পরে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীকে বিয়ে করেন। একটি সন্তানসহ সেই বিয়েও ভেঙ্গে যায় অতি সম্প্রতি। অন্যদিকে শীলা আহমেদও প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন অপু নামের এক তরুণকে। ছোট ছোট দু’সন্তানও আছে তার। তিনিও সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন।
 
এতোদিন পর পুরনো সেই সম্পর্ক যখন পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়া (ফেসবুকে দেয়া ছবিটিতে শীলা কাবিননামায় সই করছেন বলে পত্রিকা থেকে জেনেছি এবং আসিফ এই ছবিটিকে স্পেশাল মুহূর্ত বলেই তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন) বিয়েতে গড়ায়, তখন প্রশ্ন জাগে, তবে কি পুরনো প্রেম কখনই ভেঙ্গে যায় নি?

আসিফের প্রেমের টানেই কি দু’সন্তানের জননী হয়ে শিলা আহমেদ বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন? তবে কি তারা দীর্ঘ সময় পরকীয়াতে আবদ্ধ ছিলেন? পূর্ব পরিচিত এই যুগল কি কখনই তেমনভাবে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না?
 
হুট করে বিয়ে করার মত টিনেজও তারা নন। দু’বছর বয়সী সন্তানের মা যখন সংসার ফেলে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তখন তা প্রেম ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে! আর সে প্রেম যে পরকীয়া প্রেম তা তো বলাই বাহুল্য।

তবে প্রেমের টানে, পরকীয়ায় মেতে বান্ধবী হয়ে শাওন যখন শীলার বাবাকে বিয়ে করেন, তখন হুমায়ূনের থেকেও নিন্দিত হয়েছিলেন শাওন। এই কারণে শীলা তার বাবাকে আজীবন ঘৃণা করে এসেছিলেন। একটি দৈনিক পত্রিকায় হুমায়ূন নিজেই তার লেখায় সে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
 
শাওনের প্রতি শীলার ঘৃণাকে অত্যন্ত যৌক্তিক আমরা সকলেই মনে করি। তবে মধ্য ত্রিশের শিলা যখন ছোট দু’সন্তানের মুখের দিকে না তাকিয়ে ৫০ এর কাছাকাছি আসিফের সঙ্গে পরকীয়ায় মেতে ওঠেন, বাবার বন্ধু আসিফের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন কিন্তু এক সময়ের দু`বন্ধু শাওন ও শীলার চরিত্রের মধ্যে আমরা অভিন্ন মিল খুঁজে পাই। আশা করি শীলা এখন শাওন ও হুমায়ূনের প্রেমের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন খুব ভালোভাবেই।      
 
তবুও ভালো সামাজিক-পারিবারিক সম্ভাব্য সকল বিপত্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে আসিফ-শীলা নিজেদের প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, অন্তত পরকীয়া প্রেমের মত নোংরামি থেকে বেরিয়ে এসে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এ কারণে তো তারা একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
 
বহুবিবাহের রোল মডেল আসিফ নজরুল এখানেই তার বিবাহ মিশন ক্ষ্যান্ত দিয়ে হুমায়ূনতনয়া শিলা আহমেদকে বিয়ে করে একটি সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন এই প্রত্যাশাই করি। দুজনের জন্যই রইল শুভকামনা।    

* ড. জিনিয়া জাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।