ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তবে কি আ’লীগই সংলাপ চায় না?

ড. জিনিয়া জাহিদ, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪
তবে কি আ’লীগই সংলাপ চায় না?

‘জামায়াতকে ছাড়ুন, সংলাপে বসুন’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই হঠাৎ করে এমন একটি শর্ত বিএনপিকে জুড়ে দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, শর্তটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সবাই সর্বদা এমনটিই চেয়ে এসেছি।



যারা এ দেশের জন্ম চায় নি, পাকিদের সঙ্গে মিলে স্বাধীনতাকামী জনগণকে নির্দয়ভাবে অবর্ণনীয় পাশবিক নির্যাতন করেছে, এদেশে তাদের স্থান কখনই হতে পারে না।  
 
দেশে কেউ রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গে মিলে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে এমনটি বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবিদার আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক মঞ্চে উঠেছিল, ধিক্কার দিয়েছিল এদেশের জনগণ। এখনো ধিক্কার জানায় এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য। তবে একথা সত্য যে, আওয়ামী লীগ এরপর কখনই জামায়াতকে সঙ্গে রাখেনি।
 
আমরা ভাবতে ভালোবাসি, আওয়ামী লীগ উপলদ্ধি করে জামায়াতকে সঙ্গী করে তারা ভুল করেছিল। আমরা এও দেখতে চাই, বিএনপিও উপলদ্ধি করুক তারাও জামায়াতকে সঙ্গী করে ভুল করেছিল।
 
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকদেরও আশা যে, তাদের দল যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছেড়ে নতুন করে রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করবে। বিএনপির নতুনধারা রাজনীতির সঙ্গে থাকবে শুধুই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

বিএনপি বর্তমানে নির্বাচনী সংলাপের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বিএনপির সমাবেশে জামায়াতবিহীন মঞ্চ জামায়তের সঙ্গ পরিহার করার ইঙ্গিত বহন করে কি না তা হয়ত আরো কিছুদিন পর পরিষ্কার বোঝা যাবে। তবে দীর্ঘদিন পর যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতবিহীন বিএনপিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।

জামায়ত মঞ্চে নেই, এই দেখেই কি না হঠাৎ করে ভোটারবিহীন নব নির্বাচিত এমপিদের হেঁচকি উঠে দম বন্ধ হবার যোগাড় হয়েছে। কারণ ভালো মত চেয়ারে বসতে না বসতেই নেমে যেতে হবে এই ভয়েই হয়ত তারা মরিয়া হয়ে তাদের সুর বদলে ফেলছেন। অলরেডি তথ্যমন্ত্রী ইনু, ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা নানা ধরনের বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।  

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের লেজুড় টেনে এই সেই বলে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নির্বাচন হবে ২০১৯ এ, একথা বলে সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারা যেখানে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, সেখানে এমন সংশয় জাগতেই পারে যে, সংলাপে বসার আদৌ কোনো আগ্রহ সরকারি দলের আছে কি না। আর না থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কে চায় ক্ষমতার চূড়া থেকে আস্তাকুড়ে পতিত হতে?

সরকারি দলের উস্কানিমূলক কথাবার্তা শুরু হবে খুব শীঘ্রই। বেফাঁস কথার খিস্তি-খেউর চলবে দু’দলের মাঝেই। হয়ত কিছু নিরীহ প্রাণ ঝরে যাবে। এভাবেই কেটে যাবে বেশ কিছুটা সময়। বিদেশী কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপও থেমে যাবে। সংলাপও চলে যাবে হিমঘরে।
 
আর বরারবরের মতই ইনু সাহেবেরা বলে যাবেন, ‘সরকার সংলাপের জন্য প্রস্তুত। ’ কেমন প্রস্তুত তা তো তাদের কথাবার্তা ও কার্যকলাপেই প্রমাণ দিচ্ছে এবং দেবে।  

সংলাপের আদৌ কোনো ইচ্ছে আওয়ামী লীগের আছে কি না তা বোঝা যাবে যখন তারা বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার কথা বলার পাশাপাশি নিজেরা জামায়াতকে চিরতরে নিষিদ্ধ করবে।

আর তা না হলে বোঝা যাবে, শর্তের পর শর্ত দিয়ে এসব ধানাই-পানাইয়ের বেড়াজালে ৫ বছর অতিক্রান্ত করাই মূল উদ্দেশ্য, সংলাপের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই, ছিল না কখনই।

ড. জিনিয়া জাহিদ: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।