বিষয়টা খুব পরিস্কার। নিজের আত্মহত্যার দলিলে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
টাকা গ্রাস করছে ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটকে, এটা পুরনো কথা। নতুন কথা হলো সে টাকার স্রোতে বিসিবি ভাসতে চায়। বিনিময়ে ১৬ কোটি বাংলাদেশির ক্রিকেটীয় আবেগকে জলাঞ্জলি দিতে নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। দুবাইয়ে আইসিসির পরবর্তী সভায় ক্রিকেটের তিন বিগ ব্রাদার- ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রস্তাবে বাংলাদেশও সম্মতি দেবে, এমনটিই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বিসিবির।
বিগ ব্রাদারদের প্রস্তাব পাস হলে বাংলাদেশ টেস্ট খেলার সুযোগ হারাবে। ওয়ানডেতেও পরবর্তীতে কোন কোন দেশের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাবে, তাও পরোক্ষভাবে ঠিক করে দেবে এই তিন ব্রাদার। দেশের ক্রিকেটকে এমন করাতের মুখে ফেলে দেওয়ার পিছনে কাজ করছে বোর্ড কর্মকর্তাদের টাকার লোভ এবং ভারত জুজুর ভয়।
বিসিবি কর্তাদের মতে, ব্রিগ থ্রি’র প্রস্তাব পাস হলে আইসিসির কাছ থেকে বাংলাদেশ আরও বেশি টাকা পাবে। আবার ভারতের বিরোধিতা করা হলে তারা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভারতের ভয়ে অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে চাইবে না।
কিন্তু বিষয়টা একটু স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ভারত কবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বন্ধু ছিলো? এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ ভারত, যেখানে বাংলাদেশ একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পায় নি। বিপিএলে ক্রিকেটার পাঠানোর ক্ষেত্রেও বড় বাধা ছিলো দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। এক আ.হ.ম. মোস্তফা কামালকে আইসিসির সহ-সভাপতি পদে সমর্থন দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভারতের আর কোনো অবদান আছে বলেতো মনে পড়ছে না। ভারত যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঐতিহাসিকভাবে অসহযোগিতা করে আসছে, সেখানে নতুন করে ভয়ের কারণতো অর্থহীন।
প্রশ্নগুলো থেকেই যাবে। ৯ জানুয়ারি আইসিসির যে বৈঠকে ভারত এমন প্রস্তাব করেছে, সে বৈঠকে তারা দাবি করেছে আইসিসির ৮০ শতাংশ রাজস্ব আসে ভারতের কাছ থেকে। কিন্তু ক্রিকইনফো বলছে, এ দাবির সমর্থনে কোনো কাগজ দিতে পারে নি ভারত। শুক্রবার বিকলে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ক্রিকইনফোর চলমান ভোটে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ বিরোধিতা করছে ব্রিগ থ্রির এমন প্রস্তাবে। (http://phone.espncricinfo.com/ci/content/poll/feature/container.html)
২০১৫ বিশ্বকাপের পর আইসিসির সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির বিষয়টি হয়তো ঝুলে যেতে পারে ভারতের হুমকির মুখে। এমনকি বিকল্প আইসসির হুমকিও দিয়ে রেখেছে ক্রিকেটের এই মোড়ল দেশটি! এসব তাদের হীনমন্যতার প্রমাণ। সেখানেতো বাংলাদেশের সমর্থনের বিষয়টি থাকতে পারে না।
কিন্তু তবু ভয় বাংলাদেশের। পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রীও এ প্রস্তাবের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। আইসিসির পূর্ণ ১০ সদস্য দেশের মধ্যে ৭ দেশের ক্রিকেটারদের সংগঠন ফিকা এ বিষয়ে এর মধ্যেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একমাত্র নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট এখনই এ প্রস্তাবকে মন্দ বলতে রাজি হয়নি। তবু নীরব থাকার কৌশলে বিসিবি।
অবিশ্বাস্য সত্য, বিসিবির বৃহস্পতিবারের বোর্ড সভায় ২৩ পরিচালকের ২০ জনই সমর্থন দিয়েছেন বিগ থ্রির প্রস্তাবে! তিনজন টাকার কাছে বিকিয়ে যেতে রাজি হন নি। তার চেয়ে অবিশ্বাস্য এই ২০ পরিচালকের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তিন অধিনায়কও আছেন। আকরাম খান, যার হাত ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পথ চলা; নাইমুর রহমান দুর্জয়- যার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট; তারা কীভাবে সম্মত হলেন দেশের টেস্টের এমন কবর রচনায়? খালেদ মাহমুদ সুজন, যিনি সবসময় সরব বোর্ডের যে কোনো অন্যায়ের বিপক্ষে- তিনিও সম্মত হলেন এমন প্রস্তাবে!
বলছি না, অবিবেচকরাই এখন বোর্ডের দায়িত্বে। বরং শ্রীলঙ্কা সফর ও এশিয়া কাপ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা তারা সামলেছেন বেশ দক্ষতার সাথেই। বিসিবির আগে একটি বহুজাতিক কোম্পানির দায়িত্বে থাকা নাজমুল হাসান পাপন করপোরেট ডিলিংটা ভালোই বোঝার কথা। ক্রিকেট বোর্ডের স্বার্থ তারা ভালোই বুঝবেন। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের আবেগ তারা বুঝতে পারছেন কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বিশ্ব ক্রিকেটে দাপুটেদের কাছে বাংলাদেশ হয়েতা টিকে থাকতে পারবে না। তারপরও নৈতিকতার খেলায় এদেশের ক্রিকেটকে মাঠে নামার আগেই হারিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?
এর আগে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ঝামেলায়। লোটাস কামালের স্বার্থে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে আকরাম খান পদত্যাগ করার পর শেখ হাসিনা টেলিফোন করে তাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ক্রিকেটপ্রেমী এই রাষ্ট্রনেতার উচিত প্রয়োজনে এখন বৃহৎ পরিসরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার। প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপও করার।
এহসান জুয়েল, সিনিয়র রিপোর্টার, সময় টেলিভিশন
[email protected]
চল রুখে দেই ভারতসহ ওদের ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশ কি ‘না’ ভোট দিচ্ছে?
ক্রিকেট: আসুন সবাই পত্র পাঠাই
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৪