ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রাণহীন ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট’ ও কিছু প্রশ্ন

সৈকত মিত্র বড়ুয়া, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৪
প্রাণহীন ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট’ ও কিছু প্রশ্ন

ঢাকা: জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রাণহীন ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট ২০১৪’।  

অনেক আশা নিয়ে অনুষ্ঠান দেখা শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর আক্ষেপে ভারাক্রান্ত কথাগুলো শোনার পর আর আগ্রহ থাকেনি।



সাড়ে ৪ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশের শিল্পীদের পারফর্ম করার ব্যাপ্তি মাত্র ১ ঘণ্টা।

নানান অবহেলা আর গাফিলতির কারণে শেষ পর্যন্ত ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট’ নামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি কলঙ্কময় একটি দিন হিসেবেই রচিত হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।

স্টেডিয়ামে বলতে গেলে পুরো প্রাণহীন। হাজার পাঁচেক দর্শক, কিন্তু তাদের কেউই করতালি দিয়ে স্বাগতিক দেশের শিল্পীদের উৎসাহ প্রদান করেননি।  



দিনের আলো থাকতে আয়োজন শুরু হওয়ায় অনুষ্ঠান হারায় তার জমকালো ভাব। আলোকসজ্জাও ছিলো না বললেই চলে। আর স্বাগতিক শিল্পীদের জন্য বরাদ্দকৃত এত অল্প সময়ের মাঝে কতটুকুই বা বিনোদন দেয়া যায় সেটাও দেখার বিষয়।

তাইতো অভিমানী আইয়ুব বাচ্চু বলেই দিলেন মনে কথা। তার কথাগুলো যেন থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন সমগ্র জাতির গালে।

‘আপনারা যারা বাংলা গান শুনছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের হাত না চলুক, চোখ আর কান তো খোলা আছে? এতেই চলবে, হাততালি এখন খরচ করে লাভ নেই,এটা পরের জন্য রেখে দিন, চোখ কান খোলা আছে এটাই যথেষ্ট, আপনারা ধৈর্য ধরে বাংলা গান শুনেছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আর একটি গান গাইবো কেবল’।



অনুষ্ঠানটি ভিনদেশে হলে এ ধরনের ঘটনায় হয়তো মর্মাহত হওয়ার তেমন কিছু নেই। কিন্তু নিজের দেশে, নিজের দেশের মাটিতে স্বাগতিক শিল্পীদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তারা তা হয়তো কখনোই কল্পনাতেও চিন্তা করেননি।

স্বাগতিক শিল্পীদের মেইন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। তাদের আলাদা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে হয়েছে।
 
দু‘টি গ্রিন রুম অথচ স্বাগতিক শিল্পীদের ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি একটি গ্রিন রুমও। এমনকি স্টেজেও রিহার্সেল করতে দেয়া হয়নি তাদের।

মাইলস‌ বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড দল। তাদের জনপ্রিয়তা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ তাদেরকেও অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে দেয়া হয়নি।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে-

আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজক যদি ভারত হতো। সে অনুষ্ঠানে বিদেশ থেকে নামি দামী শিল্পী আনা হলেও মাইকে ঘোষণার সময় ঠিকই নিজেদের দেশের শিল্পীদের নাম ও পরিচয় আগে ঘোষণা করা হতো। ঘোষকরা স্বাগতিকদের সুনামটাই আগে করবেন। বিদেশীদেরও করবেন, কিন্তু স্বাগতিকদের চাইতে বেশি নয় এতটুকুও।

অথচ আমাদের বিদেশপ্রীতি এতই বেশি যে, বিদেশীদের সামনে নিজের দেশের গুণীদের তুচ্ছ করতেও দ্বিধা বোধ করি না।

যদি নিজেদের সম্মান করতে না জানি, তাহলে অন্য দেশের মানুষ আমাদের সম্মান করতে যাবে কোন দুঃখে।

অন্যান্য দেশের মত আমরাও তো পারি এ ধরনের আয়োজনে আমাদের দেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ভালো একটা সুযোগ হাতছাড়া করলাম আমরা।

দেশে হওয়া অনুষ্ঠানে আমরা নাচালাম বিদেশিদের। গতকাল তো ভারতের একজন টুইট করে বসলো ঠিক এভাবে-

‘বাংলাদেশে এমনি দুর্ভাগা যে একটা বিশ্বমানের অনুষ্ঠানও করার ক্ষমতা রাখে না। ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করাতে হয়। আমার তো সন্দেহ হয় কিভাবে তারা T20 বিশ্বকাপ পরিচালনা করবে’

শুনতে খারাপ লাগলেও কথা তো সত্যিই। এরপরও যদি লজ্জা বলে কিছু থেকে থাকে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের।

প্রত্যেক দেশেরই নিজেদের আলাদা সংস্কৃতি আছে। আমাদেরও নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে।

আমাদের সংস্কৃতিকে যদি আমরা বিশ্বের দুয়ারে উপস্থাপন না করতে পারি তাহলে বাংলাদেশকে বিশ্ব জানবে কি করে ?

আমাদের দেশ তাদের চাইতে কম কিসে। সবুজ প্রকৃতি আর নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আমাদের দেশে। সুন্দরবন
আমাদের অহংকার। সুযোগ বার বার আসে না। যখনি আসে তা কাজে লাগাতে হয়।

আর বাঙ্গালি এমনি জাতি, সুযোগ পেয়েও তা বিলিয়ে দেয় অন্য দেশের মানুষকে। আমাদের এমনি পোড়া কপাল যে, নিজেদের দেশে নিজেদেরই অপমানিত হতে হয়।

এর চাইতে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে !
(লেখক ব্লগার ও সাংবাদিক)

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।