ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ভারতের নির্বাচন ও মোদি প্রসঙ্গ ।। ইমতিয়াজ আহমেদ

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪
ভারতের নির্বাচন ও মোদি প্রসঙ্গ ।। ইমতিয়াজ আহমেদ নরেন্দ্র মোদি

মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি জ্বরে ভারত কাঁপছে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কী-না তা এখনও বলা মুশকিল।

নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসবে কী-না, প্রধানমন্ত্রী হবে কী-না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও নির্বাচনের সব ফলাফল আসেনি, এলে বোঝা যাবে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবে কী-না। নরেন্দ্র মোদি হওয়ার জন্য ভারতের নির্বাচনে ডানপন্থীদের যতটা সিট পেতে হবে, সেটা বলে যাচ্ছে না যে এত সহজ হবে। কারণ প্রতিটি প্রদেশেই বড় বড় পলিটিশিয়ান আছে, এবং তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। জয়ললিতা থেকে শুরু করে নীতীশ (নীতীশ কুমার) আছে। এদিকে আছে মমতা ব্যানার্জী, অখিলেশ— এরকম বিভিন্ন বড় বড় নেতা রয়ে গেছে। সেখানে গুজরাট থেকে নরেন্দ্র মোদি যদি বিজেপির মাধ্যমে হতেই হয়, তাহলে যে পরিমাণ সিট পাওয়ার কথা বিশেষ করে দু শ’র উপরে— সেটা পাবে কি-না, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে। হয়ত এমনও হতে পারে বিজেপি একক পার্টি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সিট পাবে, কিন্তু এমন একটা জায়গায় তার অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন হবে যে, তখন দেখা যাবে মোদীকে নিয়ে তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই হয়ত বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিকো অ্যালায়েন্সে আসবে, কিন্তু এমন শর্তও দিতে পারে যে মোদি ছাড়া অন্য নেতা যেন হয়। সেখানে সুষমা স্বরাজ থেকে বরুন, জেটলি— তারাও বড় বড় নেতা—তাদেরও একটা সম্ভবনা রয়ে গেছে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবে কিনা সেটা একটা বিষয়।

অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু যদি হয়েই যায়, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হতে পারে। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গেও এক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার দু শ‘র উপরে যদি সিট না পায়, তাহলে একটা নড়বড়ে সরকার গঠিত হবে। তখন দেখা যাবে যে নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের সময় যেসব কথা বলছেন, সেসব হয়ত আবার বলা শুরু করবেন। তিনি নিজে বা তার সরকার কী করবে, তার চেয়ে বরং দেখা যাবে যে, তার যে সাপোর্টার তারাই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে। সেই জায়গায় একটা আশঙ্কা রয়েই গেছে।

‘দ্য ইকোনমিক্সে’-এ এমন অনেক রিপোর্টে বেরিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল নৈতিকতার বিষয়টি একেবারেই মানছেন না। তারা ভোটার টানার জন্য টাকা দিচ্ছেন, এমনকি মদ ও অন্যান্য জিনিস বিতরণ করছেন। সে জায়গায় আম আদমি নামক নতুন পার্টি সেটাও ফ্যাক্ট হয়ে উঠতে পারে। তৃতীয় শক্তি উত্থানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আসলে এসবকিছুই নির্ভর করবে ২৭২ আসন পাবে কি-না, তার ওপর। ওদের ম্যাজিক ফিগার হচ্ছে ২৭২, এখন যদি ২৭২ সিট পায় তবে হয়ত সে ম্যানেজ করে ফেলতে পারবে। কিন্তু দু শ’র নিচে যদি হয় তাহলে প্রায় একশটা ম্যানেজ করতে হবে। সেই ১০০টা সংগ্রহের জন্য বড় অ্যালায়েন্সে যেতে হবে। সেই অ্যালায়েন্স পার্টনাররা যদি বড় কোনো শর্ত দেয়, তখন হয়তো নরেন্দ্র মোদিকে ছেড়েই বিজেপিকে সেই অ্যালায়েন্সে যেতে হতে পারে। এই জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে কোনো দল একক ভাবে ২০০ উপরে কোনো সিট পেয়েছে কি-না।

আমার মনে হয় তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি ক্ষমতায় চলে আসতে পারে। এই সম্ভবনা এখনও রয়েই গেছে। আম আদমির বিষয়টাও বলা কঠিন। কারণ তারা যদি ২৫টার মতো সিট পেয়ে যায়, তাহলে তারাও কিন্তু একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। সেই ক্ষেত্রে দেখা দরকার ১৬ মে-তে কে কত সিট পেল।


এর উপরেই নির্ভর করবে উপমহাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে। কারণ নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্বের যে এজেন্ডা, সেই এজেন্ডা যদি বাস্তবায়িত হয় তবে ভারতেরই সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে বাড়বে। ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলোর তো বাড়বেই। কিন্তু ভারতের ভেতরে যে সমস্যা রয়ে গেছে, সেখানে এখনও অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়ে গেছে, এবং বড় ধরনের সংখ্যালঘুই সম্প্রদায় রয়ে গেছে। তারা আতঙ্কিত হবে। এক্ষেত্রে ডান দিকে মোড় নেওয়ার জন্য ভারত কতটুটু প্রস্তুত, তাও দেখতে হবে। তবে ভারতে ডান দিকে মোড় নিলে আমিই মনে করি রাজনৈতিকভাবে ভারতের এই সময় কাম্য হবে না।

Imtiaz_01

 

 

 লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 



বাংলাদেশ সময় : ১১৩২ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।