ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

মার্সি কিলিং নামে যে ইঞ্জেকশন সেইটা আমাকে দিয়ে দিস

আতিক স্বাধীন, চট্টগ্রাম থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৪
মার্সি কিলিং নামে যে ইঞ্জেকশন সেইটা আমাকে দিয়ে দিস ছবি: সংগৃহীত

জানিস, খোকা! যেদিন তোর জন্ম হল সেদিন অনেক ঝড় ছিল...

তোর বাবা সাইকেল নিয়ে গিয়ে কাদামাটিতে আছাড় খেয়েও মিষ্টি কিনে এনেছিল। কি যে খুশি হয়েছিল লোকটা! তোর বড় চাচী তো কোনক্রমেই তোর বাবাকে আতুড় ঘরে ঢুকতে দেয় না, আর তোর বাবাও ছাড়বে না- অবশেষে তোর চাচীকে শাড়ি কিনে দেবে বলে আতুর ঘরে ঢুকেছিল তোকে দেখতে।



তুই তো তখন এতোটুকুন ছিলি।

ঘরে ঢুকেই তোর বাবার সেকি কান্না। আনন্দের কান্না। । সাথে আমিও কেঁদেছিলাম। অনেকক্ষণ। ।

অবশ্য, এর আগে পরে আর কোনদিন তোর বাবাকে কাঁদতে দেখিনিরে।

তোর বাবা কি বলতো, জানিস খোকা? বলতো আমরা যখন বুড়ো হবো; তোর এতোগুলো ছেলে-মেয়ে থাকবে, ছাদে আমাদের একটা ঘর থাকবে, সেখানে পিচ্চিগুলোকে সাথে নিয়ে আমরা হুটোপুটি খাবো।

আমি তখন খুব হাসতাম। বলতাম, তোর যেগুলো ছেলে হবে, সেগুলো আমার দলে আর যতগুলো মেয়ে হবে তোর বাবার দলে। তোর বাবা বলতো, তার টিম জিতবে, আমি বলতাম আমার টিম জিতবে। আমরা যে কতগুলো গেম বানিয়ে রেখেছিলাম তুই যদি জানতে পারতি! এখন তোর ছেলে মেয়ে, ছাদের একটা ঘর, সব আছে। শুধু তোর বাবা আর আমি নেই।

তোরা বলিস, ওই বাড়িতে নাকি আমাদের থাকার জায়গা নাই।

বৌমা আর তুই চাকুরি করিস, আমাদের ঠিকঠাকমতো দেখাশোনা করতে পারিস না, দাদাভাই দিদাভাই দুইজন পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমাদের সাথে সারাদিন থাকে, বাসাটায় জায়গা কম, কত যে অযুহাত দিলি তুই।

তুই কি মনে করেছিলি আমরা বুঝতে পারি নাই? সব বুঝেছিলাম। আমি তো অনেক কেঁদেছি সেদিন। তোর বাবাও খুব কষ্ট পেয়েছিল। তবুও কাউকে বুঝতে দেয়নি। আমাকে অনেক বুঝিয়েছিল।

খোকা জানিস, ওই বাড়িটা বানাতে তোর বাবা কতো কষ্ট করেছিল? আমি কতো স্বপ্ন দেখতাম বাড়িটা নিয়ে? তুই তো জানবি না। অনেক ছোট ছিলি তুই। ।

খোকা, শেষপর্যন্ত আমি সব মেনে নিয়েছিলাম। তোকে অনেক বার বলেছিলাম আমাদেরকে কনজুগাল ওল্ডহোমে রাখিস। তুই রাখতে পারিসনি। তোর নাকি খরচে কুলোবে না। তোর বাবাকে একটাতে রেখেছিস। আমাকে অন্যটাতে।

তোর বাবা বিয়ের পর আমাকে রেখে একদিনও অন্য কোথাও থাকতো না। একদিন কি হয়েছিল, জানিস?

তোর বাবা আমার সাথে রাগ করে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে নাকি থাকবে। তোর বয়স তখন আড়াই বছর। আমি তো জানি আমাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। ভাত রেঁধে বসেছিলাম। রাত ১২টার দিকে তোর বাবা এসে হাজির। একসঙ্গে ভাত খেয়ে অনেক গল্প করেছিলাম।

জানি না, তোর বাবা ওই ওল্ডহোমে কেমন আছে? খুব কষ্ট হয় লোকটার জন্যে।

খোকা শোন, প্রতিমাসে সময় নষ্ট করে আমার কাছে তোকে আর আসতে হবে না। আমাকে তোর বাবার কাছে রেখে আয়। নাহলে, ইউথানাশিয়া না মার্সি কিলিং নামে যে ইঞ্জেকশন দেয়, সেইটা আমাকে দিয়ে দিস প্লিজ। আর একা একা বাঁচতে ইচ্ছে করে নারে বাপধন। “

(আহারে, মা দিবসেও না জানি কত মা মরার আকুতি নিয়ে বেঁচে আছে ওল্ডহোম নামের ওই আস্তাকুঁড়ে। )

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।